বিএনপির ভোটের প্রস্তুতি তলে তলে, ৩৬ দলের যুগপৎ আন্দোলনে নামছে
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ২১ ডিসেম্বর ২০২২, ৮:১৮:৪২ অপরাহ্ন
অনুপম নিউজ ডেস্ক: জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। সারা দেশে ৩০০ আসনের জন্যে প্রার্থী বাছাই কাজও শুরু করেছে দলটি গোপনে। এবার আর একই আসনে একাধিক প্রার্থীকে দলীয় মনোনয়নের চিঠি দেবে না বিএনপি ২০১৮ সালের মতো।
এবার চূড়ান্ত প্রার্থীর হাতেই মনোনয়নপত্র দেওয়া হবে। সে লক্ষ্যে গোপনে কাজ চলছে। কিন্তু সবকিছুই নির্ভর করছে নির্দলীয় সরকারের দাবি আদায় হওয়ার ওপর। দাবী আদায় হলে নির্বাচনে যাবে। বিএনপির ঘোষণা অনুসারে কোনো দলীয় সরকারের অধীনে দলটি জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবে না।
ওদিকে ৩০ ডিসেম্বর ঢাকায় গণমিছিল করার মাধ্যমে যুগপৎ কর্মসূচি শুরু করবে বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো। বিএনপির বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো এসব তথ্য দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবি শুধু বিএনপিরই নয়। এটা এখন দেশবাসীর দাবি। সব গণতান্ত্রিক দল ও সংগঠনের দাবি। আর গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি সবসময়ই নির্বাচন তথা মানুষের ভোটের রাজনীতিতে বিশ্বাসী। সেই ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতেই দলটি জনগণকে নিয়ে আন্দোলন করছে। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার আজকে প্রতিষ্ঠিত হলে কালকেই নির্বাচনে যেতে প্রস্তুত বিএনপি।
জানা গেছে, সর্বোচ্চ ফোরামের সিদ্ধান্ত অনুসারে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি দুটোই একসঙ্গে চালাচ্ছে দলটি।
আন্দোলনের পাশাপাশি ভিতরে ভিতরে পুরোদমেই চলছে ভোটের প্রস্তুতি, যাতে যে কোনো মুহূর্তে বিনা চাপে ভোটে অংশ নিতে পারে। প্রাথমিক পর্যায়ে প্রতিটি সংসদীয় আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তালিকা ধরে দলীয় কর্মসূচি পালনসহ নানা ইস্যুতে নিজ নিজ এলাকায় থাকার মৌখিক নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, নির্বাচনী বড় ‘প্ল্যান’ নিয়েই এবার আটঘাট বেঁধে মাঠে নামছে বিএনপি। চূড়ান্ত করা হচ্ছে আগাম প্রস্তুতি।
সোমবার রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলের হলরুমে জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ২৭ দফা রূপরেখা ঘোষণা করেন। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও সেখানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে নির্দেশনা দেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ‘রাষ্ট্র রূপান্তরমূলক সংস্কার’ শিরোনামে ঘোষিত এই রূপরেখার মধ্যে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় ভারসাম্য আনা এবং টানা দুই মেয়াদের বেশি এসব পদে না থাকা, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার প্রচলন, প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের রাজনীতির বিপরীতে সব মত ও পথের সমন্বয়ে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বৈষম্যহীন ‘রেইনবো নেশন’ প্রতিষ্ঠা এবং জাতীয় সমঝোতা কমিশন গঠন, বিতর্কিত সংশোধনী বাতিলে সংবিধান সংস্কার কমিশন গঠন ও নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা ফিরিয়ে আনাসহ নানা ধরনের প্রতিশ্রুতি রয়েছে।
বিএনপির আহ্বানে ৩০ ডিসেম্বর গণমিছিলের মাধ্যমে শুরু হচ্ছে সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলন। সেদিন বিএনপি ছাড়াও আরও ৩৬টি রাজনৈতিক দল যুগপৎ আন্দোলনে রাজপথে থাকবে। তারা চারটি প্ল্যাটফরমে আলাদা মোর্চা গঠন করে বিএনপির সঙ্গে অভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে।
মোর্চাগুলোর মধ্যে রয়েছে- জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), নাগরিক ঐক্য, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, গণঅধিকার পরিষদ, ভাসানী অনুসারী পরিষদ ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন এই সাতটি সমমনা দল নিয়ে গঠিত ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’। অন্যদিকে ১২টি দলের সমন্বয়ে গঠিত হচ্ছে নতুন রাজনৈতিক জোট ‘জাতীয়তাবাদী ঐক্যজোট’। এ ছাড়া জোটের বাইরে থাকা কর্নেল (অব.) অলি আহমদের লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) এবং জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকেও ৩০ ডিসেম্বর থেকে যুগপৎভাবে গণমিছিল করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, আমরা বিএনপির দেওয়া কর্মসূচিগুলো অভিন্নভাবে আলাদা প্ল্যাটফরমে পালন করব। এগুলো দেশে নতুন কিছু নয়। আমরা ১২টি দল এ বিষয়ে ইতোমধ্যে ঐকমত্য পোষণ করেছি। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা বুলু বলেন, আমাদের প্রধান দাবি আগামীতে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন। এই দাবি আদায় হলে বিএনপি সবসময় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত।