উৎসবমুখর বুয়েন্স আয়ার্স, লাখ লাখ মানুষের উদযাপন কাকে বলে! (ভিডিও)
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ২০ ডিসেম্বর ২০২২, ১২:৪১:৫২ অপরাহ্ন
অনুপম স্পোর্টস ডেস্ক: আর্জেন্টিনা শব্দটি ইংরেজি ভাষার। আমরাও বলি আর্জেন্টিনা। তবে তাদের ভাষায়, মানে আর্জেন্টিনার স্পেনীয় ভাষায় শব্দটি আর্হেন্তিনা। দেশটি বিশ্বকাপ ফুটবল চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। বিজয় নিশ্চিত হওয়ার পর দেশটির রাজধানী বুয়েন্স আয়ার্সে লাখ লাখ মানুষের সেকি উদযাপন! পুরো রাজধানীর রাস্তায় গলিতে শুধু মানুষ আর মানুষ। বাঁধভাঙা উল্লাস-আনন্দ। এ উচ্ছ্বাস আকাশি-নীলদের। (নিচে ভিডিও) তারাই এখন ফুটবলের রাজা।
তিন যুগ পর বিশ্ব ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পুনরুদ্ধার করল আলবিসেলেস্তারা। ফিরে পেল হারানো সিংহাসন।
স্বপ্নের সোনার ট্রফি এখন শুধুই আর্জেন্টিনার। রোববার রাতে দেশটির রাজধানী বুয়েন্স আয়ার্সের রাস্তায় ঢল নামে লাখ লাখ মানুষের।
কাতার থেকে বুয়েন্স আয়ার্সের দূরত্ব ১৩ হাজার ৮০৯ কিলোমিটার। দূরত্বটা বাধা হয়নি আর্জেন্টাইনদের কাছে। লুসাইলে মেসিদের গগনবিদারী চিৎকার পৌঁছে যায় আকাশে-বাতাসে। মুহূর্তেই বুয়েন্স আয়ার্স হয়ে ওঠে উৎসবের নগরী। জনসমুদ্রে পরিণত হয় পথঘাট। সড়ক, বাসাবাড়ির ছাদ এমনকি ট্রাফিক লাইটের লোহার কাঠামোর ওপর উঠেও নেচে-গেয়ে আনন্দ উদযাপন করেছে জনতা। সবার কণ্ঠে ছিল-‘চ্যাম্পিয়ন, উই আর চ্যাম্পিয়ন’ ‘মেসি মেসি মেসি…।’
প্রায় দুই লাখ মানুষ বুয়েন্স আয়ার্সের ওবেলিস্ক স্তম্ভ এলাকায় জড়ো হয়েছিলেন। সবার গায়ে ছিল আকাশি-নীল জার্সি, মাথায় টুপি আর হাতে প্রিয় পতাকা। আতশবাজির ঝলকানি, গাড়ির হর্ন বাজিয়ে তাদের সে কী উচ্ছ্বাস। ৫০ বছর বয়সি হোটেল অভ্যর্থনাকর্মী জুলিও বেরদুন বলেন, আজ আমাদের দিন, আনন্দটাও আমাদের। জোয়েল সিয়ারালো নামের ২৩ বছর বয়সি এক তরুণ আনন্দে আত্মহারা হয়ে বারবার বলছিলেন, আমি বিশ্বাসই করতে পারছি না-আমরা বিশ্বকাপ জিতেছি।
আরেক আর্জেন্টাইন বলেন, আমি আমার আবেগ ধরে রাখতে পারছি না। মেসিদের এমন জয়ে আমি খুবই গর্বিত। একজন মেসি আমাদের দেশের এত বড় অর্জনের কাণ্ডারি। ৩৬ বছর পর এমন আনন্দ উদযাপনের মুহূর্ত পেয়ে আমরা খুবই খুশি। আরেকজন বলেন, এমন হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ শিরোপা জিতেছে, তা আমি ম্যাচ শেষের আগে পর্যন্ত কল্পনাও করতে পারিনি।
রাত নামার সঙ্গে সঙ্গে ওবেলিস্ক চত্বরে আলো জ্বালানো হয়। শুধু স্কয়ারের কেন্দ্রস্থলেই নয়, আশপাশের রাস্তার আনাচেকানাচে যত দূর চোখ যাচ্ছিল, শুধু মানুষ আর মানুষ। বুয়েন্স আয়ার্সে লা মোস্কা ব্যান্ডের পক্ষ থেকে একটি কনসার্টের আয়োজন করা হয়েছিল। এখানে আর্জেন্টিনা দলের অফিসিয়াল গানের সংস্করণটি পরিবেশন করা হয়।
সোলেদাদ পালাসিয়োস বলেন, ৩৫ বছরের জীবনে এ মুহূর্তের জন্য অপেক্ষা করছি। আমি বিশ্বাসই করতে পারছি না। বিশ্বকাপ উপভোগ করব বলে জীবনভর অপেক্ষা করছি।
মেসি ও ডি মারিয়ার জন্মশহর রোজারিওতে প্রতিদ্বন্দ্বী দল নেওয়েলস ওল্ড বয়েজ ও রোজারিও সেন্ট্রালের ভক্তরা বিভেদ ভুলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে খেলা দেখেছেন। ২১ বছর বয়সি তরুণ নাহুয়েল কান্তেরো বলেন, জাতীয় এ দল সবাইকে একত্র করেছে। আপনারা দেখেছেন সেন্ট্রাল এবং নেওয়েলসের সমর্থকেরা একে অপরকে জড়িয়ে ধরছেন, গান গাইছেন। এটি এখানকার সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য।
২৩ বছর বয়সি তরুণ মার্টিন রেইনা বলেন, এ দল সবকিছুর যোগ্যতা রাখে। অন্য যে কারও চেয়ে মেসির জন্য এটি অনেক আনন্দের। কারণ তিনি কখনো হাল ছেড়ে দেননি এবং প্রচণ্ড রকমে চেষ্টা চালিয়ে গেছেন।
২০ বছর বয়সী তরুণ মিকায়েলা লোর্দেস তার মাকে নিয়ে বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচ দেখেছেন। তিনি বলেন, মেসি ও ডি মারিয়া যদি রোজারিওতে বিজয় উদযাপন করতে আসেন, তবে আমরা পুলকিত বোধ করব।
বুয়েন্স আয়ার্সের সেন্তেনারিও পার্কে বিশাল পর্দায় খেলা দেখছিলেন বিয়ার বিক্রেতা ম্যানুয়েল ইরাজো। তিনি বলেন, আমরা আর্জেন্টাইনদের জন্মই হয়েছে দুর্ভোগ পোহানোর জন্য। এরপরও আমরা পথ চলছি। আজ আমরা বিশ্ব জয় করেছি।
জানা যায়, আর্জেন্টিনায় সাড়ে চার কোটি মানুষের বসবাস। এর মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষই দরিদ্র। ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি এবং মুদ্রার অবমূল্যায়নের কারণে সঞ্চয় ও মোট আয়ের ওপর প্রভাব পড়ছে। বছরের পর বছর ধরে আর্জেন্টিনা অর্থনৈতিক দুর্দশার মধ্যে আছে। দেশটির জনগণের অনেকে বিশ্বকাপ জয়ে স্বপ্ন দেখতে দেখতে এ দুর্দশা ভুলে থাকার চেষ্টা করে থাকে।
২৫ বছর বয়সি নির্মাণশ্রমিক আগুস্তিন আচেভেদো বলেন, আর্জেন্টিনা অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে সমস্যার মধ্যে আছে। খারাপ অবস্থায় রয়েছে। এই বিজয়ে এখান থেকে মনোযোগ সরানোর ক্ষেত্রটি ভালোভাবে অর্জিত হয়েছে।
আমরা বিশ্বচ্যাম্পিয়ন-আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট : জাতীয় ফুটবল দলকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট আলবার্তো ফার্নান্দেজ। রোববার বিশ্বকাপ জয়ের পর এক টুইটে তিনি বলেন, খেলোয়াড় এবং প্রযুক্তিগত দলকে ধন্যবাদ। তারা এমন উদাহরণ সৃষ্টি করেছে যে, আমাদের হাল ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়। আমাদের একটি দুর্দান্ত ভবিষ্যৎ আছে। তিনি আরও বলেন, সর্বদা একসঙ্গে, সর্বদা ঐক্যবদ্ধ। আমরা বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। অন্য কোনো কথা নেই।
মেসিদের মোদির শুভেচ্ছা : আর্জেন্টিনার জয়ের পর শুভেচ্ছাবার্তা দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও। মোদি এক টুইটে বলেন, এটা ফুটবলের সবচেয়ে রোমাঞ্চকর ম্যাচ হিসাবে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য আর্জেন্টিনাকে অভিনন্দন। গোটা টুর্নামেন্টে তারা দুর্দান্ত খেলেছে। আর্জেন্টিনা ও মেসির দুর্দান্ত জয়ে উচ্ছ্বসিত লাখ লাখ ভারতীয় ভক্ত। টুইটটি তিনি আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট আলবার্তো ফার্নান্দেজকে ট্যাগ করেন।




