লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ, বিজয় উদযাপন
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ ডিসেম্বর ২০২২, ১২:৩৭:৩৯ অপরাহ্ন
অনুপম প্রবাস ডেস্ক: বিজয়ের গান পরিবেশন, দেশাত্ববোধক কবিতা পাঠ ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করে বাংলাদেশের ৫২তম বিজয় দিবস উদযাপন করা হয়েছে লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবে।
১৭ ডিসেম্বর শনিবার সন্ধ্যায় ক্লাব কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই আয়োজনটি ছিল বেশ ভাবগাম্ভির্যপূর্ণ।
প্রেসক্লাব সভাপতি মোহাম্মদ এমদাদুল হক চৌধুরী এতে সভাপতিত্ব করেন। সঞ্চালনা করেন ক্লাবের জেনারেল সেক্রেটারি তাইসির মাহমুদ।
দেশের বিজয় উদযাপনের অনুষ্ঠানটি মহিমান্বিত হয়ে ওঠে জাতির সূর্যসন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা এ কে এম মাসুদের উপস্থিতিতে। তিনি তুলে ধরেন একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের হিরম্ময় স্মৃতিকথা। ক্লান্তিহীন মনোহর বর্ণনায় তুলে ধরেন সম্মুখ সমরে অংশ নেওয়ার গা শিউরে ওঠা কাহিনী। জীবনকে বাজি রেখে তাঁরা কীভাবে দেশমাতৃকার স্বাধীনতা অর্জনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন সে-সব গৌরব-গাঁথা তুলে ধরেন তিনি। যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেননি তাদের জন্য সরাসরি একজন মুক্তিযোদ্ধার কণ্ঠে যুদ্ধদিনের স্মৃতিকথা শোনার সুযোগটি ছিল নিঃসন্দেহে শ্রেষ্ঠতম সময়ের একটি। একে এম মাসুদ বলেন, মুক্তিযুদ্ধে যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন, যারা ময়দানে যুদ্ধ করেছেন সকলকে যথাযথভাবে সম্মান দেওয়া উচিত। কাউকে ছোট করে দেখা উচিত নয়।
যুদ্ধদিনের স্মৃতিচারণের আগে মুক্তিযোদ্ধা একে এম মাসুদকে ফুলের তোড়া দিয়ে বরণ করে নেন প্রেসক্লাবের নির্বাহী কমিটির নেতৃবৃন্দ।
অনুষ্ঠানটি শুরু হয় একাত্তরের বীর শহীদদের আত্মার শান্তি কামনা করে। সকলে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করে নিজ নিজ ধর্মানুযায়ী শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মার শান্তি কামনা করেন। এরপর সাংবাদিক মোস্তফা কামাল মিলনের নেতৃত্বে উপস্থিত অতিথিরা সববেত কণ্ঠে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন ।
মুক্তিযোদ্ধা একে এম মাসুদ-এর যুদ্ধদিনের স্মৃতিচারণ শেষ হলে শুরু হয় মুক্ত আলোচনা। এতে বক্তব্য রাখেন লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট রহমত আলী। তিনি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের উদ্দেশে নানা প্রতিকুলতার মধ্যে সহপাঠিদের সঙ্গে নৌকায় চড়ে ভারত যাওয়া এবং বয়স কম হওয়ার কারণে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে না পেরে ফিরে আসার গল্প শোনান।
সাংবাদিক-লেখক শহীদ সন্তান আকবর হোসেন ১৯৭১ সালের পয়লা সেপ্টেম্বর পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী পরিচালিত গণহত্যায় তাঁর পিতা জগন্নাথপুরের রানীগঞ্জ বাজার কমিটির চেয়ারম্যান আকলু মিয়াসহ শতাধিক গ্রামবাসী শহীদ হওয়ার মর্মান্তিক ঘটনা তুলে ধরেন।
এরপর কবিতা পর্বে দেশাত্মবোধক কবিতা পড়ে শোনান বিবিসি বাংলার সাবেক প্রযোজক উদয় শঙ্কর দাশ, কবি ও ছড়াকার দিলু নাসের, সাংবাদিক সারওয়ার-ই-আলম ও সাংবাদিক আমিমুল আহসান তানিম।
সর্বশেষ আকর্ষণ ছিল সাংবাদিক মোস্তফা কামাল মিলনের কণ্ঠে একক সঙ্গীত পরিবেশনা। তিনি পরিবেশন করেন কয়েকটি কালজয়ী দেশাত্মবোধক গান, যেগুলো মুক্তিযুদ্ধের সময় উদ্দীপ্ত করেছিল রণাঙ্গনের বীর যোদ্ধাদের। প্রতিটি গানের কথা যেন রক্তে আগুন ধরিয়ে দেয়। মোহাম্মদ মিলন যখন গলা ছেড়ে একের পর দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করছিলেন, তখন আর নীরবে বসে থাকতে পারলেন না মুক্তিযোদ্ধা এ কে এম মাসুদ। স্মৃতিতাড়িত হয়ে যেন ফিরে গেলেন একাত্তরে। উঠে এসে কণ্ঠ মেলালেন শিল্পীর সঙ্গে। অতিথিরাও মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে উপভোগ করছিলেন আর ছন্দে ছন্দে তালি বাজিয়ে চেষ্টা করলেন কণ্ঠ মেলাতে।
ক্লাবের পক্ষ থেকে সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বক্তব্য রাখেন লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের কোষাধ্যক্ষ সালেহ আহমেদ। আয়োজনটি সার্বিকভাবে সফল করতে সহযোগিতা করেন ক্লাবের এসিসটেন্ট ট্রেজারার মোহাম্মদ আব্দুল কাইয়ুম, ইভেন্ট এন্ড ফ্যাসিলিটজ সেক্রেটারি রেজাউল করিম মৃধা ও নির্বাহী সদস্য আহাদ চৌধুরী বাবু।
এ অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের সদস্য, সিনিয়র সাংবাদিক লেখক আব্দুল মুনিম জাহেদী ক্যারল, টিভিওয়ানের সিনিয়র রিপোর্টার জাকির হোসাইন কয়েস, লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাব সদস্য মোহাম্মদ রহিম, হাবিবুর রহমান সাইফ রিজভী ও সাংবাদিক হাসনাত চৌধুরী।
সাংস্কৃতিকপর্ব শেষে হোয়াইটচ্যাপেলের বিসমিল্লাহ রেস্টুরেন্টের সৌজন্যে ছিল সুস্বাদু খাবার পরিবেশনা।