পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ, বিজয়ের ৫১ বছর
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ ডিসেম্বর ২০২২, ১২:৩৯:৪১ অপরাহ্ন
অনুপম প্রতিবেদন: পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ আত্মপ্রকাশের আজ ৫১ বছর হল। আজ ১৬ ডিসেম্বর দিনটি হলো ৫২তম বিজয় দিবসের। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিকেল ৪টা ৩১ মিনিটে বাংলাদেশের বিজয়ের মধ্য দিয়ে রচিত হয়েছিল নতুন ইতিহাস।
আজকের তারিখে ১৯৭১ সালে বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে (তৎকালীন রেসকোর্স ময়দান) পরাজয় মেনে নিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে ৯৩ হাজার পাকিস্তানি সৈন্য আত্মসমর্পণ করেছিলেন। আত্মসমর্পণের দলিলে তখন সই করেন পাকিস্তানি বাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমাণ্ডের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট জেনারেল এ এ কে নিয়াজি। বাংলাদেশের পক্ষে সই করেন মিত্রবাহিনীর লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা।
৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের আজকের এই দিনে পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে মুক্ত বাতাসে নিঃশ্বাস নেয় এ দেশের লড়াকু মানুষ। দেশের প্রতিটি প্রান্তে শুরু হয় বিজয়ের মিছিল। আনন্দ আর উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ে পুরো বাঙালি জাতি।
আজ ১৬ ডিসেম্বর। বাঙালি জাতির গৌরবের দিন, মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর দিন। মুক্তিযুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছেন তাদেরকে আজ সারাদেশে বিশেষভাবে শ্রদ্ধা জানানো হচ্ছে। ১৬ কোটি বাঙালি সশ্রদ্ধ চিত্তে স্মরণ করছে দেশের বীর সন্তানদের। যাদের ৯ মাসের সংগ্রাম ও রক্তের বিনিময়ে পেয়েছি আমাদের লাল সবুজের পতাকা।
যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একাত্তরের ৭ই মার্চ ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ বলে জাতিকে লড়াইয়ের ডাক দিয়েছিলেন, সেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই পরাজয় মেনে নিয়ে মাথা নত করে ৯৩ হাজার পাকিস্তানি সৈন্য অস্ত্র সমর্পণ করেছিল।
পৃথিবীর প্রায় সব স্বাধীন দেশেরই আছে স্বাধীনতা দিবস। কিন্তু বিজয় দিবস নামে বিশেষ অর্থবোধক এবং বিপুল গৌরবমণ্ডিত দিন সব জাতির ইতিহাসে নেই। সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সামনে রেখে স্বাধীনতা ঘোষণার পর সফলভাবে সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বিজয় অর্জনও সব জাতিকে করতে হয়নি। বাঙালি জাতি সেই অনন্য সাধারণ কাজটি করেছে বলেই তাদের কাছে বিজয় দিবসের তাৎপর্য ও ব্যঞ্জনা অশেষ, অতুলনীয়।
মহান বিজয় দিবসে উপলক্ষে পৃথক বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
কর্মসূচি :জাতীয় পর্যায়ে এদিন ঢাকায় প্রত্যুষে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা হবে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এরপর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর নেতৃত্বে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি কূটনীতিকবৃন্দ, মুক্তিযুদ্ধে মিত্রবাহিনীর সদস্য হিসেবে অংশগ্রহণকারী আমন্ত্রিত ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্যগণ এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন।
এছাড়া সকাল সাড়ে ১০টায় তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরে জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে সম্মিলিত বাহিনীর বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হবে। রাষ্ট্রপতি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করবেন। প্রধানমন্ত্রীও এ কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে এদিন সংবাদপত্রসমূহ বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করছে। এ উপলক্ষে ইলেকট্রনিক মিডিয়াগুলো মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালা প্রচার করবে।
মুক্তিযুদ্ধে নিহত শহীদদের স্মরণে নির্মিত জাতীয় স্মৃতিসৌধে ভোর থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। দেশের প্রতিটি জেলা উপজেলা ও ইউনিয়নে পালিত হবে মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মরণে বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি।
আজ সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনাগুলো আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হবে।