ইসলামী ব্যাংক: ‘ভয়ংকর নভেম্বর’, রিট করার পরামর্শ হাইকোর্টের
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ নভেম্বর ২০২২, ১:৪৬:২৭ অপরাহ্ন
অনুপম নিউজ ডেস্ক: হাজার হাজার কোটি টাকা ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড (আইবিবিএল) থেকে তুলে নেয়া ও এস আলম গ্রুপের ৩০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার ঘটনায় রিট করার পরামর্শ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
বুধবার (৩০ নভেম্বর) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ পরামর্শ দেন।
আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির আদালতে বিষয়টি নজরে আনেন। তিনি এ সময় আদালতের কাছে আদেশ প্রার্থনা করেন। তখন হাইকোর্ট বলেন, প্রতিবেদনগুলো সংযুক্ত করে রিট আবেদন আকারে কোর্টে আসুন। এসময় আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক ও দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান উপস্থিত ছিলেন।
পরে আইনজীবী শিশির মনির বলেন, আমরা আজই আদালতে রিট করব।
ইসলামী ব্যাংকে ‘ভয়ংকর নভেম্বর’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় গত ২৪ নভেম্বর ‘দৈনিক প্রথম আলো’তে। প্রতিবেদনের প্রথমাংশে বলা হয়, ব্যাংকের নথিপত্রে নাবিল গ্রেইন ক্রপস লিমিটেডের অফিসের ঠিকানা বনানীর বি ব্লকের ২৩ নম্বর সড়কের ৯ নম্বর বাড়ি। সেখানে গিয়ে দেখা গেল, এটি একটি পূর্ণাঙ্গ আবাসিক ভবন। ঋণ পাওয়া মার্টস বিজনেস লিমিটেডের ঠিকানা বনানীর ডি ব্লকের ১৭ নম্বর সড়কের ১৩ নম্বর বাড়ি। সেখানে গিয়ে মিলল রাজশাহীর নাবিল গ্রুপের অফিস। তবে মার্টস বিজনেস লাইন নামে তাদের কোনো প্রতিষ্ঠান নেই। এভাবেই ভুয়া ঠিকানা ও কাগুজে দুই কোম্পানি খুলে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড (আইবিবিএল) থেকে দুই হাজার কোটি টাকা তুলে নিয়েছে একটি অসাধু চক্র।
সব মিলিয়ে বিভিন্ন উপায়ে ইসলামী ব্যাংক থেকে প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা তুলে নেয়া হয়েছে। আটটি প্রতিষ্ঠানের নামে চলতি বছরেই এ অর্থ নেয়া হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থ তুলে নেয়া হয় চলতি মাসের ১ থেকে ১৭ নভেম্বর সময়ে। যার পরিমাণ ২ হাজার ৪৬০ কোটি টাকা। এ জন্যই ব্যাংকটির কর্মকর্তারা চলতি মাসকে ‘ভয়ংকর নভেম্বর’ বলে অভিহিত করছেন।
একইভাবে বেসরকারি খাতের সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক (এসআইবিএল) ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক থেকেও ২ হাজার ৩২০ কোটি টাকা তুলে নিয়েছে কোম্পানিগুলো। ফলে এ তিন ব্যাংকের কাছে প্রতিষ্ঠানগুলোর সুদসহ দেনা বেড়ে হয়েছে সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা। এমন সময়ে এসব অর্থ তুলে নেয়া হয়, যখন ব্যাংক খাতে ডলার-সংকটের পর টাকার সংকট বড় আলোচনার বিষয়।
ওদিকে মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) নিউ এইজ পত্রিকায় এস আলম গ্রুপ একাই ইসলামী ব্যাংক থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে- এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এই প্রতিবেদনটিও আদালতের নজরে আনা হয়।
উল্লেখ্য, ইসলামী ব্যাংকসহ কয়েকটি ব্যাংক নিয়ে ‘যেসব কথাবার্তা’ উঠছে, সে বিষয়ে সঠিক তথ্য জানাতে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ও অর্থ বিভাগকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
গত রোববার অনুষ্ঠিত সভার পর, সভার সিদ্ধান্ত জানাতে সচিবালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব এ কথা জানান।
ইসলামী ব্যাংক প্রসঙ্গে ওই প্রশ্নের জবাবে খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ওভারঅল, আরও কয়েকটা ব্যাংকের কথা, এটি শোনার পর আমি ইন্টারনেটে গিয়ে দেখলাম, কয়েকটা ব্যাংকের ব্যাপারে বাইরে থেকে ইউটিউবে বিভিন্ন রকম বক্তৃতা দিচ্ছেন। তবুও এটিকে অবহেলা করা হয়নি। বলা হয়েছে, এগুলো দেখে চিত্রটি আমাদের জানাও।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এটি নিয়ে বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ও অর্থ বিভাগকে নির্দেশনা দিয়ে বলা হয়েছে, চারদিকে এত কথাবার্তা উঠছে, আসল চিত্র কী, সেটি শিগগিরই দেখে অবহিত করবেন।
প্রকাশ, এস আলম গ্রুপ ২০১৭ সালে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের নিয়ন্ত্রণ নেয় যখন সরকার বাংলাদেশ জামায়াত-ই-ইসলামীর অনুগত লোকদের ব্যাংক থেকে বের করে দেয়। এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান ও এমডি মোহাম্মদ সাইফুল আলম সিঙ্গাপুরে থাকেন।
গ্রুপটি দেশের আরও কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংকের দখল নিয়েছে।
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক এবং আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ করছে এ গ্রুপ।