মালয়েশিয়া: দুর্ঘটনায় আহত প্রবাসী মাহবুব আলম আর নেই
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ নভেম্বর ২০২২, ৬:২০:৫৭ অপরাহ্ন
আহমাদুল কবির, মালয়েশিয়া: মালয়েশিয়ায় দুর্ঘটনায় আহত প্রবাসী মাহবুব আলম (৪৮) আর নেই। গাজীপুর ভাড়া বাড়িতে বাংলাদেশ সময় আজ সোমবার সকাল পৌণে ১১ টায় ইন্তেকাল করেছেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
মালয়েশিয়ায় দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত মালয়েশিয়া প্রবাসী মাহবুব আলম ৫ মাস ধরে মালয়েশিয়ার একটি হাসপাতালে চিকিৎসারত অবস্থায় দীর্ঘ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ১৮ নভেম্বর হাইকমিশনের সহায়তায় বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে দেশে পাঠানো হয়। বাংলাদেশে ইবনে সিনা হাসপাতালে ২ দিন চিকিৎসা নেয়ার পর বাসায় নিয়ে যাওয়া হয় মাহবুবকে।
গত ২২ জুন মালয়েশিয়ার সেলাঙ্গর রাজ্যের শাহ আলম শহরের পানির পাইপ সরাতে গিয়ে দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন প্রবাসী মাহবুব। সেই থেকে স্থানীয় শাহ আলম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। দুর্ঘটনায় প্রচন্ড আঘাতে তার মুখের হাড় ভেঙে গেছে, ডান চোখ নষ্ট হয়ে গেছে ও শিরা ছিঁড়ে মাথার ব্রেইনের গুরুতর ক্ষতি হয়।
বিদেশে ব্যয়বহুল চিকিৎসা এগিয়ে নেওয়া তার পরিবারের সাধ্যের বাইরে ছিল। সব মিলিয়ে তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে চিকিৎসার ব্যবস্থা করাই ছিল বেশি প্রয়োজন। কিন্তু অর্থের অভাবে আর উন্নত চিকিৎসা করা হল না মাহবুবের।
১৮ নভেম্বর পর্যন্ত হাসপাতালে মাহবুবের বিল হয়েছিল ৭৭ হাজার রিঙ্গিত, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৮ লাখ ৯ হাজার ৫০০ টাকা। এই টাকা পরিশোধ করতে পরিবারের পক্ষে মুশকিল হয়ে পড়েছিল।
একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষটিকে বাঁচাতে, দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকার-বিত্তবানদের কাছে আকুতি জানান মাহবুবের পরিবার।
মাহবুবের স্ত্রী সিমা আক্তারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড ৯ হাজার রিঙ্গিত (বাংলাদেশি ২ লাখ টাকা) সহায়তা করেন, যা প্রয়োজনের তুলনায় ছিল খুবই অপ্রতুল।
অন্যদিকে মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহায়তা দিলেও হাসপাতালের বিপুল পরিমাণ বিল মেটাতে এগিয়ে আসেন মালয়েশিয়া বাংলাদেশ ফোরাম অ্যাসোসিয়েশন, জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন মালয়েশিয়া, প্রবাসী অনেকে। হাসপাতালের ৭৭ হাজার রিঙ্গিতের মধ্যে সকলের সহযোগিতায় ৪৭ হাজার রিঙ্গিত বিল পরিশোধ করা হয়।
এ ছাড়া আহত মাহবুবকে দেশে ফিরিয়ে নিতে বিমান ভাড়া ডাক্তার নার্স ষ্টেচারসহ আরোও ২৭ হাজার রিঙ্গিত খরচ হয়েছে। যা হাইকমিশন ও প্রবাসীদের সহযোগিতায় সম্ভব হয়েছে।
ভাগ্য পরিবর্তনের আশায়, ২০১৬ সালে সরকারি ভিসায় পাম অয়েল বাগানে কাজ নিয়ে স্বপ্নের দেশ মালয়েশিয়ায় যান মাহবুব। মাহবুবের ৩ মেয়ে ও স্ত্রী থাকেন গাজীপুর বোর্ডবাজারে একটি ভাড়া বাসায়। পুরো সংসার নির্ভরশীল ছিল মাহবুবের ওপর।
অসহায় এ রেমিট্যান্সযোদ্ধার স্বপ্ন ছিল ভালো কিছু করবে। তিন মেয়েকে ভালো কলেজে পড়ালেখা করাবে। কিন্তু সব স্বপ্ন তার নিমিষেই উবে গেল। তার আর ভাগ্যের পরিবর্তন হলো না। অবশেষে অবশেষে জীবনযুদ্ধে হেরে গেলেন রেমিটেন্সযোদ্ধা মাহবুব।
মালয়েশিয়ায় থাকা মাহবুবের ভাতিজা আনোয়ার হোসেন জানান, মাহবুব সাব এজেন্ট নেওয়া এক ইন্দোনেশীয়ের অধীনে কাজ করতেন।
রাওয়াং-এ থাকা ভাতিজা আনোয়ার নিজেও একজন শ্রমিক। কাজের ফাঁকে চাচাকে দেখতে যান। নিজের সামান্য আয় থেকে ইতোমধ্যে বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫ লাখ টাকা ব্যয় করেছেন।
আনোয়ার আরও জানান, তার চাচার পরিবার খুবই অসহায়। দেশে নিয়ে আসলাম চাচাকে। দেশেও চাচাকে চিকিৎসা করাতে পারলামনা। আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন।
আজ মাহবুবের মরদেহ বরিশাল মেহেন্দীগন্জের চানপুরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সেখানেই তাকে দাফন করা হবে বলে জানিয়েছেন ভাতিজা আনোয়ার ।