যুবলীগ এগিয়ে যাক মানবতার কল্যাণে, সুবর্ণজয়ন্তীতে এই হোক দীপ্ত শপথ
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ১০ নভেম্বর ২০২২, ৯:৩৩:৪৫ অপরাহ্ন
মকিস মনসুর: স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম যুব সংগঠন আওয়ামী যুবলীগ ১৯৭২ সালের ১১ নভেম্বর বাংলাদেশের রাজধানীর ঢাকাস্থ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক যুব কনভেনশনের মাধ্যমে যুব আন্দোলনের পথিকৃৎ শহীদ শেখ ফজলুল হক মনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র গণতন্ত্র, শোষণমুক্ত সমাজ অর্থাৎ সামাজিক ন্যায়বিচার, জাতীয়তাবাদ, ধর্ম নিরপেক্ষতা অর্থাৎ সকল ধর্মের মানুষের স্ব স্ব ধর্ম স্বাধীনভাবে পালনের অধিকার তথা জাতীয় চার মুলনীতিকে সামনে রেখে বেকারত্ব দূরীকরণ, দারিদ্র দূরীকরণ, দারিদ্র বিমোচন, শিক্ষা সম্প্রসারণ, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপদান, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ ও আত্মনির্ভরশীল অর্থনীতি গড়ে তোলা, গণতান্ত্রিক ও শোষণমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে যুব সমাজকে সম্পৃক্ত করা এবং যুব সমাজের ন্যায্য অধিকারসমুহ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মূলত ঐতিহ্যবাহী যুবলীগের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল।
যুবলীগের রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। প্রতিষ্ঠার পর থেকে দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রাম ও হাজারো নেতাকর্মীর আত্মত্যাগের মাধ্যমে আজ বিশ্বের সর্ববৃহৎ যুব সংগঠন হিসাবে পরিণত হয়েছে ঐতিহ্যবাহী যুবলীগ।
যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফকির আব্দুর রাজ্জাকের ‘শেখ ফজলুল হক মনি: এক অনন্য রাজনীতির প্রতিচ্ছবি’ বইটিসহ বিভিন্ন ইতিহাস গ্রন্থ থেকে যুবলীগ প্রতিষ্ঠার পটভূমি সম্পর্কে জানা যায়। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু একদিন শেখ মণিকে বলেন, ছাত্রজীবন পেরিয়েছে, অথচ যৌবন পেরোয়নি– এরকম বহু যুবক এখন আদর্শহীন, লক্ষ্যহীনভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এরা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছে। এখন অলস ও অকর্মণ্য জীবনে লক্ষ্যহীন হয়ে তারা ঘুরে বেড়াচ্ছে। নানা উচ্ছৃঙ্খল কাজে জড়িত হচ্ছে। এদের মধ্যে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনে দেশ ও জাতি গঠনের কাজে লাগাতে পারলে একটি যুবশক্তি তৈরি হবে, যে শক্তির ভেতর থেকে দেশের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব বেরিয়ে আসবে। দেশ ও সমাজের ভবিষ্যতের রূপকার হবে এই যুবসমাজ।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের আদলে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সারাদেশে যুবশক্তিকে কাজে লাগিয়ে দেশ গঠনে আত্মনিয়োগ করে। সরকারের বিভিন্ন কর্মকান্ডকে রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে তৎকালীন যুবলীগ সারাদেশে তাদের কর্মযজ্ঞ শুরু করে। এদেশের যুব আন্দোলনের পথিকৃৎ সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা শেখ ফজলুল হক মনি ছিলেন ষাটের দশকের সারাজাগানো ছাত্রনেতা ও একজন মেধাবী দূরদর্শী মানুষ। তিনি একাধারে মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, মুক্তিযুদ্ধের সময় গেরিলাবাহিনী মুজিববাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান, লেখক, সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠক ছিলেন। যার ফলে যুবলীগ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে খুব অল্পদিনের মধ্যেই যুবলীগ সময়োপযোগী সংগঠন হিসেবে প্রমাণিত হয়।
শেখ ফজলুল হক মনির দূরদর্শী রাজনৈতিক প্রজ্ঞার কারণে যুবলীগ অল্পদিনে আওয়ামী লীগের প্রাণশক্তি হয়ে ওঠে।
বাংলাদেশে ছাত্ররাজনীতি শেষ করে বৃটেনে আসার পর যুক্তরাজ্য যুবলীগের মাধ্যমে আমার যুব রাজনীতির সূচনা ঘটে। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়ার আগে যুবলীগের সাথে আমারও ছিল দীর্ঘ এক যুগের প্রেম, প্রাণের বন্ধন, এবং আত্মার আত্মাীয়তা,আমার ভালোবাসার ঐতিহ্যবাহী যুবলীগের ৫০ বছর পূর্তি তথা সুবর্ণজয়ন্তী এবছর বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা ও আনন্দঘন পরিবেশ পালন করা হচ্ছে বিশ্বময়। এটা আমার জন্য, এবং প্রাক্তন ও বর্তমান যুবলীগারদের জন্য গৌরবের ও আনন্দের সংবাদ।
এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, ১৯৮৪ থেকে ১৯৯৪ সাল টানা দশ বছর, ছাত্রলীগের স্কুল কমিটি ও একাটানা ইউনিয়ন আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি, জাতীয় ছাত্রলীগের কলেজ কমিটির সভাপতি, মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও জাতীয় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদক এর দায়িত্ব পালন করার মাধ্যমে আমার জন্মস্থান মৌলভীবাজার জেলা থেকে শুরু করে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ছাত্র রাজনীতিতে স্বৈরশাসকদের বিরুদ্ধে রাজপথে সর্বদা সক্রিয় ছিলাম। মধুর কেন্টিনের প্রাণবন্ত আড্ডা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকার রাজপথ সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলায় ও কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, ক্যাম্পাসে মিছিল মিটিং, আন্দোলন সংগ্রামে সর্বদা থাকতাম ব্যস্ত, স্বৈরাচার এরশাদ-খালেদার স্বৈরাচারী শাসনামলেও অকুতভয়ে সংগ্রাম করা সহ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার ও যুদ্ধাপরাধী রাজাকারদের ফাঁসির দাবিতে শ্লোগানে শ্লোগানে রাজপথ মূখরিত করে তোলতাম।
আজ ফিরে দেখা অতীতের দীর্ঘ এক যুগের অনেক কিছুই ভেসে উঠে স্মৃতির মণিকোঠায়, ১৯৯০ এর সফল গণআন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরশাসক এরশাদের পতন ঘটিয়ে ১৯৯৩ সালে বৃটেনে আসার কারণে বাংলাদেশে ছাত্ররাজনীতি থেকে বিদায় নিলাম। বৃটেনে আসার পর ১৯৯৪ সালে ৪ জানুয়ারি প্রথমবারের মতো বৃটেনের ওয়েলসের রাজধানী কাডিফ শহরে ঐতিহ্যবাহী ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবাষিকী উদযাপন সহ ইউকে ওয়েলস ছাত্রলীগের কমিটি গঠন করার মাধ্যমে বৃটেনের ওয়েলসের মাটিতে প্রথমেই ছাত্রলীগকে সংগঠিত করেছিলাম। আমাকে সভাপতি ও ইমরান শিকদারকে সাধারণ সম্পাদক করে ওয়েলস ছাত্রলীগের কমিটি গঠন করা হয়।
ছাত্র রাজনীতি থেকে বিদায় নেওয়ার পর ১৯৯৬ সাল থেকে যুক্তরাজ্য যুবলীগের সাবেক সভাপতি হরমুজ আলীর নেতৃত্বে বৃটেনের মাটিতে যুক্তরাজ্য যুবলীগের সদস্য হিসেবে যুবলীগের রাজনীতিতে পুরাপুরি নিজেকে সম্পৃক্ত করি। ১৯৯৭ সালে ওয়েলসের মাটিতে যুবলীগের প্রথম সফল সম্মেলনের মাধ্যমে আমার ভালোবাসা ও প্রাণের এই যুক্তরাজ্য আওয়ামী যুবলীগের ওয়েলসের সভাপতির দায়িত্ব পালন ও পরবর্তীতে ২০০৩ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে এবং কেন্দ্রীয় যুবলীগের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, ও সাধারণ সম্পাদক মিজা আজম এমপি সহ অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের মাধ্যমে যুক্তরাজ্য যুবলীগের সফল সম্মেলনে আমাকে যুক্তরাজ্য যুবলীগের সহ সভাপতির দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। উক্ত সফল সম্মেলনে যুক্তরাজ্য যুবলীগের নির্বাচিত সভাপতি যুবনেতা আনোয়ার উজ্জামান চৌধুরী ও নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক যুবনেতা তারিফ আহমদের নেতৃত্বে যুবলীগকে শক্তিশালী করতে আমরা শুধু কার্ডিফে নয় নিউপোর্ট, ব্রিজেন্ড, বৃস্টল রিডিং ও সোয়ানসীতে কমিটি গঠন করা সহ বৃটেনের বিভিন্ন শহরে দিনরাত করেছি সভা সমাবেশ ও যুবলীগের প্রচার প্রচারণা দীর্ঘ দিন তথা প্রায় এক যুগ এই যুবলীগের জন্য প্রবাসের শত ব্যস্ততার মাঝে ও আমরা সংগঠনকে দিয়েছি সময়, দলের জন্য খরছ করেছি প্রচুর অর্থ, করেছি দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম, এই সংগঠনকে শক্তিশালী করতে বিগত এক যুগ সমগ্র বৃটেনের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে ঘুরে বেড়িয়েছি প্রতিনিয়ত, কত শত শত ঘন্টা, হাজার হাজার মাইল গাড়ি নিয়ে ঘুরেছি সেই হিসাব কোনো দিন করিনি।
যুবলীগের রাজনীতিতে ওয়েলস আওয়ামী যুবলীগের ২০০৬ সালে ২য় ঐতিহাসিক সম্মেলন উপলক্ষে আমার সার্বিক তত্ত্বাবধানে ওয়েলস এর প্রথম স্মারকগ্রন্থ “হৃদয়ে বঙ্গবন্ধু” নামে একটি ঐতিহাসিক স্মারক গ্রন্থ প্রকাশনা করেছিলাম, এই ম্যাগাজিন প্রকাশ করতে আমি তিন মাস বাংলাদেশে অবস্থান করে দিন রাত কাজ করতে হয়েছে এবং এই প্রকাশনার প্রিন্ট করতে বাংলাদেশের প্রায় ৫ লক্ষ টাকা খরছ হয়েছিল। এই স্মারক গ্রন্থটিতে লিপিবদ্ধ হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন পরিচয়, বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনের বিভিন্ন সময়ের মুল্যবান ছবি, ৭ই মার্চ ১৯৭১ সালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রদত্ত ঐতিহাসিক ভাষণ, ঐতিহাসিক ছয় দফা, স্বাধীনতার ঘোষণা, মুজিব নগর সরকার, বাংলাদেশ ও ভারতের মিত্র বাহিনীর নিকট পাকিস্তানী বাহিনীর আত্মসমর্পণ, যুবলীগ প্রতিষ্ঠার পটভৃমি, সহ ১৫ই আগষ্ট ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের নিহত হওয়ার বিস্তারিত বিবরণ।
“হৃদয়ে বঙ্গবন্ধু” স্মারকগ্রন্থটি নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা, সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, কেন্দ্রীয় সাবেক সেক্রেটারি সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সাবেক সাবেক রাষ্ট্রপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ ও বর্তমান রাষ্ট্রপতি এডভোকেট আব্দুল হামিদ ও সাবেক বিভিন্ন মন্ত্রী এমপি ও দলের শীর্ষ নেতারা ও দেশে বিদেশে বিশিষ্টজনেরা প্রবাস থেকে এত সুন্দর তথ্যবহুল ও ম্যাগাজিন সম্পাদনা করার জন্য ওয়েলস যুবলীগের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। এটাই যুবলীগের রাজনীতিতে ওয়েলস যুবলীগের একটি বিরাট সফলতা বলে মনে প্রাণে বিশ্বাস করি।
বিশেষ করে সেনা সমর্থিত ১/১১’র সময় রাজনৈতিক নেতাদের গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রকে অবরুদ্ধ করার চেষ্টা করে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার। ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই ভোরে ধানমন্ডির বাসভবন থেকে গণতন্ত্রের মানসকন্যা, মমতাময়ী জননী, দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করা হয়। এসময় বাংলাদেশে রাজনৈতিক কর্মকান্ড – নিষিদ্ধ থাকলে ও বিভিন্নভাবে শেখ হাসিনার মুক্তির দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলে আওয়ামীলীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলো। রাজনৈতিক সহ বিভিন্ন দিক থেকেও শেখ হাসিনার মুক্তির দাবি ওঠে। বিশেষ করে প্রবাসের মাটিতে আওয়ামীলীগ.ষুবলীগ ছাত্রলীগের আন্দোলনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক জনমত গঠন করা হয়েছে।
জননেত্রী শেখ হাসিনার মুক্তির দাবিতে যুক্তরাজ্য যুবলীগ এর ব্যানারে আমরা বৃটেনের মাটিতে দীর্ঘ প্রায় ১১ মাস দিনরাত সংগ্রাম করেছি। কার্ডিফ থেকে গাড়ি বহরে একাধিকবার লন্ডনের হাইডপার্ক, পার্লামেন্ট ভবন, হাউস অব কমন্স, ট্রাফালগার স্কয়ার’, আলতাব আলী পার্ক, সহ ব্রিকলেনের বিভিন্ন মিছিলে সভা সমাবেশে লোকজন নিয়ে গিয়েছি। প্রতিটি সভা সমাবেশ বক্তব্য দান সহ শেখ হাসিনার মুক্তির দাবিতে শ্লোগানে শ্লোগানে মূখরিত করে তুলেছি। এদিকে শেখ হাসিনা মুক্তি আন্দোলন কমিটি ইউকে গঠনের মাধ্যমে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী, বিভিন্ন মন্ত্রী এমপি, ইউরোপীয়ান পালামেন্ট সদস্য ও ওয়েলস এসেম্বলি মেম্বারদের সাথে সাক্ষাৎ করা সহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের সাথে এজ এ কনভেনার হিসাবে একাধিক চিঠির প্রদান সহ লবিং করেছি। এটা চিরন্তন সত্য বিশ্বময় তথা প্রবাসের মাটিতে প্রবাসী বাঙালিদেরকে নিয়ে আওয়ামীলীগ যুবলীগ ছাত্রলীগের আন্দোলনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক জনমত গঠন করা ছাড়া ও ক্রমাগত চাপ, আপোষহীন মনোভাব ও অনড় দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে সংসদ ভবন চত্বরে স্থাপিত বিশেষ কারাগার থেকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। এই আন্দোলনে দেশে বিদেশে যুবলীগের অগ্রণী ভৃমিকা ছিল। যাহা সর্বমহলে স্বীকৃত।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে এদেশের যুব আন্দোলনের পথিকৃৎ শহীদ শেখ ফজলুল হক মনি যে যুবলীগ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আজকের লেখার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে জাতীয় কংগ্রেসের মাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে যারা যুবলীগের উজ্জ্বল নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাদের নাম তুলে ধরতে চাই, ১৯৭৪ সালে অনুষ্ঠিত হয় প্রথম জাতীয় কংগ্রেস। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উপস্থিতিতে শেখ ফজলুল হক মনি চেয়ারম্যান ও এডভোকেট সৈয়দ আহমদ সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৭৮ সালে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় কংগ্রেসে আমির হোসেন আমু চেয়ারম্যান ও ফকির আব্দুর রাজ্জাক সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৮৬ সালে তৃতীয় কংগ্রেসে মোস্তফা মহসীন মন্টু চেয়ারম্যান ও ফুলু সরকার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে অনুষ্ঠিত চতুর্থ কংগ্রেসে শেখ ফজলুল করিম সেলিম চেয়ারম্যান ও কাজী ইকবাল হোসেন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০০৩ সালে পঞ্চম কংগ্রেসে এডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক চেয়ারম্যান ও মীর্জা আজম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০১২ সালে অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ জাতীয় কংগ্রেসে মোহাম্মদ ওমর ফারুক চৌধুরী চেয়ারম্যান ও মোঃ হারুনুর রশীদ সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
২০১৯ সালের ২৩ নভেম্বর সপ্তম কংগ্রেসে আওয়ামী যুবলীগের ইতিহাস-ঐতিহ্যকে সমুন্নত রাখতে শেখ মনির জৈষ্ঠ্যপুত্র শেখ ফজলে শামস পরশকে চেয়ারম্যান এবং মাইনুল হোসেন খান নিখিলকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়।
যুবলীগ প্রতিষ্ঠার পর থেকে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন সরকারের বিভিন্ন গণমুখী কার্যক্রম সামাজিকভাবে প্রচারের কাজে আত্মনিয়োগ করে যুবলীগ। বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে রাজপথে নেমে আন্দোলন করেছে যুবলীগ। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর খন্দকার মোশতাক, জেনারেল জিয়া ও জেনারেল এরশাদের সময় আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করার গভীর ষড়যন্ত্র শুরু হয়।
স্বাধীনতার পর যুবলীগ জিয়া-এরশাদ-খালেদার স্বৈরাচারী শাসনামলেও অকুতোভয়ে সংগ্রাম করেছেন, নির্যাতিত হয়েছেন এই ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা।
জাতির কল্যাণ ও গণতন্ত্র পুণরুদ্ধারের জন্য আওয়ামী লীগের দায়িত্ব তুলে দেয়া হয় বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে। দীর্ঘ ২১ বছর আওয়ামী লীগ ছিলো স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির ষড়যন্ত্রের করতলে। এ সময় আওয়ামী লীগের পাশে থেকে দেশে বিদেশে যুবলীগ এক অন্যন্য ভূমিকা পালন করেছে এবং কেন্দ্র থেকে শুরু করে সারাদেশে যুবলীগের নেতা-কর্মীরা সহ্য করেছে নির্যাতন।
যুবলীগ দেশরত্ন শেখ হাসিনার ভোট ও ভাতের অধিকার আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনসহ প্রতিটি আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুকন্যার প্রধান শক্তি হিসাবে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃত যুবলীগের সক্রিয় কর্মী শহীদ নূর হোসেনের রক্তে অর্জিত হয়েছে এদেশের গণতন্ত্র।
দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় ও রক্ষায় সংগঠনটির অবদান অনস্বীকার্য।
এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন দীর্ঘদিন আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাসে ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে যুবলীগের সুনাম, ঐতিহ্য হোঁচট খেয়েছে বারবার। দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, সন্ত্রাস, টেন্ডারবাজি- যুবলীগের বিরুদ্ধে জনগণের মনে এইসব অভিযোগই লিপিবদ্ধ হয়ে যায়। ২০১৯ সালে যুবলীগের কতিপয় অসাধু নেতা-কর্মী সুসংগঠিত সংগঠন যুবলীগকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে।
ঠিক ওই সময় সংগঠনের সময়োপযোগী চাহিদার প্রেক্ষিতে সফল রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার একান্ত ইচ্ছায় মেধাবী ও রুচিশীল ব্যক্তিত্ব শেখ ফজলে শামস পরশ ও ক্লিন ইমেজের অধিকারী মাঈনুল হোসেন খান নিখিল দায়িত্বভার গ্রহণের পর থেকেই বলতে গেলে সংগঠনের সংস্কার কাজ শুরু হয়। প্রথমেই ক্লিন ইমেজের নেতাদের নিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করে চমক সৃষ্টি করে।
চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েই প্রথম অভিব্যক্তিতে সকলের মন জয় করে নেন শেখ ফজলে শামস্ পরশ। তখন বলেছিলেন, ‘যুবলীগের চেয়ারম্যান হিসেবে নয়, একজন কর্মী হিসেবে আপনাদের পাশে থেকে কাজ করব। আপনারা আমার শক্তি হবেন। আমার বাবা শেখ ফজলুল হক মণি বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের পক্ষে যুব সমাজকে ঐক্যবদ্ধ রাখার জন্য এই সংগঠন করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর ত্যাগ ও তার কন্যার দেশের প্রতি হৃদয়ের ভালবাসা থেকে আমি সাহস পাই। তাই আজ আমি আপনাদের সামনে বলতে চাই– আমার ওপর যে দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে আমি সম্পূর্ণ সততার সঙ্গে তা পালন করবো।’
সাম্প্রতিককালে ‘অসৎ পথে বিরিয়ানি খাওয়ার চেয়ে সৎ পথে পান্তা খাওয়া অনেক ভালো’– চেয়ারম্যান এর অন্তর্নিহিত বক্তব্যটি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বসহ সারা বাংলার কোটি যুবককে অনুপ্রাণিত করেছে।
পরশ-নিখিল যুবলীগের নেতৃত্বে আসার পরপরই সঙ্কট কাটিয়ে যুবলীগের হারানো গৌরব পুনরুদ্ধার করতে নতুন উদ্যমে দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণে আত্মনিয়োগ করে দলটি। যাত্রা শুরু হয় নতুন এক মানবিক যুবলীগের।
করোনাকালীন গরিব ও খেটে খাওয়া প্রায় ৫০ লাখ মানুষকে খাবার দিয়ে এখন অবধি সহায়তা করেছে যুবলীগ। এছাড়াও রমজান মাসজুড়ে অসংখ্য এতিমখানায় ইফতার সরবরাহ করছে সংগঠনটির বিভিন্ন নেতা। মহামারীর সময় বোবা ও বধিরদের সাহায্যেও কাজ করছে যুবলীগ। এখন অবধি দেশের নানা প্রান্তে প্রায় ১০ লাখ মাস্ক বিতরণ করেছে যুবলীগ কর্মীরা।
দলটি তাদের কাজের পরিধি শুধু মাঠেই সীমাবদ্ধ রাখেনি, আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ম্যান্ডেট ডিজিটাল বাংলাদেশ তৈরির পথে দেশকে এগিয়ে নিতে তারা তাদের সেবাদান করার ইচ্ছাকে নিয়ে গেছে ডিজিটাল দুনিয়াতেও। নবনির্বাচিত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে ১০০-এরও অধিক ডাক্তারের নিবিড় পর্যবেক্ষণে ২৪ ঘণ্টা বিনামূল্যে টেলিমেডিসিন দেয়া হচ্ছে। এখানেই শেষ নয়। কৃষিভিত্তিক বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ দেশের কৃষকরা। এই চিন্তাকে বুকে ধারণ করে তাদের সাহায্যেও কাজ করছে যুবলীগ। ধান কাটা, ভারি যন্ত্রপাতি দিয়ে ফসলের মৌসুমে তাদের সাহায্য করছে যুবলীগের কর্মীরা। এছাড়াও বন্যার্তদের খাদ্য সহায়তা প্রদান, করোনায় মৃত ব্যক্তির লাশ দাফনের মতো আপাতদৃষ্টিতে সাহসী কাজেও দেখা মিলছে যুবলীগের স্বেচ্ছাসেবক কর্মীদের।
এগুলোর বাইরেও মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে ‘গাছ লাগাই জীবন বাঁচাই’ স্লোগানকে সামনে রেখে যুবলীগ এখন পর্যন্ত ৪২ লাখের বেশি বৃক্ষরোপণ করেছে, যে কার্যক্রম এখনও চলমান। নতুন চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদক রাত-দিন পরিশ্রম করে যেভাবে সেবাধর্মী কাজে নিজেদের নিয়োজিত রেখেছেন, দলের কর্মীদের জন্যও তা চমৎকার দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে।
যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ বলেছেন, মানবিক যুবলীগ অন্ধকার কাটিয়ে আলোর দিকে ধাবমান। ভবিষ্যতে যুবলীগ বাংলাদেশে নেতৃত্ব দেবে।’ একজন প্রাক্তন যুবলীগার হিসাবে আমারও একান্ত প্রত্যাশা ঐতিহ্যবাহী যুবলীগ এগিয়ে যাক আপন গতিতে মানবতার কল্যাণে, বহু চড়াই উৎরাই পেরিয়ে ঐতিহ্যবাহী এই সংগঠনটি আজ পা রেখেছে ৫০ বছরে, আসুন আগামী নির্বাচনে সকল ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে আওয়ামীলীগকে পুনরায় ক্ষমতায় আনা সহ অপরাজনীতির শক্তিকে দাঁতভাঙা জবাব দিতে এবং সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে দেশে বিদেশে বসবাসকারী সকল যুবলীগকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার একজন ভ্যানগার্ড হিসাবে শহীদ শেখ ফজলুল হক মণির প্রতিষ্ঠিত এ সংগঠনের কার্যক্রমকে বিশ্বব্যাপী বেগবান করার পাশাপাশি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে ও বাঙালির আস্থার প্রতীক, ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ শেখ হাসিনা’র ডিজিটাল বাংলার আলোর মিছিলকে এগিয়ে নিতে দেশে বিদেশে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে যুবলীগের সুবর্ণজয়ন্তীতে এই হোক সকল যুবলীগারদের দীপ্ত শপথ। শুভ জন্মদিন যুবলীগ, জয়তু যুবলীগ, জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ চিরজীবী হোক, জয় হোক মানবতার।