মালয়েশিয়ায় স্বর্ণপদক পেলেন বাংলাদেশি অধ্যাপক তারিকুল ইসলাম
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ নভেম্বর ২০২২, ৯:৩৮:০৭ অপরাহ্ন
ইউনিভার্সিটি কেবাংসান মালয়েশিয়া (ইউকেএম) এর ডেপুটি ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর দাতো ড. আব্দুল ওয়াহাব মোহাম্মদ এর হাত থেকে পুরষ্কার ও সনদ গ্রহণ করেন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম।
আহমাদুল কবির, মালয়েশিয়া: মালয়েশিয়ায় স্বর্ণপদক পেলেন বাংলাদেশি অধ্যাপক মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম। ১-৩ নভেম্বর ইউনিভার্সিটি মালয়েশিয়া কেলানতান, দেওয়ান তুয়াঙ্কু ক্যানসেলর ইউএমকেতে অনুষ্ঠিত ১১তম PECIPTA-য় তাকে এ স্বর্ণপদক দেওয়া হয়।
ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স এবং এক্সপোজিশন অন ইনভেনশনস বাই ইনস্টিটিউশনস অফ হায়ার লার্নিং (PECIPTA) হল একটি দ্বিবার্ষিক প্রোগ্রাম যা মালয়েশিয়ার উচ্চ শিক্ষা মন্ত্রনালয় কর্তৃক অংশীদার উচ্চ শিক্ষার প্রতিষ্ঠান (IHL) এর সাথে একত্রে আয়োজিত হয়।
অধ্যাপক মোহাম্মদ তরিকুল ইসলাম ইউনিভার্সিটি কেবাংসান মালয়েশিয়া (ইউকেএম) থেকে ‘স্মার্ট টেকনোলজি অ্যান্ড সিস্টেমস’ ক্লাস্টারের অধীনে একটি উদ্ভাবন প্রকল্প উপস্থাপন করেন যার শিরোনাম ছিল “সি ব্যান্ড অ্যান্টেনা ফর KITSUNE 6U CubeSatellite ” এই প্রকল্পটির জন্য তাকে স্বর্ণপদক প্রদান করা হয়।
পলিটেকনিক এবং কমিউনিটি কলেজ সহ ২০টি পাবলিক ইউনিভার্সিটি (UA) থেকে মোট ৪৩৩টি গবেষণা ও উদ্ভাবন প্রকল্প এবং ২৩টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভাবন প্রকল্প একটি পেশাদার জুরি দ্বারা মূল্যায়নের জন্য তৈরি করা হয়েছে।
অধ্যাপক মোহাম্মদ তরিকুল ইসলাম এবং তার গ্রুপ KITSUNE স্যাটেলাইটে মাউন্ট করার জন্য একটি অভিনব কমপ্যাক্ট সার্কুলারলি পোলারাইজড মাইক্রোস্ট্রিপ প্যাচ অ্যান্টেনা আবিষ্কার করেছে যা একটি ৬ ইউ কিউবস্যাট। এটি জাপানের কিউশু ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (কিউটেক) এর সাথে একটি সহযোগিতামূলক প্রকল্প। প্রকল্পের প্রধান গবেষক প্রফেসর ড. মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম বলেন, উন্নত সিঙ্গেল ফেড এবং কমপ্যাক্ট অ্যান্টেনা সার্কুলারলি পোলারাইজড রেডিয়েশন সহ সি ব্যান্ড (৫.৬৬ GHz এবং ৫.৮৪GHz ) ট্রান্সমিশন অ্যাপ্লিকেশনে কাজ করতে সক্ষম। CP অ্যান্টেনা একটি নির্ভরযোগ্য সিস্টেম সংযোগ দিতে পারে কারণ অ্যান্টেনার মেরুকরণ সর্বদা সারিবদ্ধ থাকে। এটি লিনিয়ার পোলারাইজড অ্যান্টেনার তুলনায় বেস স্টেশন অ্যান্টেনার সন্তোষজনক পাওয়ার এবং ওরিয়েন্টেশনের উপর ভর না করে সিগনাল প্রদান করবে।
এই উদ্ভাবনের কমপ্যাক্ট গঠন বৈশিষ্ট্যের কারণে ৬ ইউ কিউবস্যাট কাঠামোতে মাউন্ট করার জন্য অতিরিক্ত সুবিধা প্রদান করে। KITSUNE স্যাটেলাইটে সি-ব্যান্ড কমিউনিকেশন বোর্ড ব্যবহার করবে যা ২০Mbps পর্যন্ত হাই-স্পিড ডেটা ডাউনলিংক প্রদর্শন করবে। এটি মোবাইল গ্রাউন্ড স্টেশনে সি-ব্যান্ডের উপরে 1Mbps পর্যন্ত ডাউনলিংক গতি প্রদর্শন করবে। মোবাইল গ্রাউন্ড স্টেশন মূল গ্রাউন্ড স্টেশনের মতো একই ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করবে।
ডিজাইন করা অ্যান্টেনা কিউবস্যাটেলাইট বডির যেকোনো আকৃতির ধাতব এবং ননমেটালিক পৃষ্ঠের সাথে একত্রিত করা সহজ। মালয়েশিয়ান ইউনিভার্সিটি থেকে সি-ব্যান্ড হাই গেইন কমপ্যাক্ট রাইট হ্যান্ড সিপি অ্যান্টেনা তৈরির এটিই প্রথম উদ্যোগ।
KITUSNE স্যাটেলাইটটি সম্পূর্ণ করতে এবং ইনস্টল করতে প্রায় এক বছর সময় লেগেছিল। চূড়ান্ত নকশা নিয়ে আসার আগে দলটি ৩০টিরও বেশি অ্যান্টেনা নকশা তৈরি করেছে। মোট দুটি প্যাচ অ্যান্টেনা রয়েছে, যা ৬ইউ কিউবস্যাটেলাইটের জন্য সি ব্যান্ড অ্যান্টেনা আপলিংক (৫.৬৬ GHz) এবং আরেকটি ডাউনলিংক (৫.৮৪GHz ) পরিচালনা করে।
অধ্যাপক তারিকুল বলেন, এই উদ্ভাবন আমাদের সক্ষমতা প্রদর্শন করে যে আমরা যেকোনো চ্যালেঞ্জিং প্রয়োজনের অ্যান্টেনা তৈরি করতে পারি। এটি স্থানীয় শিল্পকে আরও চ্যালেঞ্জিং প্রকল্প করতে উত্সাহিত করতে পারে।
বাংলাদেশি এ শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. তারিকুল ইসলাম চলতি বছরের ১৮ মে দেশটির খ্যাতনামা উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘ইউনিভার্সিটি কেবাংসান মালয়েশিয়া (ইউকেএম)’ থেকে ‘মালয়েশিয়া রিসার্চ অ্যাসেসমেন্ট’ (MyRA) পুরষ্কার অর্জন করেন।
উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষমতা মূল্যায়নে প্রবর্তিত ‘মালয়েশিয়া রিসার্চ অ্যাসেসমেন্ট’ (MyRA) পুরস্কারের উদ্দেশ্য হল কর্মক্ষমতা উন্নত করার জন্য সকল শিক্ষাবিদদের প্রশংসা করা, স্বীকৃতি দেওয়া এবং অনুপ্রাণিত করা। ‘ইউনিভার্সিটি কেবাংসান মালয়েশিয়া (ইউকেএম) ২০০৬ সাল থেকে গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে ঘোষিত মালয়েশিয়ার ৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে একটি।
ইউকেএম’র ইলেকট্রিক্যাল, ইলেকট্রনিক এবং সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. তারিকুল ইসলাম একটি গবেষণা গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন এবং তার অধীনে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীরা গবেষণার কাজে নিয়োজিত আছেন।
ড. তারিকুল ইসলাম, এর আগে বেশ কয়েকটি স্বর্ণপদক পুরস্কার পেয়েছেন এবং বহু বছর ধরে ইইকেএমএর -এর শীর্ষ গবেষক আছেন। তিনি প্রায় ৩০ জন পিএইচডি ২০ জন এম.এসসি থিসিস তত্ত্বাবধান করেছেন। তিনি ১০ টিরও বেশি পোস্টডক্স এবং ভিজিটিং গবেষককে পরামর্শ দিয়েছেন।
স্বর্ণপদক হাতে বাংলাদেশি অধ্যাপক মোহাম্মদ তরিকুল ইসলাম।
এ ছাড়া অধ্যাপক তারিকুল, জাপানের কিউশু ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির একজন ভিজিটিং প্রফেসর। তিনি অ্যান্টেনা, মেটাম্যাটেরিয়ালস, এবং মাইক্রোওয়েভ ইমেজিং সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ের উপর প্রায় ৬০০টি গবেষণা জার্নাল নিবন্ধের লেখক এবং ২৫টি ইনভেন্টরি পেটেন্ট দাখিল করেছেন।
অধ্যাপক তারিকুল নটরডেম কলেজ ঢাকা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেক্ট্রিক্যাল এবং ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র ছিলেন । তিনি স্তন এবং মাথার টিউমারের মতো রোগ নির্ণয়ের যন্ত্রের জন্য জাপান, সৌদি আরব, কুয়েত এবং কাতারের মতো বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সহযোগিতামূলক গবেষণা পরিচালনা করছেন। তিনি ন্যানো স্যাটেলাইটের জন্য ছোট অ্যান্টেনা উন্নয়নেও সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন।
স্বীকৃতিতে অনূভূতি জানাতে গিয়ে অধ্যাপক মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি গবেষকরা সুনামের সাথে কাজ করছেন। মালয়েশিয়াতেও এর ব্যতিক্রম নয়, তার প্রমাণ দিতে পরে গর্ববোধ করছি। তিনি বাংলাদেশি গবেষকদের সহযোগিতা করার জন্য প্রস্তুত রয়েছেন বলেও জানান ।