দেশের অর্থব্যবস্থা দিশেহারা ডলারের চাপে, প্রধানমন্ত্রী জরুরি বৈঠক করেছেন
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ নভেম্বর ২০২২, ১২:১০:৫২ অপরাহ্ন
অনুপম নিউজ ডেস্ক: করোনার সময়ের চেয়েও এখন সংকট মারাত্মক পর্যায়ে। রিজার্ভ কমতে থাকছে দ্রুতগতিতে। বাড়ছে না রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়। সুখবর নেই কর্মসংস্থান ও বিনিয়োগে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে দেশের সমগ্র আর্থিক খাতের ঝুঁকি বেড়েছে। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হলে সংকট আরও তীব্র হতে পারে, আশঙ্কা করছে আইএমএফ।
প্রায় টানা দুই বছরের করোনা মহামারি কাটিয়ে গত বছর নভেম্বরেও দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি বেশ স্থিতিশীল ছিল। বিশেষ করে আমদানি পর্যায়ে ছিল মোটামুটি স্বস্তিদায়ক পরিস্থিতি। অভ্যন্তরীণ উৎপাদনও হয়েছিল বাম্পার।
মহামারি করোনায় যখন সারা পৃথিবী ছিল অচল, তখনো দেশের বাজারে দ্র্রব্যমূল্য ছিল সহনীয়ই। অথচ কয়েক মাস ধরে দ্রব্যমূল্য, রাজস্ব আদায় পরিস্থিতি, রপ্তানি-আমদানি, এডিপি বাস্তবায়ন, মূল্যস্ফীতি, জীবনযাত্রার ব্যয়, ব্যালান্স অব পেমেন্ট, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ- সব ক্ষেত্রে সৃষ্টি হয়েছে মারাত্মক অস্বস্তি।
প্রায় সবগুলো সূচকেই বিরাজ করছে অস্থিরতা, যা মূলত সামষ্টিক অর্থনীতির মধ্যে চাপ সৃষ্টি করছে। আর এ চাপ দিনকে দিন বাড়ছেই।
বিশ্লেষকরা বলছেন, জাতিসংঘ ও বিশ্বব্যাংক বলছে, সামনের বছর দুর্ভিক্ষ আঘাত হানলে বৈশ্বিকভাবে এ চাপ আরও বাড়বে।
অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় করণীয় নির্ধারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল জরুরি বৈঠক করেছেন কয়েকজন মন্ত্রী সচিবকে নিয়ে। বৈঠকে মুখ্য, অর্থ, বাণিজ্য, শিল্প সচিবসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে দেশের অর্থনীতির সামগ্রিক পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেন প্রধানমন্ত্রী। সংকট মোকাবিলার জন্য নির্দেশনাও দেন।
বিশেষ করে খাদ্য সংকট যাতে না হয় এ জন্য খাদ্য আমদানি, সার আমদানি ও খাদ্য উৎপাদন যেন ব্যাহত না হয় সে ব্যবস্থা নিতে বলেন। একই সঙ্গে খাদ্য মনিটরিং বাড়াতেও নির্দেশনা দেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০২১ সালের ২ নভেম্বর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৪৬ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার। আর ২ নভেম্বর ২০২২-এ বৈদেশিক মুদ্রা কমে নেমেছে ৩৫ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন ডলারে।
রিজার্ভ কমছে দ্রুতগতিতে। এক বছরে রিজার্ভ কমেছে প্রায় ১১ বিলিয়ন ডলার। অবশ্য রিজার্ভের এ অঙ্ক প্রকৃতপক্ষে আরও অনেক কম বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
বাড়ছে না রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়। সুখবর নেই কর্মসংস্থান ও বিনিয়োগে। করোনার সময়ের চেয়েও এ মুুহূর্তের সংকট অনেক বেশি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে দেশের সমগ্র আর্থিক খাতের ঝুঁকি বেড়েছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হলে সংকট আরও তীব্র হতে পারে বলে আশঙ্কা করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।
অর্থ বিভাগ সূত্র জানায়, ঢাকা সফররত আইএমএফের ১০ সদস্যের প্রতিনিধদল সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক ও সংস্থার সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠকে এ আশঙ্কার কথা জানিয়েছে।
ডলার সংকটের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। ডলারের বাজার নিয়ন্ত্রণে রিজার্ভ ভেঙে বাজারে ডলার ছাড়া হচ্ছে। তবু দাম কমছে না। সংকটও কাটছে না। ফলে ব্যাংকগুলো সময়মতো এলসি খুলতে পারছে না। এতে ব্যাহত হচ্ছে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম।