‘বারবার এমপি হলে এবারও মনোনয়ন পাবেন এটা হবে না’
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ অক্টোবর ২০২২, ৯:১২:৪২ অপরাহ্ন
অনুপম নিউজ ডেস্ক: বারবার এমপি হলেও আগামী নির্বাচনে দলের মনোনয়ন না-ও পেতে পারেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, নির্বাচন সামনে রেখে দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ে জরিপ করছেন তিনি। এই জরিপ চলছে, চলবে। গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিরাই দলের মনোনয়ন পাবেন।
তিনি বলেছেন, টাকা দিয়ে দলের বিভিন্ন কমিটিতে আসার অভিযোগও রয়েছে। এই অভিযোগ খতিয়ে দেখতে হবে। টাকা নেই বলে ত্যাগী ও স্বচ্ছ ইমেজের নেতাদের কমিটিতে রাখা হবে না- এটা ঠিক নয়।
গতকাল শুক্রবার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে শেখ হাসিনা আরও বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন খুবই টাফ হবে; প্রতিযোগিতামূলক হবে। এখন মুখে ‘না’ বললেও বিএনপি নির্বাচনে আসবে। কারণ বিএনপি ভেতরে ভেতরে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাই নির্বাচনকে হালকা করে দেখার কোনো সুযোগ নেই।
এই বৈঠকে আগামী ২৪ ডিসেম্বর শনিবার আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় ত্রিবার্ষিক কাউন্সিল আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ওইদিন সকাল ১০টায় রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। এ জন্য সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটিসহ ১১টি উপকমিটি গঠনের নির্দেশ দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। আগে যাঁরা কমিটিতে ছিলেন, তাঁরাসহ দক্ষ ও অভিজ্ঞদের নিয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে উপকমিটিগুলো করে ফেলার জন্য দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে দায়িত্ব দেন তিনি। তবে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুর কারণে অভ্যর্থনা উপকমিটিতে পরিবর্তন আসবে। সম্মেলন সামনে রেখে দলীয় গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্র যুগোপযোগী করতে সংশোধনের ওপরে জোর দেন প্রধানমন্ত্রী।
বৈঠকে আগামী ২০ ও ২১ ডিসেম্বর দলের জাতীয় কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ওই বৈঠকে দলের বাজেট অনুমোদন করা হবে। ২১ ও ২২ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
এর আগে বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে বলেই বিএনপি আজ আন্দোলন করতে পারছে। কিন্তু বিএনপির যারা খুনের সঙ্গে জড়িত; অগ্নিসন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত; জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত; তাদের ধরতে হবে। তাদের কোনো ছাড় নেই।
জাতীয় কাউন্সিলের জন্য সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি করতে হবে। কতগুলো উপকমিটি করতে হবে। তবে যেহেতু বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা যাচ্ছে; ফলে এবারের সম্মেলন আমরা কোনো শান-শওকত করে করব না। খুব সীমিত আকারে, অল্প খরচে এবং সাদাসিধাভাবে আমাদের সম্মেলন করতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। এটা আমরা করে যাব। আমার কথা হচ্ছে- আমাদের উন্নয়নের কথাগুলো মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে এবং ভবিষ্যতের জন্য আমরা যে পরিকল্পনাগুলো নিয়েছি, সেটাও মানুষের কাছে তুলে ধরতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপির আমলে তারা লুটপাট, সন্ত্রাস, দুর্নীতি, জঙ্গিবাদ, বোমাবাজি, গ্রেনেড হামলা, অত্যাচার, নির্যাতন, খুন, রাহাজানিসহ এমন কোনো অপকর্ম নেই, যা তারা না করেছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বিজয় অর্জনকারী বাংলাদেশকে তারা বিশ্বের কাছে ভিখারির দেশে পরিণত করেছিল। হাত পেতে চলার দেশে পরিণত করেছিল। সেখান থেকে বাংলাদেশকে আমরা তুলে এনে আজ আত্মমর্যাদাশীল একটা রাষ্ট্র করেছি। যে বাংলাদেশকে সারাবিশ্বের মানুষ একটা সম্মানের চোখে দেখে।
প্রধানমন্ত্রীর সূচনা বৈঠকের পর তাঁর সভাপতিত্বে বিকেল সাড়ে ৪টায় কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের রুদ্ধদ্বার বৈঠক শুরু হয়। প্রায় ছয় ঘণ্টার বৈঠকে দলীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ছাড়াও কেন্দ্রীয় নেতা বেশ কয়েকজন বক্তব্য দেন। শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন দলের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ূয়া। দায়িত্বপ্রাপ্ত আট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, এসএম কামাল হোসেন, মির্জা আজম, অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, সফিউল আলম চৌধুরী নাদেল ও সাখাওয়াত হোসেন শফিক স্ব স্ব বিভাগের সাংগঠনিক রিপোর্ট তুলে ধরেন।
এ ছাড়া বৈঠকে সারাদেশে দলের সাংগঠনিক অবস্থা নিয়ে পর্যালোচনা, মেয়াদোত্তীর্ণ সহযোগী সংগঠনের সম্মেলন এবং আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি, কৌশল নির্ধারণসহ এক গুচ্ছ গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়েও আলোচনা হয়। এসব বিষয়ে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জেলায় জেলায় সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী: বৈঠকে আগামী নির্বাচন সামনে রেখে জেলায় জেলায় সফরে বের হওয়ার কথা জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এখন থেকে দলকে আরও সময় দেবেন তিনি। সরকারি বিভিন্ন কর্মসূচির সঙ্গে সমন্বয় রেখে জেলায় জেলায় জনসভা ও জনসমাবেশ করবেন তিনি। নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে সিলেট থেকে এই জেলা সফর শুরু করবেন। এর পর তিনি ঝালকাঠি, রাজশাহী, যশোরসহ বিভিন্ন জেলা সফর করবেন। চট্টগ্রামে ৪ ডিসেম্বর দলীয় জনসভায় সভাপতিত্ব করবেন। ওই দিন সকালে সেখানে সেনাবাহিনীর একটি অনুষ্ঠানে যোগদান শেষে বিকেলে জনসভা করবেন। এ ছাড়া জেলা নেতাদের পর্যায়ক্রমে ঢাকায় ডেকে মতবিনিময়ও করবেন তিনি।