সোমবার ফয়সালা, কে হবেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, ২:৫৩:৪০ অপরাহ্ন
অনুপম প্রতিবেদক : ‘চ্যান্সেলর অব এক্সচেকার’ বা অর্থমন্ত্রীর পদ ব্রিটেনে প্রধানমন্ত্রীর পর দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ পদ বলে মনে করা হয়। ঋষি সুনাক হলেন প্রথম অশ্বেতাঙ্গ রাজনীতিক, যিনি ব্রিটিশ সরকারের এত গুরুত্বপূর্ণ উচ্চপদে আসতে পেরেছিলেন।
শেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ডঃ এন্ড্রু বার্কলের মতে, ব্রিটেনে কনজারভেটিভ পার্টিতে যারা নেতৃত্ব দেন, তারা যে ধরণের পরিবার থেকে আসেন, যেভাবে বেড়ে উঠেন, যে ধরণের চিন্তা-ভাবনা এবং ধ্যান-ধারণা পোষণ করেন, তার সঙ্গে ঋষি সুনাকের আসলে কোন পার্থক্য নেই। তিনিও একজন ‘অর্থোডক্স কনজারভেটিভ’ বা গোঁড়া রক্ষণশীল রাজনীতিক।
ওদিকে, লিজ ট্রাস নিজেকে তুলে ধরছেন ভবিষ্যৎ ব্রিটেনের নেতৃত্ব দেয়ার উপযুক্ত এক দক্ষ রাজনীতিক হিসেবে। এর আগে বিভিন্ন দফতরের মন্ত্রী হিসেবে যেসব সাফল্য তিনি অর্জন করেছেন, তার ভিডিওতে আছে সেসবের বর্ণনা।
শেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ডঃ অ্যান্ড্র বার্কলে বলছেন, এই দুজনের নীতি এবং আদর্শের মধ্যে মোটা দাগে সেরকম কোন পার্থক্য আসলে নেই। তাদের মধ্যে মূল ফারাক আসলে কীভাবে অর্থনীতি পরিচালিত হবে, সেটা নিয়ে।
প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের বিদায়ের সময় ঘনিয়ে এসেছে। সেই সঙ্গে এগিয়ে আসছে দেশটির নতুন প্রধানমন্ত্রী বেছে নেওয়ার সময়। আগামীকাল সোমবার সন্ধ্যায় নির্ধারণ হচ্ছে কে হচ্ছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী, মানে, বরিস জনসনের উত্তরসূরি। জানিয়েছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
প্রধানমন্ত্রীর দৌঁড়ে আছেন কনজারভেটিভ পার্টির পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাস অথবা একই দলের সাবেক অর্থমন্ত্রী্শে ঋষি সুনাক। ধারণা করা হচ্ছে, লিজ ট্রাস হতে যাচ্ছেন ব্রিটেনের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী।
শুক্রবার রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্ষমতাসীন দলের অন্তত দুইজন আইনপ্রণেতার সমর্থন রয়েছে এমন যে কোনও পার্লামেন্ট সদস্য বর্তমান পরিস্থিতিতে নিজেকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করতে পারেন। বরিসের পদত্যাগের ঘোষণার পর শুরু হয় পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী বাছাইয়ের প্রক্রিয়া।
লকডাউনের বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে মদের পার্টি কেলেঙ্কারি, উচ্চ মূল্যস্ফীতিসহ বিভিন্ন ইস্যুতে প্রচণ্ড চাপের মুখে থাকা বরিস জনসন গত ৭ জুলাই ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে অব্যাহতি নিতে বাধ্য হন। তার পদত্যাগের পর শুরু হয় দেশটির পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী বাছাইয়ের প্রক্রিয়া।
দেশটির সংবিধান অনুযায়ী, কোনো প্রধানমন্ত্রী যদি তার মেয়াদ পূর্ণ করার আগেই ক্ষমতাচ্যুত হন, সেক্ষেত্রে সরকারি দলের আগ্রহী প্রার্থীরা প্রধানমন্ত্রীর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য এগিয়ে যান। ক্ষমতাসীন দলের অন্তত দুই জন আইনপ্রণেতার সমর্থন রয়েছে— এমন যে কোনো পার্লামেন্ট সদস্য বর্তমান পরিস্থিতিতে নিজেকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করতে পারেন।
তারপর যেতে হয় বেশ কয়েক দফা ভোটে নতুন প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থীদের। যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট হাউস অব কমন্সের সরকারি দলের আইনপ্রণেতারা গোপন ব্যালটে ভোট দেবেন। সেসব ভোটের ফলাফলের গড় হিসাব করে যে প্রার্থী সবচেয়ে কম ভোট পাবেন, তার প্রার্থিতা বাতিল হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত প্রার্থীর সংখ্যা ২ জনে এসে না ঠেকছে ততক্ষণ চলতেই থাকবে এই ভোট।
চুড়ান্ত হওয়ার পর শীর্ষ দুই প্রার্থী, তারা সমর্থন চাইবেন পার্লামেন্টের বাইরে সরকারি দলের যত সদস্য রয়েছেন তাদের। যে প্রার্থী সবচেয়ে বেশি সমর্থন লাভ করবেন, তিনিই হবেন যুক্তরাজ্যের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী।
বিদায়ের পথে থাকা যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনও এভাবেই প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। ২০১৯ সালে কনজারভেটিভ পার্টির নেত্রী ও দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে’র পদত্যাগের পর দলের এমপি ও সদস্যদের সমর্থন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন জনসন।
সরকারি দলের আইন প্রণেতাদের ভোটে একটি বড় সময় পর্যন্ত এগিয়ে ছিলেন তিন জন—েঋষি সুনাক, লিজ ট্রাস এবং বর্তমান সরকারের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিষয়ক মন্ত্রী পেনি মরডাউন্ট। তবে শেষ পর্যন্ত মরডাউন্ট এই দৌড় থেকে ছিটকে পড়েন, টিকে থাকেন ট্রাস ও সুনাক।
নিজেদের পক্ষে ভোট টানতে উভয়ই ভোটারদের একাধিক আকর্ষণীয় প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। লিজ ট্রাস বলেছেন, তিনি প্রধানমন্ত্রী হলে যুক্তরাজ্য থেকে লিঙ্গ বৈষম্য নির্মূল, নারী নির্যাতন প্রতিরোধ, কর ব্যবস্থার সংস্কার ও জনগণের জীবনমান বৃদ্ধির দিকে মনোযোগী হবেন।
অন্যদিকে সুনাক প্রাধান্য দিয়েছেন দেশের অর্থনৈতিক সংস্কার, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বেকারত্ব দূর করা ও জীবনযাত্রার ব্যয় হ্রাসে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের ওপর।
পার্লামেন্ট সদস্যদের ভোটপর্ব শেষ হয়েছে বেশ আগেই; এবং চুড়ান্ত ফলাফলে দেখা গেছে— সুনাক ১৩৭ ভোট পেয়েছেন, ট্রাস পেয়েছেন ১১৩ ভোট। পার্লামেন্টের বাইরে সরকারি দলের যেসব ভোটার আছেন, তাদের ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে গত শুক্রবার। এই ভোটারদের মোট সংখ্যা প্রায় ১৬ লাখ।
তাদের ভোট ফয়সালা করবে — কে হবেন যুক্তরাজ্যের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী। কাল সোমবার সন্ধ্যায় ফলাফল পাওয়া যাবে।
উল্লেখ্য, ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ১৯৮০র দশকের শেষেও সংখ্যালঘুদের রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব ছিল একেবারে ন্যূনতম পর্যায়ে। ১৯৮৭ সালে লেবার পার্টি থেকে পার্লামেন্টে চারজন অশ্বেতাঙ্গ সংখ্যালঘু এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। তবে পরবর্তী প্রতিটি পার্লামেন্টে এই সংখ্যা ক্রমাগত বেড়েছে। বর্তমান পার্লামেন্টে যে ৬৬ জন জাতিগত সংখ্যালঘু এমপি রয়েছেন, তাদের ৪১ জন লেবার পার্টি থেকে, ২২ জন কনসারভেটিভ এবং বাকী দুজন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির।