হাসানাহ এইড আয়োজিত ‘জার্নি টু প্যারাডাইস’ শীর্ষক সেমিনার সম্পন্ন
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১০:২৮:০৬ অপরাহ্ন
লন্ডনের ফোর্ড স্কয়ার মসজিদে জার্নি টু প্যারাডাইস শীর্ষক এক প্রাণবন্ত সেমিনার রোববার ২৮ আগস্ট বিকেলে অনুষ্ঠিত হয়।
জার্নি টু প্যারাডাইস বা জান্নাতি সফরে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, জার্নি বা সফর মানুষের জ্ঞান ও মননের পরিধি বৃদ্ধি করে। সমৃদ্ধ করে ঈমান ও আমলকে। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সময়টা আমাদের জীবনের একটি জার্নি বা সফর। ক্ষণিকের এ সফরের সকল কৃতকর্মের ফলাফল ভোগ করতে হবে পরকালে। ভালো কাজে পাওয়া যাবে জান্নাত। দুনিয়ার সফরটাও হবে জান্নাতি সফর। নতুবা জাহান্নাম হবে পরিণতি।
পার্থিব জার্নিটা পাড়ি দিতে হয় অনেক প্রতিকুল, ত্যাগ ও বিসর্জনের মধ্যে দিয়ে। বস্তুত চিরসুখের জান্নাত পেতে হলে দুনিয়ার সফরটাকে জান্নাতমুখী করে গড়ে তুলতে হয়। টার্গেট থাকতে হবে জার্নি টু প্যারাডাইস।
আদম (আঃ)এর সন্তান হিসাবে আমরা সবাই জন্মসুত্রে জান্নাতি। তাই বিশ্বাসীদের জন্যে মৃত্যুর মধ্য দিয়ে আবারো সেই পৈত্রিক সুত্রে প্রাপ্ত জান্নাতে পৌছাতে পারাটাই হলো জান্নাতি সফর বা জার্নি টু প্যারাডাইস।
জীবনের এ সংক্ষিপ্ত সফরের জন্যে নবীজীর নির্দেশনা হচ্ছে “তুমি দুনিয়াতে থাক যেন তুমি একজন পথচারী”। (বুখারী)
জীবনের বাঁকে বাঁকে আমরা কিন্তু সফরের শেষ দিকে অগ্রসর হতে চলেছি। মুসাফির হিসেবে নিজের এই নির্ধারিত সফরটাকে সফল ও সার্থক করে তুলার দায়িত্ব আমাদের নিজেদেরই।
জীবনে চলতে- ফিরতে, কাজে-কর্মে সব সময় স্মরণ রাখতে হবে আমি কিন্তু এ দুনিয়ায় স্থায়ী নই। কোন কিছুই আমার জন্যে থেমে থাকবে না। অথচ আমি একদিন এই সফরের অলি গলিতে হারিয়ে যাবো। মানুষ ভুলে যাবে আমাকে।
সেই হারিয়ে যাওয়া মানুষটির কর্মই কিন্তু তাকে বাঁচিয়ে রাখবে যুগের পর যুগ। রাসুল (সাঃ) বলেছেন, ‘মানুষের মৃত্যুর সাথে সাথে তার কাজ (কাজের সকল ক্ষমতা) ছিন্ন (বাতিল) হয়ে যায়, কিন্তু তিনটি কাজের (সাওয়াব লাভ) বাতিল হয় না: সাদকায়ে জারিয়া, এমন জ্ঞান যা দ্বারা উপকৃত হওয়া যায় এবং এমন সন্তান যে তার জন্য দুআ করে’। (মুসলিম ও তিরমিযি)
নবীজির এই হাদীসটিই আমাদের জীবনের আলোকবর্তিকা। সংক্ষিপ্ত ও নির্ধারিত এই জীবনের জার্নি শেষ হয়ে গেলেও মরেও অমর হয়ে থাকার একমাত্র উপায় হলো সফরটাকে নেক আমল ও সদকায়ে জারিয়ার মাধ্যমে জান্নাতি সফর হিসেবে গড়ে তুলা।
সদকায়ে জারিয়ার অন্যতম একটি কাজ হলো বিপদ-বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়ানো। এয়াতিম অসহায়দেরকে ভালোবাসা। তাদের হাসি কান্নাতে ভাগাভাগি করা। তাদের যাত্রাপথকে মসৃণ করা।
শরয়ী মুসাফিরকে যেভাবে সফরের কারণে শ্রেষ্ঠতম ইবাদত নামাজকে সংক্ষিপ্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তেমনি দুনিয়ার সংক্ষিপ্ত সফরে নিজের চাহিদাকে সংযত রেখে বঞ্চিত মানুষের জন্যে নিজেকে উৎসর্গ করাই হলো জার্নি টু প্যারাডাইসের আসল শিক্ষা।
এই লক্ষ্য ও শিক্ষা অর্জনের জন্যে হাসানাহ এইড আয়োজন করেছিল জার্নি টু প্যারাডাইস বা জান্নাতি সফর বিষয়ক সেমিনার।
তিন পর্বে পরিচালিত অনুষ্ঠানের পরিচালনায় ছিলেন মাওলানা আল-আমিন। কুরআনে কারীম থেকে তিলাওয়াত করেন ফাউজান মাবরুর , শায়খ আব্দুল বাছির ও হাফিজ আরশাদ সাহেব। বাংলা ও ইংরেজী নাশিদ পরিবেশন করেন মুহাম্মাদ ইহসান।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন হাসানাহ এইডের ফাউন্ডার ও মাদরাসাতুল হাসানাইন সিলেট’র প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক শায়খ শাব্বীর আহমাদ।
হাসানাহ এইড সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ বয়ান পেশ করেন হাসানাইনের লাইফ মেম্বার হাফিজ মাওলানা সাদিকুর রহমান।
২য় পর্বে হাসানাহ এইডের চেয়ারম্যান গাজী বকুল মিয়া সভায় সভাপতিত্বে করেন। এতে সৌজন্য বক্তব্য রাখেন কাউন্সিলর ওহিদ চৌধুরী, কে এম আবু তাহের চৌধুরী, মুফতি সালেহ আহমাদ প্রমুখ।
মুল আলোচনা পেশ করেন বার্মিংহাম জামেয়া ইসলামিয়ার মুহাদ্দিস শায়খ ফয়জুল্লাহ আব্দুল আজীজ।
তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, হাসানাহ এইড অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ও সমসাময়িক একটি বিষয়ে এ সেমিনার আয়োজন করেছে। তাঁর আলোচনার বিষয়বস্ত ছিলো ‘দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি’ প্রতিরোধে জান্নাতি মুসাফিরের করণীয়। বর্তমানে জীবন ধারণের উপযোগী প্রতিটি জিনিসের অগ্নিমূল্য। এ সময়ে সত্যিকার একজন মুসলিম ব্যবসায়ী হিসেবে মানুষের বিপদে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করে সাধারণ মানুষের একটু সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা প্রদানে যথেষ্ট ভূমিকা রাখলে ব্যবসার মুনাফার সাথে সাথে সদকারও সওয়াব পাওয়া যাবে।
৩য় পর্বে, সভার সভাপতিত্ব করেন হাসানাহ এইডের চিফ এডভাইজার ড. শায়খ ফজলুর রহমান। মাদরাসাতুল হাসানাইন সিলেট ও হাসানাহ এইডের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি ও কার্যক্রম বাংলা ও ইংরেজীতে পেশ করেন শায়খ শাব্বীর আহমাদ। তিনি উপস্থিত সকল দাতা, শুভাকাংখী ও মেহমানদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। ভবিষ্যতেও সকলকে হাসানাহ এইডের পাশে থাকার বিনিত আবেদন জানান।
অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন চ্যানেল এস-র ফাউন্ডার মাহি ফিরদাউস জলিল। তিনি হাসানাহ এইডের ভুয়সি প্রশংসা করে কমিউনিটির সকলকে মাদরাসাতুল হাসানাইন সিলেট এবং হাসানাহ এইডে সহযোগিতার আহবান জানান।
মুল আলোচনা পেশ করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি শায়খ হাসান আলী। তিনি বলেন, যুব প্রজন্মকে জান্নাতি সফরের প্রস্তুতি হিসেবে প্রযুক্তি ব্যবহারে সতর্ক থাকতে হবে। বিশেষত মোবাইল ব্যবহার সম্পর্কে। কারণ প্রযুক্তি ব্যবহার করে অনেক মানুষ তার অজান্তেই ঈমানহারা হয়ে যাচ্ছে। জার্নি টা হয়ে যাচ্ছে টু জাহান্নাম। ভেঙ্গে যাচ্ছে পারিবারিক বন্ধন। ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবনে নেমে আসছে অশান্তি আর কলহের কালো অমানিশা।
সৌজন্য বক্তব্য রাখেন DUF এর কর্নধার শায়খ নাজির উদ্দীন। অনুষ্ঠানে উলামাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শায়খ গোলাম কিবরিয়া, আলহাজ মাওলানা আতাউর রহমান, মাওলানা মুসলেহ উদ্দীন, মুফতি আব্দুর রাজ্জাক, মাওলানা মঈনুল হক্ব চৌধুরী, মুফতী মাহমুদ ছানী, মাওলানা ফাজিল চৌধুরী প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে হাসানাহ এইডের দাতা ও শুভাকাংখী পুরুষ, মহিলা ও তরুণদের আশা জাগানিয়া উপস্থিতি সকলকে অভিভুত করেছে।
সমাপনী বক্তব্যে শায়খ শামছুল হক্ব সাহেব হাসানাহ এইড ও মাদরাসাতুল হাসানাইন সিলেটের চলমান কার্যক্রমকে এগিয়ে নিতে কমিউনিটির সর্বস্তরের মানুষের সহযোগিতা কামনা করে মোনাজাতের মাধ্যমে সভার সমাপ্তি করেন।
সভা শেষে অনুষ্ঠানে আগত অতিথিদেরকে রাতের খাবার পরিবেশন করা হয়।