যেভাবে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা মোকাবেলা করে রুবল শক্তিশালী করলেন পুতিন
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ১২ আগস্ট ২০২২, ১১:৫৩:২৭ অপরাহ্ন
অনুপম প্রতিবেদক: পশ্চিমা বিশ্ব ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়ার ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা দেয়। ফলে রুবলের মান দ্রুত পড়তে থাকে। ধারণা করা হচ্ছিল আন্তর্জাতিক বাজারে ধস নামতে যাচ্ছে রুশ মুদ্রার।
কিন্তু নাটকীয়ভাবে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা পাশ কাটিয়ে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর আগে যে অবস্থানে ছিল, তার চেয়েও শক্তিশালী অবস্থানে এসেছে রুবল।
রুবলের অবস্থান ফিরিয়ে আনতে বেশ কিছু কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে পুতিনকে। রাশিয়ার রপ্তানি আয়ের ৪০ শতাংশ আসে তেল-গ্যাস থেকে। দেশটির রপ্তানি পণ্যের মধ্যে সিংহভাগই হচ্ছে তেল ও গ্যাস।
যুদ্ধের ডামাডোলে পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে তেল গ্যাস নিয়েই বড় বাজি ধরেন পুতিন। সাফ জানিয়ে দেন এখন থেকে ‘অবন্ধুসুলভ’ দেশগুলোকে রাশিয়ার তেল-গ্যাস কিনতে হবে রুবলে।
আন্তর্জাতিক অর্থ বিশ্লেষকদের মতে, নিষেধাজ্ঞার রাশিয়ার জন্য শাপে বর হয়েছে। কারণ রাশিয়ার তেল-গ্যাস রপ্তানির পরিমাণ কমলেও আন্তর্জাতিক বাজারে তেল-গ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়ায় ক্ষতি হচ্ছে না রাশিয়ার।
অন্যদিকে, তেল-গ্যাস বিক্রির অর্থ রুবলে নেওয়ায় রাশিয়ার মুদ্রার চাহিদা বেড়েছে। এই কারণেই মার্কিন ডলারের বিপরীতে রুবল শক্তি ফিরে পেয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা। যেহেতু ইউরোকে রুবলে বদলে রাশিয়ার কাছ থেকে জ্বালানি কিনতে হয়, সে জন্য রাশিয়ার মুদ্রা রুবলের বড় চাহিদা তৈরি হয়েছে। এর ফলে রুবলের দামও বেড়েছে।
এছাড়া ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিভিন্ন দেশ নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় রাশিয়া অনেক জিনিস আমদানি করতে পারছে না। রুশ নাগরিকরাও যুদ্ধের কারণে আগের মতো বিদেশে যেতে পারছে না। ফলে তাদের ডলার ও ইউরোর চাহিদা কমে গেছে।
ওদিকে, চীন এবং ভারতের কাছে জ্বালানি বিক্রির মাধ্যমে রাশিয়ায় বৈদেশিক মুদ্রাও আসছে।
সম্প্রতি মস্কো সফরে গিয়ে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানও রুবল দিয়ে গ্যাস কেনার ঘোষণা দিয়েছেন। ফলে দেখা গেল পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা সফলভাবে মোকাবেলা করলেন পুতিন তেল-গ্যাস বিক্রির নতুন নীতি ব্যবহার করে।
বিপদে পড়ল ইউরোপ। ইউরোপের দেশগুলো রাশিয়ার গ্যাস ও তেলের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু পুতিন রুবল দিয়ে তেল-গ্যাসের দাম মেটাতে বলায় ইউরোপের অনেক দেশেই দিশাহারা।
রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত গ্যাস কোম্পানি গ্যাজপ্রম পোল্যান্ড, বুলগেরিয়া ও ফিনল্যান্ডে গ্যাস সরবরাহ স্থগিত করেছে। রুবলে মূল্য পরিশোধ না করলে গ্যাস সরবরাহ চালু করা হবে না বলেও জানিয়ে দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
জার্মানি রাশিয়ান গ্যাসের উপর সবচেয়ে বেশি নির্ভরশীল দেশগুলোর মধ্যে একটি। নর্ড স্ট্রিম-১ পাইপ লাইন দিয়ে রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়ায় ইউরোপের প্রধান অর্থনৈতিক শক্তি জার্মানির শিল্প-কারখানাগুলো ভবিষ্যৎ হুমকিতে পড়েছে। শীতপ্রধান দেশটিতে আসন্ন শীতে নাগরিকদের বাড়িঘর গরম রাখতে বাড়তি বিদ্যুতের জোগান দেয়া সম্ভব হবে কি না তা নিয়েও দেখা দিয়েছে সংশয়।
মূলত, রাশিয়া মুখ ফিরিয়ে নেওয়ায় কোণঠাসা ইউরোপের দেশগুলো নিজেদের মতো করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে। হন্যে হয়ে রাশিয়ার তেল-গ্যাসের বিকল্প খুঁজছে কোনো কোনো দেশ। কেউ কেউ আবার চাপে পড়ে হয়েছে নমনীয়।
ইতোমধ্যে জার্মানি, হাঙ্গেরি ও স্লোভাকিয়ার মতো দেশের গ্যাস কোম্পানিগুলো রাশিয়ার গ্যাজপ্রম ব্যাংকের মাধ্যমে ইউরোতে গ্যাসের মূল্য পরিশোধে রাজি হয়েছে। এসব ইউরো পরে ব্যাংকের মাধ্যমে রুবলে বদলে নেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
অস্ট্রিয়া ও ইতালির গ্যাস কোম্পানিগুলোও গ্যাজপ্রম ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খোলার পরিকল্পনা করছে।




