বাইশে শ্রাবণ আজ
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ আগস্ট ২০২২, ৫:১৯:৪৬ অপরাহ্ন
বাঙালি জীবনে যত ভাব-বৈচিত্র্যের সমারোহ, তার পুরোটাই তিনি ধারণ করেছেন তার গল্প, কবিতা, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ, গান, স্মৃতিকথা ও দর্শনে
অনুপম সাহিত্য ডেস্ক: শ্রী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৮১তম প্রয়াণ দিবস আজ বাইশে শ্রাবণ। ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের এই দিনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন তিনি।
দিবসটি উপলক্ষে ছায়ানট, বাংলা একাডেমিসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান নানা আয়োজন সাজিয়েছে। গতকাল শুক্রবার প্রাঙ্গণেমোর নাট্যদল মঞ্চস্থ করেছে রবি ঠাকুরের লেখা ‘রক্তকরবী’ নাটকটি। এছাড়া বাংলা একাডেমি গত বৃহস্পতিবার একক বক্তৃতানুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। এতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ইংরেজি লেখা : নতুন পর্যবেক্ষণ শীর্ষক বক্তৃতা প্রদান করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফকরুল আলম। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাঙালি জাতির দিকনির্দেশক এক আলোকবর্তিকা। বাঙালির প্রাত্যহিক জীবনের সব কিছুর সঙ্গেই একটু একটু করে মিশে আছেন রবীন্দ্রনাথ! গত দেড় শতাব্দী ধরে বাঙালির মানসপটে তার দাপুটে অবস্থান। তাকে বাদ দিয়ে বাঙালির চিন্তার ভূগোল, ভাবের প্রকাশ, রস আস্বাদন— কিছুই সম্ভব না। বাঙালি সত্তায় রবীন্দ্রনাথ সদা জাগ্রত। বাঙালি জীবনে যত ভাব-বৈচিত্র্যের সমারোহ, তার পুরোটাই তিনি ধারণ করেছেন তার গল্প, কবিতা, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ, গান, স্মৃতিকথা ও দর্শনে।
আজ শনিবার রবীন্দ্র প্রয়াণ দিবসে ছায়ানট আয়োজন করেছে বিশেষ অনুষ্ঠান। সন্ধ্যা ৭টায় ছায়ানটের ফেসবুক পেইজ ও ইউটিউব চ্যানেলে অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার হবে। এছাড়া বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে প্রচার হবে বিশেষ অনুষ্ঠান।
১২৬৮ বাংলা সালের পঁচিশে বৈশাখ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। পিতার নাম দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। মাতা সারদাসুন্দরী দেবী। আট বছর বয়সে কবিতা লেখা শুরু করেন। কাব্য, সংগীত, উপন্যাস, ছোটগল্প, নাটক, প্রবন্ধ, ভ্রমণকাহিনী, শিশুতোষ রচনাসহ সাহিত্যের প্রতিটি শাখা তার প্রতিভার স্পর্শে দীপ্তিমান। জীবনের শেষ পর্যায়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গভীর আগ্রহে চিত্রকলার চর্চা শুরু করেন। তার এসব কাজ ভারতীয় উপমহাদেশের শিল্পকলায় ভিন্ন মাত্রা সংযোজন করেছে। সাহিত্যকর্মের পাশাপাশি সমাজসংস্কার, শিক্ষাবিস্তার, কৃষি উন্নয়নসহ বিভিন্ন কর্মে নিজেকে জীবনব্যাপী সক্রিয় রেখে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন তিনি।
১৮৭৪ সালে তত্ত্ববোধিনী পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রথম লেখা কবিতা ‘অভিলাষ’ প্রকাশিত হয়। পরবর্তী সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় তার সাহিত্যকর্ম অনূদিত হয়েছে। বিভিন্ন দেশের পাঠ্যসূচিতে তার লেখা সংযোজিত হয়েছে। ১৮৭৮ সালে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘কবিকাহিনী’ প্রকাশিত হয়। ১৯১০ সালে প্রকাশিত হয় তার ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যগ্রন্থ। এই কাব্যগ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদের জন্য তিনি ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। দুই হাজার গান রচনা করেছেন তিনি। অধিকাংশ গানে সুরারোপও করেছেন নিজেই। তার লেখা গানগুলো সংকলিত হয়েছে ‘গীতবিতান’ গ্রন্থে। কবির লেখা ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ গানটি বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত। ভারতের জাতীয় সংগীতটিও কবির লেখা।
রবি ঠাকুরের আঁকা চিত্রকর্মের সংখ্যা আড়াই হাজারেরও বেশি। এর মধ্যে ১ হাজার ৫৭৪টি চিত্রকর্ম শান্তিনিকেতনের রবীন্দ্রভবনে সংরক্ষিত আছে। কবির প্রথম চিত্র প্রদর্শনী দক্ষিণ ফ্রান্সের শিল্পীদের উদ্যোগে ১৯২৬ সালে প্যারিসের পিগাল আর্ট গ্যালারিতে অনুষ্ঠিত হয়। জীবিতকালে তার প্রকাশিত মৌলিক কবিতাগ্রন্থ ৫২টি, উপন্যাস ১৩টি, ছোটগল্পের বই ৯৫টি, প্রবন্ধ ও গদ্যগ্রন্থ ৩৬টি, নাটকের বই ৩৮টি। কবির মৃত্যুর পর ৩৬ খণ্ডে ‘রবীন্দ্র রচনাবলি’ প্রকাশ হয়। এ ছাড়া ১৯ খণ্ডে রয়েছে ‘রবীন্দ্র চিঠিপত্র’।