সাধারণ মানুষ মৃত্যুর মুখে, বললেন ক্যাব উপদেষ্টা, চট্টগ্রামে গণপরিবহন বন্ধ, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমছে
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ আগস্ট ২০২২, ১:০১:১৩ অপরাহ্ন
অনুপম প্রতিবেদক : দেশে জ্বালানি তেলের দাম বেশি বেড়ে গেল। আন্তর্জাতিক বাজারে এ সময়ে দাম কমছে।
এই দামবৃদ্ধির তীব্র সমালোচনা করেছেন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম।
তিনি বলেছেন, ‘সাধারণ মানুষকে মূলত মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হলো। জ্বালানি তেলের এই পরিমাণ মূল্য বৃদ্ধি অন্যায্য, অগ্রণযোগ্য।’
শুক্রবার রাতে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘করোনার কষাঘাতে, মুল্যস্ফীতির চাপে সাধারণ মানুষ এখন দিশেহারা। এই সময়ে এই দাম বৃদ্ধি কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। জ্বালানি তেলের এই দাম বৃদ্ধি বেআইনি।’
অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, ‘বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইন অনুযায়ী তেলের দাম বৃদ্ধি করবে কমিশন। কিন্তু কমিশনকে পাশ কাটিয়ে এভাবে দাম বাড়ানো ফৌজদারি অপরাধের শামিল।’
তিনি বলেন, ‘বিপিসি যদি গণশুনানিতে আসতো তাহলে তাদের হিসেব দিতে হতো। এই পরিমাণ দাম বাড়াতে পারতো না। এটা জনগনের প্রতি জুলুম। হতদরিদ্র মানুষগুলো নিঃস্ব হয়ে যাবে।’ বিপিসির দুর্নীতি ও তেল চুরি বন্ধ করার দাবি জানান তিনি।
শুক্রবার রাত ১২টার পর থেকে ভোক্তা পর্যায়ে ডিজেলের খুচরা মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১১৪ টাকা লিটার। কেরোসিন ১১৪ টাকা লিটার। অকটেন ১৩৫ টাকা লিটার ও পেট্টোল ১৩০ টাকা লিটার।
চট্টগ্রামে গণপরিবহন বন্ধ ঘোষণা
জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির পর শনিবার (৬ আগস্ট) সকাল থেকে চট্টগ্রামে গাড়ি না চালানোর ঘোষণা দিয়েছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পরিবহন মালিক গ্রুপ।
শুক্রবার (৫ আগস্ট) রাতে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন বাস মালিক সমিতির সভাপতি বেলায়েত হোসেন এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মেট্রোপলিটন পরিবহন মালিক গ্রুপের নেতারা বলেন, রাতে হঠাৎ তেলের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এরপর অনেক পেট্রোল পাম্প তেল সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। আবার অনেক পেট্রোল পাম্প তেল দিলেও প্রচণ্ড ভিড়ের কারণে গণপরিবহনগুলো তেল নিতে পারেনি। এছাড়া, বর্ধিত দামে তেল কিনলে ভাড়াও বৃদ্ধি করতে হবে। এই পরিস্থিতিতে শনিবার সকাল থেকে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ থাকবে।
আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমছে
বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের সাপ্তাহিক দাম ৫ মাসে সর্বনিম্ন আন্তর্জাতিক বাজারে বেশ কিছুদিন ধরে নিম্নমুখী অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম। শুক্রবার (৫ আগস্ট) সামান্য বাড়লেও এর সাপ্তাহিক মূল্য রয়েছে গত পাঁচ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে। সম্ভাব্য অর্থনৈতিক মন্দায় তেলের চাহিদা কমে যেতে পারে, এমন আশঙ্কায় দাম কমছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবর অনুসারে, গত শুক্রবার অপরিশোধিত তেলের বেঞ্চমার্ক ব্রেন্ট ক্রুডের দাম প্রতি ব্যারেলে ৮০ সেন্ট বেড়ে হয়েছে ৯৪ দশমিক ৯২ মার্কিন ডলার, যা আগের শুক্রবারের তুলনায় ১১ শতাংশ কম। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের (ডব্লিউটিআই) দাম ব্যারেলপ্রতি ৪৭ সেন্ট বেড়ে হয়েছে ৮৯ দশমিক ০১ ডলার, যা আগের সপ্তাহের তুলনায় আট শতাংশ কম।
এর আগে, গত বৃহস্পতিবার ব্রেন্টের দাম ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছিল ব্যারেলপ্রতি ৯৪ দশমিক ১২ ডলার, যা ২১ ফেব্রয়ারির পর থেকে সর্বনিম্ন। আর ডব্লিউটিআইয়ের দাম ২ দশমিক ৩ শতাংশ কমে হয়েছিল ৮৮ দশমিক ৫৪ ডলার, যা ৩ ফেব্রুয়ারির পর থেকে সর্বনিম্ন।
করোনাভাইরাস মহামারির ভয়ংকর দিনগুলোতে ঐতিহাসিক পতনের পর চলতি বছরের শুরুর দিকে তেলের দাম হঠাৎ করে ব্যারেলপ্রতি ১২০ ডলার হয়ে যায়। এর পেছনে করোনাকালীন ধাক্কা সামলে তেলের চাহিদা বৃদ্ধি এবং ইউক্রেন আক্রমণের জেরে বৃহৎ জ্বালানি সরবরাহকারী রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞার প্রভাব ছিল বলে মনে করা হয়।
তবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে অর্থনৈতিক মন্দার শঙ্কা, উদীয়মান বাজারগুলোতে ঋণ সংকট এবং বিশ্বের বৃহত্তম তেল আমদানিকারক চীনের ‘জিরো কোভিড’ নীতির কারণে জ্বালানি তেলের ভবিষ্যৎ চাহিদা এখনো খুব একটা আশাব্যঞ্জক নয়।
লন্ডনভিত্তিক ফোরেক্স কোম্পানি ওয়ান্দার জ্যেষ্ঠ বাজার বিশ্লেষক ক্রেগ এরলাম বলেছেন, তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৯০ ডলারের নিচে নেমে যাওয়ার বাস্তবিক সম্ভাবনা রয়েছে। এটি নির্ভর করবে বাজার কতটা চাপের মধ্যে থাকবে এবং তা থেকে নিস্তারের সুযোগ কতটা তার ওপর।




