ইস্তাম্বুল চুক্তি: দাম কমছে গমের, আড়াই কোটি টন মজুত খাদ্যশস্য ইউক্রেনে
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ জুলাই ২০২২, ১:৩৫:১০ অপরাহ্ন
বাংলাদেশের মোট গমের ২৫ শতাংশ ইউক্রেন থেকে
অনুপম নিউজ ডেস্ক: পাঁচ মাস পর যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের খাদ্যশস্য আমদানির পথ খুলল। দেশটির খাদ্যশস্য রপ্তানি শুরুর জন্য গতকাল শুক্রবার একটি চুক্তি সই করেছে জাতিসংঘ, রাশিয়া, ইউক্রেন ও তুরস্ক। এ চুক্তি খাদ্য সংকটে বিপন্ন বিশ্বের জন্য দারুণ সুখবর।
চুক্তির খবরে গতকাল আন্তর্জাতিক বাজারে গমের দাম ৩ শতাংশ কমে গেছে। বাংলাদেশেও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশা করছেন ব্যবসায়ীরা। বাংলাদেশ মোট গমের ২৫ শতাংশ ইউক্রেন থেকে আমদানি করে থাকে।
তুরস্কের দীর্ঘ দুই মাসের কূটনৈতিক তৎপরতার পর গতকাল ইস্তাম্বুলে বহুল প্রতীক্ষিত চুক্তিটি সই হয় বলে জানায় বিবিসি। চুক্তির ফলে কৃষ্ণসাগর অঞ্চলে অবরুদ্ধ ইউক্রেনের বন্দর হয়ে শস্য রপ্তানি শুরু হবে। দেশটির হাতে প্রায় আড়াই কোটি টন খাদ্যশস্য মজুত আছে।
চুক্তি সই অনুষ্ঠানে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস, তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান, রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু ও ইউক্রেনের প্রতিনিধিরা ইস্তাম্বুলে উপস্থিত ছিলেন।
চুক্তি স্বাক্ষরের পর গুতেরেস একে ‘আশার বাতিঘর’ এবং ‘বিশ্বের জন্য চুক্তি’ বলে অভিহিত করেছেন। এরদোয়ান বলেছেন, এর ফলে বিশ্বে খাদ্য সংকটের অবসান হবে।
চুক্তির মেয়াদ ১২০ দিন বা চার মাস। উভয় পক্ষ সম্মত হলে মেয়াদ নবায়ন করা যেতে পারে। চুক্তি বাস্তবায়ন তদারকির জন্য জাতিসংঘ, তুরস্ক, রাশিয়া এবং ইউক্রেনের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে ইস্তাম্বুলে একটি সমন্বয় ও পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। চুক্তির আওতায় কৃষ্ণসাগরের মাধ্যমে রাশিয়ান খাদ্যশস্য ও সারও রপ্তানি সহজতর হবে।
রাশিয়া ও ইউক্রেন দুই দেশই গুরুত্বপূর্ণ গম রপ্তানিকারক দেশ। ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের কারণে বিশ্বের খাদ্যের মূল্য ব্যাপকভাবে বেড়েছে। রাশিয়া গত ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে আগ্রাসন চালায়। এর ফলে ইউক্রেন থেকে কৃষ্ণসাগর হয়ে শস্য রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়।
চুক্তি অনুযায়ী, খাদ্যশস্যবাহী ইউক্রেনীয় জাহাজ চলাচলের সম্মত হয় রাশিয়া। এই সুযোগ ইউক্রেন যাতে অস্ত্র না নেয় তা নজরদারি করবে তুরস্ক। এর ফলে পাঁচ মাস পর প্রথম কৃষ্ণসাগর বন্দর থেকে রপ্তানি করার সুযোগ পাচ্ছে ইউক্রেন। তবে পাঁচ মাস যুদ্ধের ফলে কৃষ্ণসাগরের পানিতে মাইন নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। এ ছাড়া রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে অবিশ্বাসও চরমে পৌঁছেছে। কিয়েভ বলেছে, তারা সরাসরি রাশিয়ার সঙ্গে কোনো চুক্তি করেনি। তাদের চুক্তি হয়েছে তুরস্ক ও জাতিসংঘের সঙ্গে।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, দেশে বছরে গমের চাহিদা রয়েছে ৭০ থেকে ৭৫ লাখ টনের। এর মধ্যে উৎপাদন হয় ১২ থেকে ১৩ লাখ টন। সেই হিসাবে বাকি ৫৮ থেকে ৬২ লাখ টন গম আমদানি করতে হয়।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে ৪০ লাখ টনের বেশি গম আমদানি হয়েছে। এর মধ্যে বেসরকারি উদ্যোগে ৩৪ লাখ ৬৫ হাজার টন এবং সরকারি উদ্যোগে ৫ লাখ ৪৬ হাজার টন গম আমদানি করা হয়েছে। এর আগের ২০২০-২১ অর্থবছরে মোট আমদানি করা হয়েছিল ৫৩ লাখ ৪২ হাজার টন গম। বাংলাদেশের গম আমদানি বেশিরভাগই আসে ইউক্রেন ও রাশিয়া থেকে। এ ছাড়া ভারত, কানাডা থেকেও কিছু পরিমাণে আমদানি হয়।




