আইএমএফের ঋণ শর্ত মেনে নিতে হবে
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ জুলাই ২০২২, ১২:০২:৫৭ অপরাহ্ন
প্যাসিফিক অঞ্চলের বিভাগীয় প্রধান রুহুল আনন্দ দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন
অনুপম নিউজ ডেস্ক: আন্তর্জাতিক লেনদেনে ভারসাম্যের চাপ সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনতে আইএমএফের কাছে ৪৫০ কোটি ডলারের ঋণ চেয়েছে সরকার। স্থানীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ৪২ হাজার কোটি টাকা। আইএমএফের কাছ থেকে এর আগে কখনোই এত বড় অঙ্কের ঋণ চায়নি বাংলাদেশ। সর্বশেষ ২০১২ সালে ৯৯ কোটি ডলার ঋণ নেওয়া হয়। এ পর্যন্ত মোট তিন দফায় আইএমএফ থেকে ঋণ নিয়েছে সরকার।
ঋণ পেতে হলে বিভিন্ন খাতে সরকারের দেওয়া ভর্তুকি কমিয়ে দেওয়ার শর্ত দিতে পারে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। রাজস্ব এবং আর্থিক খাতের সংস্কারেরও শর্ত দিতে পারে। বাংলাদেশকে ঋণ দেওয়া-সংক্রান্ত সপ্তাহব্যাপী বৈঠকে এমন আরও কিছু শর্ত থাকতে পারে। আজ রোববার আনুষ্ঠানিক এ আলোচনা শুরু হচ্ছে।
আইএমএফের ঋণ নিয়ে আলোচনার জন্য সংস্থার ৯ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় এসেছে। সংস্থার এশিয়া এবং প্যাসিফিক অঞ্চলের বিভাগীয় প্রধান রুহুল আনন্দ দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
আজ অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক দিয়ে এ আলোচনা শুরু হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সঙ্গেও বৈঠকের কথা রয়েছে। পর্যায়ক্রমে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)সহ সরকারের অন্যান্য বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন আইএমএফ কর্মকর্তারা। এ সফরের পর পরবর্তী ধাপের আলোচনার জন্য সংস্থার দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের নির্বাহী পরিচালক সুরজিত বালার নেতৃত্বে অন্য আরেকটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় আসবে। ওই সফরে আইএমএফের বিভিন্ন শর্ত এবং অন্যান্য আলোচনা চূড়ান্ত হতে পারে। এরপর ঋণ অনুমোদনের জন্য ওয়াশিংটনে আইএমএফের প্রধান কার্যালয়ে উপস্থাপন করা হবে।
মতামত জানতে চাইলে গবেষণা সংস্থা সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান সমকালকে বলেন, দেশের স্বার্থের অনুকূলে থাকে এমন শর্ত মানতে কোনো অসুবিধা নেই। বিভিন্ন সময়ে সিপিডিসহ অন্যান্য গবেষণা সংস্থা এবং ব্যক্তি খাতের উদ্যোক্তারা রাজস্ব এবং ব্যাংকিং সংস্কার ও সরকারি ব্যয়ে সংস্কারের সুপারিশ করে আসছেন। তবে শোনা যাচ্ছে, আইএমএফ সরকারের ভর্তুকি কমানোর বিষয়ে শর্ত দিতে পারে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সে বিষয়টি খুব গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে হবে। কারণ এই মুহূর্তে ভর্তুকি কমালে সার্বিক অর্থনীতিতে চাপ তৈরি করবে। অতীতে আইএমএফ এ রকম অনেক শর্ত দিয়েছে, যা শতভাগ বাংলাদেশের অনুকূলে ছিল না। অনেক শর্তের কারণে বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত ঋণ গ্রহণ থেকে বিরত ছিল- এ রকম নজিরও আছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আইএমএফের প্রতিনিধি দলের একাধিক বৈঠক হবে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এবং আর্থিক বিভাগের সিনিয়র সচিব ফাতিমা ইয়াসমিনের সঙ্গে বৈঠক হবে দু-তিন পর। অর্থমন্ত্রী এখনও দেশের বাইরে রয়েছেন। ফাতিমা ইয়াসমিন নতুন দায়িত্বে যোগদান করেননি। আজ রোববার তিনি যোগদান করতে পারেন। আইএমএফ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার সুবিধার্থে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং বিভাগ থেকে সর্বসাম্প্রতিক তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
আন্তর্জাতিক লেনদেনে ভারসাম্যের ক্ষেত্রে বেশ কিছুটা চাপে রয়েছে বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেল, খাদ্যপণ্য ও রাসায়নিক সার আমদানি দায় মেটাতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ তৈরি হয়েছে। কয়েক মাস ধরে মজুত কমছেই। সর্বশেষ হিসাবে মজুত এখন ৪০ বিলিয়ন ডলারেরও কম। গত মাসে অর্থ সচিব থাকাকালে আব্দুর রউফ তালুকদার আইএমএফের আবাসিক প্রতিনিধি জয়েন্দু দের সঙ্গে ভার্চুয়াল আলোচনায় ঋণ নেওয়ার প্রস্তাব দেন।




