রাজনৈতিক সন্ত্রাস শুরু হয়েছিল কখন?
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ০২ জুলাই ২০২২, ৭:০৮:২৪ অপরাহ্ন
অতঃপর পাওয়া গেল (ইতিহাসের রহস্যের) আসল খবর। যে ডেস্ট্রয়ারের নাবিকরা জানিয়েছিল টর্পেডো দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে বলে। তারা পরে জানালেন আক্রান্ত হওয়ার খবরটি বানোয়াট ছিল।
সারওয়ার চৌধুরী
মানুষ যখন ‘অসভ্য’ ছিল, যখন বনে বাস করতো, তখনও আধিপত্য বিস্তারের জন্যে লড়াই করতো, খুন করতো; এখনও ‘সভ্য’ মানুষেরা আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে লড়াই করে, হত্যাযজ্ঞ চালায়। যখন পৃথিবীতে ‘বিজ্ঞানের অবদান’ কিছুই ছিলনা, তখনও মানুষ আতংকে জীবন যাপন করতো, এখন ‘বিজ্ঞানের অবদানে’ সমৃদ্ধ চিন্তার অধিকারী হয়েও মানবজাতি আতংকিত জীবন যাপন করে। ‘অসভ্য’দের মাথায় এ আতংক ছিল না যে, কেউ শত শত মাইল দূরে থেকে আক্রমণ করে জ্বালিয়ে দিবে তাদের গ্রাম। এখন হাজার হাজার দূরের দেশটির শহর ছাই করে ফেলার সামর্থ আছে ‘আধুনিক সভ্য’ মানুষের। তাহলে মানুষ কি বিজ্ঞান চর্চা করে লড়াইয়ের সমৃদ্ধ কৌশল শিখলো কেবল?
এখন বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাস কারা করছে? কেন করছে? কাদের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে প্রকাশ্যে ও গোপনে যুদ্ধ ও রক্তপাত? রাজনৈতিক সন্ত্রাস কখন শুরু হয়েছিল? কীভাবে যুক্তরাষ্ট্র গোপন যুদ্ধ থেকে প্রকাশ্যে যুদ্ধ করা শুরু করলো? এসব প্রশ্ন নিয়ে গবেষণা না করলে মানবজাতির অশান্তি ও আতংকের কারণ যথাযথভাবে ধরা যাবে না।
‘পলিটিক্যাল ইসলাম’ এর একটা আলাদা ইতিহাস তৈরি হয়ে গেছে ইতোমধ্যে। মানে, কী কারণে, কেন এ পরিচয় প্রস্ফুটিত হলো? এরিমধ্যে আবার আরেক নৃত্য শুরু হলো ‘ভাল মুসলিম’ আর ‘খারাপ মুসলিম’ ট্যাগ নিয়ে। কারা এ ট্যাগ দিলো? কেন দিলো? এই বিভক্তির ‘বুদ্ধিজীবি’ কারা? তারা সারগর্ভ কিছু বলতে পেরেছেন কি? নাকি ওরা কোনো শক্তির ক্রীড়নক ‘ভাড়াটে বুদ্ধিজীবি’ কেবল? ৯/১১ পরের পৃথিবী এতোটা বদলে গেল কেন? আমেরিকা কীভাবে এতো শক্তিশালী হলো? এবং শক্তিশালী হয়েও আমেরিকানরা কেন আতংকিত খুব? কেন যুক্তরাষ্ট্রের বুদ্ধিজীবি নোয়াম চমস্কি যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসী পররাষ্ট্রনীতির বিরোধিতা করেন? কেন স্যামুয়েল হ্যান্টিংটনের বই ‘দ্য ক্ল্যাশ অব সিভিলাইজেশনস’ অপিরপক্ক চিন্তার বই? ‘মৌলবাদ’ শব্দটির ব্যবহার প্রথম কোথায় হয়েছিল, কী কারণে হয়েছিল? পরে এ শব্দের দ্বারা কী বোঝানো হলো?
এ রকম শত শত প্রশ্নের উত্তর খুলেমেলে বের করে দিয়েছেন দলিলসমেত মাহমুদ মামদানি যে বইটিতে সেটি হলো আড়াই শতাধিক পৃষ্ঠার ‘গুড মুসলিম ব্যাড মুসলিম’। এ লেখক একজন স্বনামধন্য রাজনীতি বিজ্ঞানী এবং নৃবিজ্ঞানী। বইটির বিষয়বস্তু নিয়ে কিছু আলাপ করা যাক।
‘গুড মুসলিম ব্যাড মুসলিম’ বইটির ভূমিকায় বিগত শতক সম্পর্কে তিনি জানান-
‘‘একটি হিংসা হানাহানিভরা শতক শেষ হল আমাদের। সম্ভবত রেকর্ডকৃত ইতিহাসে তুলনামুলক অধিক হিংসাত্মক ছিল ঐ শতাব্দী।
দুটি বিশ্বযুদ্ধ, উপনিবেশিক জয়, গৃহযুদ্ধ, বিপ্লব, এবং প্রতিবিপ্লব এ শতাব্দীজুড়ে ছিল। যদিও এ সহিংসতার মাত্রা বিস্ময়কর, এটি আমাদেরকে ভয়বিহ্বল করে না।’’
তিনি জানান, ‘‘ ফরাসি বিপ্লবের সময়খণ্ডটি ইতিহাসে সহিংসতার দাইমা হিসাবে দেখা যেতে পারে। ফরাসি বিপ্লব আমাদেরকে সন্ত্রাস এবং নাগরিক সেনাবাহিনী দিয়েছে। নেপোলিয়নের যুদ্ধক্ষেত্রের দর্শনীয় সাফল্যের পিছনে আসল কারণ, তার সেনাবাহিনী ভাড়াটে ছিল না, দেশপ্রেমিকদের দ্বারা গঠিত ছিল। তারা জাতীয় স্বার্থে উদ্বুদ্ধ হয়ে হত্যাকাণ্ড চালাতো। ফলে আমাদের সামনে হাজির হল জাতীয়তাবাদী চেতনার নাগরিক ধর্ম।
ফরাসী বিপ্লব প্রসঙ্গে হেগেল তার ভাবনা লিখেছিলেন, মানুষ তার নিজের জীবনের চেয়ে বেশি মূল্যবান মনে করে একটি কারণে তার প্রাণ দিতে রাজি ছিল। মনে হয় হেগেলের এ কথা যুক্ত করা উচিত ছিল—মানুষ স্বেচ্ছায় এ রকম কারণেও হত্যা করতে চায়। এটা আমি মনে করি অতীতের তুলনায় এখন বেশি সত্য।’’
হ্যাঁ এটাও এক নির্ভেজাল সত্য যে, বিগত শতকে মানুষ যেভাবে গণহত্যা করেছে নানা অজুহাতে, বনের কোনো হিংস্র প্রাণী এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ড চালায়নি।
তিনি জানান-
‘‘আধুনিক মানুষ ব্যাপক সহিংসতা দেখে ভয় পায় না। দুটি বিশ্বযুদ্ধ এটা প্রমাণে যথেষ্ট। আমাদের আধুনিক সংবেদনশীলতা অনর্থক সহিংসতা ভয় পায়। এটাকে ন্যায্যতা দেয়া যাবে না উন্নতি-অগ্রগতি দেখিয়ে।
এ ধরনের সহিংসতা দুটি মৌলিক উপায়ে আলোচনা করা হয়েছে। আধুনিক হওয়ার আগের সমাজের জন্যে সংস্কৃতি বিষয়ক আলাপের মাধ্যমে, আর আধুনিক সমাজের জন্যে ধর্মতাত্ত্বিক আলাপের মাধ্যমে।’’
সাংস্কৃতিক ব্যাখ্যাতে আধুনিকতা অনুপস্থিত থাকে। সেখানে সর্বদা রাজনৈতিক সহিংসতা থাকবার বিষয় ধরা হয়। এ কারণে সভ্যতার সংঘাতের কথা বলা হয় (ক্ল্যাশ অব সিভিলাইজেশ্যন)। স্থানীয়ভাবে, ‘পশ্চিম’ এবং বাকি দুনিয়ার মধ্যে সীমানা অতিক্রম না করলে, তারা বলে ‘সাম্প্রদায়িক সংঘাত’ বা ‘জাতিগত লড়াই’। দক্ষিণ এশিয়ায় ও আফ্রিকায় এ দুই সংঘাত স্পষ্ট চিহ্নিত।
আধুনিক সমাজে রাজনৈতিক সহিংসতা যা উন্নয়নের বয়ানের সাথে খাপ খায় না তা ধর্মতাত্ত্বিক দিক থেকে আলোচনার প্রবণতা থাকে।
উদাহরণ দেয়া যায় হোলোকস্ট—সেই-যে ইহুদিদেরকে গণহত্যার শিকার হওয়ার ব্যাপারটি, সেটা অশুভ কাজ চিহ্নিত করে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। আধুনিকপূর্ব সময়ের মতো অশুভ কাজ ধরা হয় ঐতিহাসিক সময়কে বিবেচনায় না নিয়ে। নাৎসি হত্যাকাণ্ডের ঐতিহাসিক কারণ যাতে খুঁজে বের করা না হয়। কারণ তাতে নৈতিক ও রাজনৈতিক বাধা বিস্তর আছে। সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের বিশ্বাসঘাতক বা ধার্মিক পরিচিত বিপথগামী, এ দুই ধরনের হিংস্র কুকর্মকারীদের দেখে, আমরা আধুনিকতা ও রাজনৈতিক সহিংসতার লিংকের ভিতর দিয়ে চিন্তাকে এগিয়ে নিতে পারি না।’’
দেখতে হবে আধুনিক রাষ্ট্র ও রাজনৈতিক সহিংসতার গোড়াতে কী ছিল? দেখতে হবে ইউরোপে জাতিগত নির্মূলকরণের ইতিহাস। দেখতে হবে কেন ‘একীভূত স্পেনীয় রাষ্ট্র তার ইহুদিদেরকে কড়া শর্ত দিল: খৃষ্টান হও অথবা নির্বাসনে যাও’?
মাহমুদ মামদানি জানালেন-
‘‘১৪৯২ সাল। এ বছরে ইউরোপীয় রেনেসাঁর শুরু ও তাদের রাজনীতির আধুনিক রুপের জন্ম। এ বছরেই ক্রিস্টোফার কলম্বাস নতুন দুনিয়া বের করতে পাল তুলেছিলেন। এ বছরেই রাজা ফার্দিনান্দ ও রাণী ইসাবেলার সৈন্যরা রাজধানি গ্রানাডা জয় করেছিল, যে-গ্রানাডা ছিল পশ্চিমের খৃষ্টান বলয়ে মুসলিমদের সুরক্ষিত আশ্রয়স্থল। ফলে ১৪৯২ হয়ে উঠল দুটি সম্পর্কযুক্ত প্রচেষ্টার প্রবেশদ্বার। একটি হলো, একটি জাতির ঐক্য, অন্যটি বিশ্বজয় বা সাম্রাজ্য বিস্তার।
জাতি একীকরণের ফলে জাতিরাষ্ট্রের জন্ম হয়ে গেল। এ যুগে, রাজনৈতিক আধুনিকতা গণতন্ত্রের সূচনার সাথে সমান করে দেখা হয়। কিন্তু উনিশ শতকের রাজনৈতিক তাত্ত্বিকরা—বিশেষত ম্যাক্স ওয়েবারের মতে, রাজনৈতিক আধুনিকতা নিরুপিত হয়, রাষ্ট্রের সহিংসতা একক কর্তৃত্বের দ্বারা একচেটিয়া হয়ে গেলে। জাতিরাষ্ট্রে পূর্বের ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সহিংসতা একত্রিত করে, অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক সমস্ত শত্রুদের এক দুর্দান্ত ধাক্কা দিতে সক্ষম। এটা ছিল তাদের একটি সুশীল সমাজ তৈরীর রাজনৈতিক পূর্বশর্তও।
সংস্কৃতি ও বর্ণের দিক দিয়ে জাতির রাজনৈতিক আধুনিকতার চিন্তার দুয়ারে তখন ইউরোপ। ফারদিনান্দ এবং ইসাবেলার স্পেনে, যে-জাতির পরিচয় সর্বাগ্রে খ্রিস্টান। স্পেনের একীকরণ শুরু হয়েছিল জাতিগত নির্মূলকরণের মাধ্যমে। ১৪৯২ সালেই রাজা ফার্দিনান্দ এবং রাণী ইসাবেলা স্পেন থেকে ইহুদিদেরকে সরানোর আইনে (এডিক্ট অব এ্যাক্সপালশন) স্বাক্ষর করেছিলেন। একীভূত স্পেনীয় রাষ্ট্র তার ইহুদিদেরকে কড়া শর্ত দিল: খৃষ্টান হও অথবা নির্বাসনে যাও। প্রায় ৭০ হাজার স্পেনীয় ইহুদি খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করে স্পেনে থেকে গিয়েছিল। তাদের এই থাকা নিরাপদ ছিল না। তদন্তের দ্বারা জর্জরিত হয়েছিল। অভিযোগ এনেছিল ওরা খৃষ্টান জাতিরাষ্ট্রের প্রতি আন্তরিক না। আনুমানিক ৫০ হাজার উত্তর আফ্রিকা ও বলকান প্রদেশগুলোতে চলে গিয়েছিল অটোমান সাম্রাজ্যে। সেখানে তাদেরকে আন্তরিকভাবে স্বাগত জানানো হয়েছিল। বাকি প্রায় ৮০ হাজার সীমান্ত পেরিয়ে পর্তুগালে প্রবেশ করেছিল। স্পেন থেকে এ তাড়িয়ে দেয়ার ঘটনা গত শতকের শেষের দিকে। তখন একের পর এক ইউরোপের একেক অংশ থেকে ইহুদিদের বের করে দেয়া হয়েছিল। ১৪৯৯ সালে, মানে ইহুদি বের করার আদেশের সাত বছর পরে, স্পেন সেদেশের মুসলমানদের একই ধরনের শর্ত দিয়েছে: খৃষ্টান হও অথবা বা চলে যাও।
সুতরাং আধুনিক রাষ্ট্রের ইতিহাসও বর্ণের ইতিহাস হিসাবে পড়া যেতে পারে।’’
তাছাড়া মামদানি লিখেছেন-
‘‘আমি ‘মৌলবাদ’ শব্দটি ব্যবহার করব না ইসলাম বা অন্যান্য ধর্মের অভ্যন্তরীণ প্রতিবাদী আন্দোলনের বর্ণনা দেওয়ার জন্যে। এবং আমি এই বিস্তৃত ধারণা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছি যে, ওরা কেবল সন্ত্রাসবাদী হয় কীভাবে?
প্রতিটি রাজনৈতিক আন্দোলনের মূল পাঠ তাদের প্রতিদিনের ভাষাতে থাকে না, থাকে তাদের এজেন্ডা-তে। আমেরিকাতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে রাজনৈতিক খ্রিস্টান-এর সূচনা যেমন নাগরিক অধিকার এবং খ্রিস্টান-অধিকার আন্দোলনের মতো বৈচিত্র্যময় আন্দোলন সৃষ্টি করেছিল, তেমনি শীতল যুদ্ধের সময় রাজনৈতিক ইসলামের সূচনা একটি বহুমূখী আন্দোলনের জন্ম দেয়। এমনকি স্ববিরোধ সত্বেও, তাদেরও রাজনৈতিক এজেন্ডা ছিল। তারা অভিন্ন রাজনৈতিক আন্দোলনের ভিতর থেকে নিজেদের ভিতরের সামাজিক সংস্কারের আন্দোলনও করছিল। মূল আন্দোলন রাষ্ট্রের ক্ষমতা দখলের চেষ্টায়। কারণ তারা মনে করে বিদ্যমান রাজনৈতিক অবস্থা বহাল থাকলে সামাজিক সংস্কার সম্ভব না।’’
যুক্তরাষ্ট্রের সব কৌশল যেখানে ব্যর্থ হল
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় কবি ওয়াল্ট হুইটম্যান তাঁর সেই বিখ্যাত দীর্ঘ কবিতা ‘সঙ অব মাইসেলফ’ এর এক জায়গায় বলেছিলেন, ‘ডু আই কন্ট্রাডিক্সট মাইসেলফ? ইয়েস আই ডু’ (আমার মাঝে কি স্ববিরোধ আছে? হ্যাঁ আছে)। সহজ কথায় এর অর্থ আমার যা করা উচিত না, আমি তা করি। প্রশ্ন হলো কেন করি বা কেন করে মানুষ? আত্মরক্ষার্থে? তাই যদি হয়, আত্মরক্ষার্থে যা করা উচিত না, তা করলে শেষ রক্ষা হয় কি? এ প্রশ্ন থেকে যায়।
বইটিতে মাহমুদ মামদানি লিখেছেন-
‘‘১৯৭৫ সালে, আমি তখন তানজানিয়ার দারুস সালাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন তরুণ প্রভাষক। বছরটি বেশ গুরুত্ববহ ঔপনিবেশিকতামোচনের কাল হিসাবে। এ বছর আমেরিকা ইন্দোচীনে পরাজিত হয়। এ বছরেই আফ্রিকা মহাদেশের মোজাম্বিক, এ্যাঙ্গোলা, গিনি থেকে পর্তুগিজরা বিদায় হয়েছে। এই বছরেই ঠাণ্ডা লড়াইয়ের প্রধান কেন্দ্র দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া থেকে আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলে স্থানান্তর হয়। তখন কৌশলগত প্রশ্নটি ছিল, পর্তুগিজ সাম্রাজ্যের টুকরোগুলো কে নেবে – সোভিয়েত না যুক্তরাষ্ট্র? প্রধান কেন্দ্র স্থানান্তর হওয়ার সাথে সাথে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশল পরিবর্তন হয়। আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ও কংগ্রেস ইন্দোচীন যুদ্ধের শিক্ষা বিবেচনায় নিয়ে শীতল যুদ্ধ স্থানান্তর করতে বলে। সেই শিক্ষা নিক্সন মতবাদ হিসাবে আইনসভায় গৃহীত এবং তা ক্লার্ক সংশোধনী আকারে পাস হয়।…
নিক্সনের মতবাদে ছিল- ‘‘এশিয়ার যুদ্ধ এশিয়ার ছেলেদের করা উচিত’’। এ শিক্ষা আমেরিকা পেয়েছে ইন্দোচীনে এক যুগের বেশি জড়িয়ে থেকে কোনো লাভ না হওয়াতে। বিশেষত তুলনামুলক লাওসে প্রক্সি যুদ্ধ সফল হলেও ভিয়েতনামে ব্যর্থতার চাপে সেই সফলতাও ব্যর্থ হয়েছে। ভিয়েতনামে সরাসরি যুদ্ধে নামে আমেরিকা হাজার হাজার সৈন্য নিয়ে ভিয়েতনামি কমিউনিস্ট গেরিলাদের বিরুদ্ধে। কিন্তু লাওসে এসে দেখে আমেরিকা তার হাত বাঁধা ১৯৬২ সালের চুক্তি অনুযায়ী মস্কোর সাথে। সেই চুক্তি মোতাবেক আমেরিকান সৈন্য লাওসে প্রবেশ করতে পারে না। উপায় নেই দেখে আমেরিকা তাৎক্ষণিকভাবে যা মাথায় আসে তা করে লাওস নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে।
ভিয়েতনাম যুদ্ধ শুরু হয়েছিল ১৯৬৪ সালে, যখন জনসন প্রশাসন দাবী করলো দুই আমেরিকান ডেস্ট্রয়ারে আঘাত করেছে উত্তর ভিয়েতনামিদের টর্পেডো টনকিন উপসাগরে। আমেরিকান সংবাদ মাধ্যমে একটি চিত্র প্রকাশ পেলো, যেখানে দেখানো হয় যুক্তরাষ্ট্রকে অপমান করা হয়েছে। তাই এর একটা জবাব দেয়া উচিত দাবী করা হয় প্রভাবশালী মিডিয়াতে।
প্রেসিডেন্ট জনসন উত্তর ভিয়েতনামিদের উপর বোমা মারা শুরু করেন। জোরেশোরে যুদ্ধে যাওয়ার জন্যে কংগ্রেসের দুই হাউস থেকে সেনা পাঠানোর অনুমোদন দিতে বললেন। দ্রুত গতিতে কাজ হলো, প্রেসিডেন্ট দুই হাউস (হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভ ও সিনেট) থেকেই আক্রমণের অনুমোদন পেয়ে গেছেন।
অতঃপর পাওয়া গেল (ইতিহাসের রহস্যের) আসল খবর। যে ডেস্ট্রয়ারের নাবিকরা জানিয়েছিল টর্পেডো দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে বলে। তারা পরে জানালেন আক্রান্ত হওয়ার খবরটি বানোয়াট ছিল। (কিন্তু আমেরিকা অন্য হিসাব মাথায় নিয়ে আক্রমণ চালিয়ে যেতে থাকে।)
প্রেসিডেন্ট যেন পেয়ে গেলেন ব্ল্যাংক চেক – বিস্তর শক্তি ব্যবহারের সুযোগ। দ্রুত প্রেসিডেন্ট আর তার উপদেষ্টারা মিলে যুদ্ধটিকে ‘আমেরিকানাইজেশন’ করলেন। সামরিক উপদেষ্টা ১৬ হাজার থেকে বাড়িয়ে ২৩ হাজার করলেন। কিন্তু সফল হওয়ার কোনো লক্ষণ নেই। ‘অপারেশন রোলিং থাণ্ডার’ করলো যুক্তরাষ্ট্র উত্তর ভিয়েতনামে। নিরবিচ্ছিন্ন বোমা ফেলতে থাকলো। বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো, শিল্প কারখানাগুলো ধ্বংস করতে থাকলো এ আশায় যে উত্তর ভিয়েতনামিরা আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হবে।
কিন্তু ব্যর্থ হলো – আশানুরুপ ফল এলো না। প্রেসিডেন্ট জনসন দক্ষিণ ভিয়েতনামে কমব্যাট সৈন্য নামালো। সব ব্যর্থ হলো। ছোট ছোট ব্যর্থতাগুলো বিশাল ব্যর্থতায় উন্নীত হলো। নতুন নতুন অপারেশন করলো। ‘সার্চ এ্যাণ্ড ডেস্ট্রয়’ ‘বডি কাউন্ট’ ইত্যাদি। কিন্তু ব্যর্থ হলো আমেরিকা। ‘আমেরিকানাইজেশন’ হয়ে গেল ‘ভিয়েতনামাইজেশন’।’’
ব্যাপকভাবে জান-মালের ক্ষতি করে সন্ত্রাসীদের ক্ষমতায় বসানোর যুক্তি
যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ক্ষমতাধর পক্ষ কীভাবে দেশটির সংবিধান লংঘন করে সন্ত্রাসবাদকে অর্থ ও অস্ত্র দিয়ে সহযোগিতা করেছে তার উল্লেখ করেছেন মামদানি এভাবে-
‘‘সিআইএ চতুর্থ পক্ষ খুঁজে বের করার উদ্যোগ নেয় যার মাধ্যমে ইউনিটাকে অর্থায়ন, প্রশিক্ষণ এবং সহায়তা করা যায়। ১৯৮৩ সালে মরক্কোর মাধ্যমে একবার ১৫ মিলিয়ন ডলার দেয় যুক্তরাষ্ট্র এ্যাঙ্গোলার ইউনিটাকে (কংগ্রেসনাল টেস্টিমোনি)। এটা করা হয়েছিল গণতান্ত্রিক জবাবদিহিতার পরোয়া না করে। আর ওটা ছিল বিদেশে সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করার জন্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অভ্যন্তরীণ খরচ যুক্তরাষ্ট্রের।
ইউনিটা প্রধান জোনাস সাভিম্বি সাংবাদিকদের কাছে সরলমনে বলে দেন, আমেরিকার মতো একটি প্রভাবশালী দেশে অন্যদের প্রতি অসহযোগী একটা নির্বাহী শক্তির কাছে ক্লার্ক সংশোধনী অকার্যকর হলো।
ক্লার্ক সংশোধনী বাতিল হওয়ার আগেও, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসবাদকে প্রকাশ্যে সমর্থন করার ফলে কী ধরনের উচ্চ রাজনৈতিক মূল্য দিতে হয় তা বুঝতে পেরেছিল। তবু সন্ত্রাসবাদ এবং প্রোটোটেররিস্টদের আন্দোলনে প্রকাশ্য ও গোপন সমর্থন অব্যাহত রেখেছে।
‘‘যুক্তিটি ছিল, যদি সাধারণ জনগণের জান-মালের ক্ষতি খুব বেশি মাত্রায় করা হয়, তাহলে জনগণ হতাশ হয়ে শান্তির জন্যে সন্ত্রাসীদের ক্ষমতায় বসাতে বাধ্য হবে’’
রিগানের দ্বিতীয় মেয়াদের সময়খণ্ডে ইউনিটাকে ১৩ মিলিয়ন ডলার মূল্যের ‘মানবিক সহায়তা’ প্রদানের ব্যবস্থা, তারপরে আরও ১৫ মিলিয়ন ডলার ‘সামরিক সহায়তা’ প্রদান করা হয়েছিল। ১৯৯১ সালের মে মাসে বর্ণবৈষম্য এবং অভ্যন্তরীণ অ্যাঙ্গোলান বন্দোবস্ত আর স্নায়ুযুদ্ধ শেষ হওয়া সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র ইউনিটাকে সহায়তা বাড়িয়েছে। তখন আসলে আমেরিকা এ আশায় ছিল যে, সন্ত্রাসবাদ এবং রাজনৈতিক সংগঠনের সমন্বয় একটি রাজনৈতিক বিজয় আনবে অ্যাঙ্গোলায়। যেমন হয়েছিল নিকারাগুয়ায়, যেখানে প্রতিবিপ্লবী জোট নির্বাচনে জয়লাভ করেছিল। যুক্তিটি ছিল, যদি সাধারণ জনগণের জান-মালের ক্ষতি খুব বেশি মাত্রায় করা হয়, তাহলে জনগণ হতাশ হয়ে শান্তির জন্যে সন্ত্রাসীদের ক্ষমতায় বসাতে বাধ্য হবে।’’
প্রেসিডেন্ট রিগান যেভাবে বানালেন ‘মুক্তিযোদ্ধা’
নিকারাগুয়ায় কন্ট্রা বিদ্রোহীরা যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি করা ‘বিপ্লবী’ গোষ্ঠী। কেন করেছিল যুক্তরাষ্ট্র- এ প্রশ্নের সাধারণ জবাব যুক্তরাষ্ট্রের কাছে যেটি, তা হলো, নিজেদের রক্ষা করতে। মাহমুদ মামদানি লিখেছেন-
‘‘১৯৮১ সালের মার্চ মাসে, সিআইএ ডিরেক্টর ক্যাসি একটি প্রতিবিপ্লবী আক্রমণের প্রস্তাব দেন রিগানকে, যেখানে আটটি দেশ- নিকারাগুয়া, আফগানিস্তান, লাওস, কম্বোডিয়া, গ্রেনাডা, ইরান, লিবিয়া ও কিউবা রয়েছে। যার মধ্যে ছয়টি হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের হিট তালিকা থেকে নেওয়া হয়েছিল। ২৫ অক্টোবর ১৯৮৩ সালে গ্রেনাডা আক্রমণ রোলব্যাকের আনুষ্ঠানিক শুরু ছিল। আর নিকারাগুয়া ছিল আসলে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি পরীক্ষার ক্ষেত্র। এজেন্সি অপারেটিভদের সাথে ফ্লোরিডা এবং মধ্য আমেরিকায় স্যান্ডিনিস্তা বিরোধী গোষ্ঠী যোগাযোগ স্থাপনের সময় থেকেই সিআইএ কমান্ডে ছিল। তাদেরকে একটি একক সংস্থা হিসাবে একত্রিত করে এফডিএন (নিকারাগুয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেস) প্রাক্তন স্বৈরশাসক আনাস্তাসিও সোমোজার ন্যাশনাল গার্ড অফিসারদের নেতৃত্বে। এফডিএন জোটের নেতৃস্থানীয় সংগঠন হয়ে ওঠে প্রতি-বিপ্লবীরা, মানে কন্ট্রা বিদ্রোহীরা।
কন্ট্রা বিদ্রোহীরা শুরু থেকেই সিআইএ দ্বারা লালিত। ১৯৮১ সালের নভেম্বরে, রাষ্ট্রপতি রেগান ন্যাশনাল সিকিউরিটি ডিসিশন ডিরেক্টিভ ১৭-এ স্বাক্ষর করেছিলেন। এ সিদ্ধান্ত ছিল নিকারাগুয়ার অভ্যন্তরে হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত। এই কারণে সিআইএ-কে একটি প্যারা-মিলিটারি কমান্ডো স্কোয়াড তৈরি করতে ১৯.৫ মিলিয়ন ডলার অনুমোদন দেয় যুক্তরাষ্ট্র সরকার।
অন্য মাসে, আমেরিকান এজেন্ট, মানে কিছু সিআইএ, কিছু ইউএস স্পেশাল ফোর্স মিলে নিকারাগুয়া-হন্ডুরান সীমান্তে কনট্রাদের জন্যে নিরাপদ বাড়ি, ট্রেনিং সেন্টার এবং বেস ক্যাম্প স্থাপনের জন্য কাজ করছিল আর্জেন্টিনার মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে। কনট্রা বিদ্রোহীরা ছিল একটি একচেটিয়া সিআইএ-র ‘সম্পদ’। নিকারাগুয়ায় যুদ্ধই ছিল আগাগোড়া সিআইএ প্রযোজনায়।
উদাহরণ হল, আর্তুরো ক্রুজের ব্যাপারটা দেখা যাক, যিনি ১৯৮৫ সাল থেকে ৯ মার্চ, ১৯৮৭ সালে পদত্যাগ না করা পর্যন্ত কন্ট্রাদের তিন নেতার একজন ছিলেন৷ তাঁর পদত্যাগের সময়, ক্রুজ রেগান প্রশাসনের নিন্দা করেছিলেন কন্ট্রাদের সিআইএ-নিযুক্ত সামরিক কমান্ডার এবং ডানপন্থী রাজনীতিবিদদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হওয়ার অনুমতি দেওয়ার জন্যে। কন্ট্রা নেতারা সত্যিই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পুতুল বলে ঘোষণা করে তিনি বলেছিলেন, কনট্রাদের আন্দোলনকে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে পরিণত করা অসম্ভব।
আলফ্রেড ম্যাককয় জানান, ভিয়েনতিয়েনে রয়্যাল লাও আর্মির সাথে সিআইএ-এর সম্পর্কের একটি ঘনিষ্ঠ সমান্তরাল পাওয়া যেতে পারে, “মার্কিন সেনাবাহিনী ছাড়া বিশ্বের একমাত্র সেনাবাহিনী, যা সম্পূর্ণরূপে মার্কিন সরকার দ্বারা অর্থায়নে লালিত ছিল”। বিশেষত, বিভিন্নভাবে লাওতিয়ান প্রদেশে ভাড়াটে বাহিনী; দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী শাসন এবং মোজাম্বিকের রেনামোর সাথে সম্পর্কও একই রকম ছিল যুক্তরাষ্ট্রের। নিকারাগুয়ায় প্রতিবিপ্লবী যুদ্ধ অনানুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়েছিল ১৯৮২ সালের ১৪ মার্চ, যখন সিআইএ-র দ্বারা প্রশিক্ষিত ও অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত নাশকতাকারীরা চিনান্দেগা এবং নু সেগোভিয়া প্রদেশে দুটি বড় সেতু উড়িয়ে দেয়৷ কয়েক মাসের মধ্যে, কনট্রা বিদ্রোহীরা নৃশংসতা এবং নিষ্ঠুরতার জন্য বিখ্যাত হয়ে গেল।
১৯৮২ সালের মাঝামাঝি, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা রিপোর্ট করছিল কন্ট্রাদের দ্বারা কিভাবে ছোটখাটো সরকারি কর্মকর্তা হত্যা করা হচ্ছিল। ১৯৮৩ সালের শেষের দিকে, গোপন যুদ্ধের দায়িত্বে থাকা সিআইএ এজেন্ট ডুয়েন ক্ল্যারিজ, হাউস ইন্টেলিজেন্স কমিটির কর্মীদের এক রুদ্ধদ্বার ব্রিফিংয়ে স্বীকার করেছিলেন, ‘কনট্রারা শুধুমাত্র প্রদেশের স্যান্ডিনিস্তা কর্মকর্তাদেরই হত্যা করেনি, তারা প্রদেশের সমবায় কর্মকর্তা, নার্স, ডাক্তার এবং বিচারকও হত্যা করেছে।’ (ক্ল্যারিজেস টেস্টিমনি ইন দি মিয়ামি হেরাল্ড, ২০ অক্টোবর, ১৯৮৪)
যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ গোষ্ঠী রিপোর্ট করে ‘‘কন্ট্রা বিদ্রোহীরা মর্যাদাসম্পন্ন মানুষের ওপর ব্যক্তিগত আক্রোশে নির্বিচার আক্রমণ, নির্যাতন এবং পরিকল্পিতভাবে বন্দী এবং নিরস্ত্র মানুষ হত্যাকাণ্ডে জড়িত” ছিল। ১৯৮৫ সালের শেষের দিকে, নিকারাগুয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অনুমান করেছে ৩,৬৫২ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। ৪০৩৯ জন আহত হয়েছে এবং কন্ট্রাদের অভিযানের সময় ৫২৩২ জনকে অপহরণ করা হয়েছে।
এই অপহরণ নিকারাগুয়ায় কন্ট্রারা করতো, মোজাম্বিকে রেনামো করতো, তাদের লক্ষ্য জিম্মি করে নিজেদের শক্তি বৃদ্ধি করা। দ্য নিউইয়র্ক টাইমস ২৭ এপ্রিল, ১৯৮৭ সালে কন্ট্রাদের গনহারে অপহরণের ওপর প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে এ মর্মে যে, সিন্না শহরের কাছে পনের থেকে বিশ জন বেসামরিক লোককে অপহরণ করেছে ওরা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক নিকারাগুয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর হিউম্যান রাইটস ১৯৮৭ সালের জুলাইয়ে নিশ্চিত করেছে, বন্দীদের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা এবং বেসামরিকদের হত্যা করার পাশাপাশি, কনট্রারা জোরপূর্বক কৃষকদের রিক্রুট করতে অপহরণ করে।
যখন সেতু উড়িয়ে দেওয়া, কর্মকর্তা ও পেশাদারদের হত্যা করা, বেসামরিক নাগরিকদের অপহরণ সাধারণ ব্যাপার হয়ে গেলো, সিআইএ কন্ট্রাদের রাজনৈতিক কভার দেওয়া শুরু করলো। ১৯৮৩ সালের জানুয়ারী থেকে শুরু করে, সিআইএ মিয়ামি-ভিত্তিক একটি জন-সংযোগ সংস্থার সাথে চুক্তি করেছে প্রতি বছর ৬ লাখ ডলার দেবে কন্ট্রাদের সহায়তায়। চুক্তিতে বলা হয়েছে সংস্থাটি “একটি ইতিবাচক চিত্র তৈরি করতে”। তারা যাতে এফডিএন-র পক্ষে পত্রিকায় আর্টিকল/প্রবন্ধ ইত্যাদি প্রকাশ করে জনগণের মনে কন্ট্রাদের ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব গড়ে তুলতে। এই প্রচেষ্টা মে মাসে চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছিল যখন রাষ্ট্রপতি রিগান এই কন্ট্রাদের নাম দিলেন ‘মুক্তিযোদ্ধা’(হিউম্যান রাইটস ইন নিকারাগুয়া : রিগান, রেটোরিক অ্যান্ড রিয়েলিটি – ডেভিড সেইগেল, ১৯৮৫, পৃষ্ঠা-১৬। দ্যা ইউএস বেইসড নিকারাগুয়ান এ্যাসোসিয়েশন : বোডেনহেইমার অ্যান্ড গোল্ড, রোলব্যাক, পৃষ্ঠা-৭)
এ বই পাঠককে কী দেবে?
বইটি ইতিহাসের দলিলভিত্তিক এক বিস্তারিত আলাপের বই। যেখানে ঘাটে ঘাটে ঘটনার পেছনের ঘটনা সামনে এনে লেখক দেখিয়েছেন, ছল-চাতুরি করে সত্য ঢেকে রাখা যায় না। লেখক মাহমুদ মামদানি বইটির ভূমিকার শেষে জানিয়েছেন-
‘’ভাল’ এবং ‘খারাপ’ মুসলিম, এ রায় মুসলমানদের রাজনৈতিক পরিচয়কে ঘিরে। সাংস্কৃতিক বা ধর্মীয় পরিচয় এর ভিতরে নেই। রাজনৈতিক পরিচয় থেকে আলাদা হিসাবে সাংস্কৃতিক (এবং এখন ধর্মীয়) পরিচয়টি ভাবতে যাদের অসুবিধা হয়, তারা জানেন পশ্চিমা শক্তি পূর্বে কীভাবে যুদ্ধে বাধ্যতামুলকভাবে নিয়ে বিপদজনক অবস্থায় ফেলেছিল। প্রথমে ইউরোপ এবং আমেরিকা আর পরে নাজি জার্মানে কি ধর্মনিরপেক্ষ ইহুদিদেরকে বাধ্য করেনি রাজনৈতিক হতে? তারা জানতেন পশ্চিমা আধুনিকতা ‘ইহুদি’কে কেবল একটি সাংস্কৃতিক বা ধর্মীয় পরিচয়ে সীমিত না রেখে তাদেরকে রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত করেছিল। ঐতিহাসিক জায়নিজমের জন্ম কি তারা দিল না ধর্মনিরপেক্ষ ইহুদিদের উপর রাজনৈতিক পছন্দ চাপিয়ে দিয়ে?
‘খারাপ’ মুসলিম, ‘ভাল’ মুসলিম, এরকম বিভক্তি নেই; ঠিক যেরকম ‘ভাল’ খৃষ্টান ‘খারাপ’ খৃষ্টান নেই। ইহুদিও ওরকম দু’ভাগে বিভক্ত নেই। এ ধরনের অনুমানের অর্থ আমরা আমাদের সময়ের রাজনীতি যথাযথভাবে বিশ্লেষণ করতে ব্যর্থ হয়েছি। আমি আশা করি এ বই সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছার জন্যে যে-বিশ্লেষণ দরকার, সেটা করতে সহায়ক হবে।’’