দেশে জুলাইয়ে ব্যাপক বন্যার আশংকা
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ জুন ২০২২, ৮:৫৫:০৬ অপরাহ্ন
সেপ্টেম্বর নাগাদ বন্যা থাকতে পারে
অনুপম প্রতিবেদক: দেশে জুলাইয়ের দ্বিতীয় ও তৃতীয় সপ্তাহে ব্যাপক বন্যার আশঙ্কা আছে। বলেছেন কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু বিষয়ক গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ। তিনি বলেন, গ্রীষ্মমণ্ডলীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের পূর্বাংশে লা নিনা অবস্থান করায় এই বর্ষায় আরো বন্যার আশঙ্কা আছে। লা নিনা অবস্থান করলে সে বছর ভারতীয় উপমহাদেশে গড় বৃষ্টিপাতের চেয়ে বেশি বৃষ্টি হয় এবং গড় বন্যা পরিস্থিতির তুলনায় বেশি এলাকা প্লাবিত হয়।
লা নিনা কি?
‘লা নিনা শব্দের অর্থ শিশু কন্যা (Little Girl)। প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্ব দিকে পেরু উপকূলে সমুদ্রপৃষ্ঠের জলের স্বাভাবিক উষ্ণতা স্বাভাবিক উষ্ণতা চেয়ে 4° সেলসিয়াস কমে গেলে যে শীতল সমুদ্র স্রোত প্রবাহিত হয় তাকে লা নিনা বলে। এটি এল নিনোর(El Nino) বিপরীত অবস্থা।’
বন্যা পূর্বাভাসের নানা তথ্য উপাত্ত ও বাংলাদেশের নদীগুলোর পানি প্রবাহের গতি প্রকৃতির বিশ্লেষণ করে মোস্তফা কামাল বলেন, চিলমারী থেকে সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত যমুনার পানিপ্রবাহ বিপদ সংকেত দিতে শুরু করেছে। মধ্যাঞ্চলে তথা ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, চাঁদপুর এবং মুন্সীগঞ্জে পানিপ্রবাহ বাড়তে থাকবে। দেশের মধ্যাঞ্চলে বন্যার আশঙ্কা আছে। বাংলাদেশে মাত্র বর্ষাকাল শুরু হয়েছে, মৌসুমি বায়ুর প্রবাহ ও বিস্তার শুরু হয়েছে মাত্র কয়েক সপ্তাহ। বর্ষা মৌসুম এখন অক্টোবর পর্যন্ত গড়ায়। লা নিনার কারণে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত এবং বন্যা হয়। বৃষ্টিপাতের সঙ্গে ’মেডেন জুলিয়ান ওসিলেশন’ (গ্রীষ্মমণ্ডলীয় আবহাওয়ার ওঠানামা) এর সম্পর্ক আছে। বর্তমানে ’মেডেন জুলিয়ান ওসিলেশন’ দুর্বল অবস্থায় আছে। জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহে এটি সক্রিয় হবে। তখন এটি অবস্থান করবে ভারত মহাসাগরের ওপর। এতে বঙ্গোপোসাগরে প্রচণ্ড মেঘ এবং জলীয় বাষ্প তৈরি হবে। বাতাস মেঘের পুরোটাই বাংলাদেশের দিকে নিয়ে আসে। তখনই মেঘালয় ও আসামে অতিভারী বৃষ্টি শুরু হবে। সেই বিবেচনায় জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে আরেকটি বন্যার আশঙ্কা আছে।
আবহাওয়া গবেষকদের একটি স্বাধীন দল বাংলাদেশ ওয়েদার অবজারভেশন টিম (বিডব্লিউওটি) তাদের পূর্বাভাসে জানিয়েছে, সিলেট বিভাগে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। তবে কিশোরগঞ্জ জেলা ও যমুনা নদী অববাহিকায় আরো অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। জুনের শেষের দিকে ও জুলাইয়ের শুরুতে দেশের উত্তরাঞ্চলে নতুন করে ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস অনুযায়ী, দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলের বন্যাপ্রবণ নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি দীর্ঘ সময় ধরে স্থিতিশীল বা চলতে পারে।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবেই ব্যাপক বৃষ্টিপাত হওয়ায় এবার বন্যা ভয়ংকর রূপ নিচ্ছে। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলে ব্যাপকভাবে গাছ এবং পাহাড় কাটা হচ্ছে। পাহাড়গুলো পানি শোষণ করতে পারত। গাছ-পাহাড় কাটার কারণে পানিশোষণ করতে পারছে না। এছাড়া মৌসুমি বায়ু হঠাত্ করে তীব্র শক্তি নিয়ে হিমালয়ের উঁচু পাহাড়গুলোতে আছড়ে পড়ছে, যার ফলে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। এ অবস্থা এবার বর্ষাকালে একাধিকবার ঘটতে পারে।




