সুনামগঞ্জ: দেড় হাজার বাড়ির ঘরের চাল ছুঁই ছুঁই পানি
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ জুন ২০২২, ১১:৫৪:০৪ অপরাহ্ন
অনুপম নিউজ ডেস্ক : পনেরশ’ বাড়ির প্রায় সবগুলোর ঘরের চাল ছুঁই ছুঁই বন্যার পানি। ঘরের ফ্রিজ, টিভিসহ আসবাবপত্র পানির নিচে। নির্মাণাধীন কয়েকটি ভবনের ছাদে রাখার সময় ১০-১২টি গরুও মারা গেছে। সুনামগঞ্জ পৌর এলাকার কালীপুর-হাসনবসত এলাকার বয়োজ্যেষ্ঠরা গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে দেখা দেওয়া বন্যার বর্ণনা দিয়ে এমন তথ্যই জানান।
রোববার বিকাল ৩টায় নৌকায় করে গ্রামে ঢুকতেই নির্মাণাধীন ভবনের ছাদে গরুর ঘাস (কচুরিপানা) দেওয়ার সময় জয়নাল আবেদীন বলেন, দুই মহল্লার ১৫শ’ বাড়ির প্রায় সবগুলো ডুবে গেছে। গ্রামে কাউকে পাওয়া যাবে না। যে দুএকজন আছেন তারা গবাদি পশু দেখাশুনা করার জন্য এসেছেন।
জয়নাল আবেদীন আরও বলেন, মহল্লায় আমার দোকান থেকেই অনেকে বাজার করতেন। পানি সামান্য কমেছে, তাও দরজার উপরের চৌখাট পর্যন্ত। মধ্যশহরে যাওয়ার পথের কোথাও ঠাঁই নেই। শেষ পর্যন্ত মল্লিকপুরের নির্মাণাধীন একটি চারতলা ভবন, গ্রামের একজন মুক্তিযোদ্ধার তিনতলা ভবন এবং মল্লিকপুরের আরও দুটি ভবনে লোকজন উঠেছেন। এখন সকলেই পড়েছেন খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে। টাকা দিয়েও খাবার পাওয়া যাচ্ছে না। বিশুদ্ধ পানিরও ব্যবস্থা নেই। বানের পানিই ভরসা।
গ্রামের শফিক মিয়া ও আলেক মিয়াও একই কথা বললেন। তারা জানান, এখন পর্যন্ত তাদের কেউই খোঁজ নিতে আসেননি। এই অবস্থা সুনামগঞ্জের প্রায় সব গ্রামেরই।
এবারও সামনের সারির যোদ্ধা তিনি
গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার নুরুল মোমেন তার তিন তলা বাড়িতে প্রায় তিনশ’ বানভাসি মানুষকে আশ্রয় দিয়েছেন। শুক্রবার থেকে তিনিই সাধ্যমত সকলের খাবারেরও ব্যবস্থা করেছেন।
এখানে আশ্রয় নেওয়া তাজুল ইসলাম, জরিনা বেগমসহ অন্যরা বললেন, খাবার-দাবার যা ছিল। সবই শেষ। বাজারে কিনতেও পাওয়া যাচ্ছে না খাবার। কেউ এসে আমাদের দেখেও যায় নি।
বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল মোমেন বললেন, কাজটিকে আমি দায়িত্ব হিসাবেই দেখছি। কিন্তু এতো বানভাসিকে মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে একা সহযোগিতা করা কঠিন। এখন পর্যন্ত সরকারি বা প্রশাসনের কোন সহযোগিতা পাওয়া যায়নি।
এদিকে শহরের দোকানগুলোতে খাদ্যপণ্য, চিড়া, মুড়ি, বোতলজাত পানি, মোমবাতি, চাল ও ডালের দাম দ্বিগুন বেড়ে গেছে।
শহরের কালিবাড়ির শিপ্রা তালুকদার বলেন, সাড়ে ১২ কেজির সিলিন্ডার গ্যাস দুই হাজার থেকে চার হাজার টাকায়ও বিক্রি করা হচ্ছে। তাও বিক্রেতা দয়া দাক্ষিণ্য করছেন বলে মনে হচ্ছে।
এদিকে আরপিন নগরের মুনসুর আহমদ ও ওয়েজখালীর রানা মিয়া জানান, খাবারের দোকানে সামান্য পরিমাণে খাবার তৈরি করলেও বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে। (সমকালের সৌজন্যে)