বিশ্বনাথ : যুক্তরাষ্ট্রে স্বামীর হাতে খুন হওয়া শাপলা বাবার বাড়ির কবরস্থানে শায়িত
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ জুন ২০২২, ৪:০২:২৮ অপরাহ্ন

শুরু থেকেই আমার মেয়েকে মেনে নিতে পারেননি আবদালের মা মিনারা বেগম ও বড় ভাই আক্তার
সিলেট প্রতিনিধি : যার হাতে আদরের মেয়েটিকে তুলে দিয়েছিলেন মা বাবা, সেই স্বামীর হাতে খুন হলো মেয়েটি যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সিতে। অবশেষে মেয়েটির মরদেহ এলো বাবার বাড়ি, সিলেটের বিশ্বনাথের হাজরাই গ্রামে। সেখানেই তার দাফন সম্পন্ন হলো।
এক সন্তানের জননী সাইমা তাসনিম শাপলার (২৩) লাশ সোমবার (১৩ জুন) বিকেলে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সিলেটের বিশ্বনাথে এসে পৌঁছে। সন্ধ্যার পর জানাযার নামাজ শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় তাকে।
নিহত শাপলা উপজেলার লামাকাজী ইউনিয়নের হাজরাই গ্রামের মৃত হাজী মখদ্দুছ আলীর একমাত্র কন্যা ছিলেন। সাংসারিক জীবনে স্বামীর হাতে খুন হওয়া শাপলা ছিলেন ৫ বছর বয়সী শাহিদা বেগম ফারিহার মা। প্রয়াতের জানাযার নামাজে ইমামতি করেন হাজরাই জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব ফারুক মাহদি এবং দোয়া পরিচালনা করেন সৎপুর দারুল হাদিস কামিল মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা জামাল উদ্দিন।
শাপলার জানাযার নামাজে উপস্থিত ছিলেন লামাকাজী ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান-১ এনামুল হক এনাম মেম্বার, ৮নং ওয়ার্ডের মেম্বার লাল মিয়া লালু, সাবেক মেম্বার রফিক আহমদ, মোঃ নূরুজ্জামান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শাহনুর হোসাইন, লামাকাজী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল রব, প্রচার সম্পাদক মোক্তার আলী, ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি ফয়ছল আহমদ, ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ সভাপতি শহিদ খান আতা, সাধারণ সম্পাদক জহির উদ্দিন প্রমুখসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার ব্যক্তিবর্গ।
এর আগে শাপলার লাশ তার পিত্রালয়ে পৌঁছানোর পর সেখানে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। নিহতের আত্মীয়-স্বজনদের কান্নায় বেদনাবিধুর হয় আশপাশের পরিবেশ। একমাত্র সন্তানকে চিরতরে হারিয়ে চিৎকার করে কান্না করতে গিয়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন শাপলার মা জাহানারা বেগম।
সাংবাদিকদেরকে স্বামীর হাতে খুন হওয়া শাপলার মা জাহানারা বেগম জানান, ‘গত ৪ জুন শনিবার শাপলার একমাত্র মেয়ে শাহিদা বেগম ফারিহার জন্মদিনের রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় শাপলাকে গলাটিপে খুন করে তার পাষণ্ড স্বামী আবদাল হোসেন। শাপলা খুন হওয়ার পর সেখানকার পুলিশ আবদালকে গ্রেপ্তার করে এবং আবদালও খুনের দায় স্বীকার করে। ফারিহার জন্মদিন পালন করতে সেদিন আবদাল শাপলার নিউজার্সির বাসায় গিয়েছিল।’
কান্নাজড়িত কণ্ঠে জাহানারা বেগম আরও জানান, ‘আমাদের প্রতিবেশী সমুজ আলীর পুত্র আবদাল হোসেনের সাথে ২০১৫ সালের ২৮ জানুয়ারি পারিবারিকভাবে শাপলার বিয়ে হয়। আর ২০১৭ সালে শাপলা যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমায়।
কিন্তু শুরু থেকেই আমার মেয়েকে মেনে নিতে পারেননি আবদালের মা মিনারা বেগম ও বড় ভাই আক্তার।
তারা সেখানে আমার মেয়েকে অবিরত মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করতো। বাংলাদেশ থেকে তাদেরকে ইন্ধন যোগাতো একই গ্রামের আঞ্জব আলীর পুত্র সুজন। খুন করার কিছুদিন পূর্বেও একবার শাপলাকে মারপিট করেছে আবদাল। আমার মেয়ে তার (স্বামীর) যন্ত্রণায় নিউজার্সি শহরে মেয়েকে নিয়ে একা থাকতো। আর আবদাল থাকতো তার মা-বাবার সাথে মিশিগান শহরে।
আমার মেয়ের কাছে থাকা সব টাকা-পয়সা আবদাল কেড়ে নিয়েছিল। ফোনে কথা হলে শাপলা কান্নাকাটি করে আমাকে বলতো, আবদাল পরকীয়া প্রেমে আসক্ত হয়ে পড়েছে। মেয়েদের সাথে ধারণ করা তার বিভিন্ন ধরণের ভিডিও শাপলাকে দেখিয়েই ফোন থেকে মুছে ফেলতো আবদাল।’ মেয়ের হত্যাকারী ও হত্যাকান্ডের পেছনের ইন্ধনদাতাদের শাস্তির জন্যে যুক্তরাষ্ট্র সরকার, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আকুল দাবি জানান শাপলার মা।



