পদ্মা সেতু : সংসদে রুমিন ফারহানার ‘সোনার টয়লেটের’ গল্প
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ জুন ২০২২, ১১:২৪:০৭ অপরাহ্ন
অনুপম নিউজ ডেস্ক : পদ্মা সেতু প্রকল্পে লুটপাটের সর্বোচ্চ চর্চা করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি থেকে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা। বিএনপি নেত্রী বলেন, দেশে এখন উন্নয়ন অস্বীকার করার আইন করা প্রয়োজন। কারণ, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টও সরকারকে নিরাপত্তা দিতে পারছে না। তাই হলোকাস্ট ডিনায়াল অ্যাক্টের মতো উন্নয়ন অস্বীকার আইন করার পরামর্শ দেন রুমিন, যার মাধ্যমে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সমালোচকদের জেলে পুরে দেয়া আরও সহজ হবে।
বুধবার (৮ জুন) সংসদে পদ্মা সেতুর ওপর সাধারণ আলোচনায় এসব কথা বলেন তিনি।
রুমিন ফারহানা বলেন, সংসদটা অতিরিক্ত মিষ্টি হয়ে গেছে। বেশি মিষ্টি স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো নয়। সে জন্য আমি কিছু তেতো সত্য কথা বলব। যাতে অন্তত ভারসাম্যটা রক্ষা হয়। আর সেইসঙ্গে প্রদীপের নিচে অন্ধকারের দিকেও যেন আমরা একটু তাকাতে পারি।
তিনি বলেন, আমার বক্তব্যের শুরুতেই আমি একটি গল্প বলব। লিথুনিয়ার কৌনাস পৌরসভার মেয়র একটি শিপিং কনটেইনারের মধ্যে টয়লেট নির্মাণ করেছিলেন দেড় কোটি টাকার বিনিময়ে। কাছাকাছি একটি টেনিস ক্লাব একই ধরনের টয়লেট বানায় মাত্র সাড়ে চার লাখ টাকা খরচ করে। মেয়রের ওই টয়লেট নির্মাণের অবিশ্বাস্য খরচের কারণে মানুষ মজা করে সেই টয়লেটকে বলতেন, সোনার টয়লেট। একই রকম কিংবা একটু বেশি দৈর্ঘ্যের অন্যান্য সেতুর সঙ্গে পদ্মা সেতুর বর্তমান ব্যয় তুলনা করলে, পদ্মা সেতুকে আমরা বলতেই পারি, আমাদের সোনার সেতু। যৌক্তিকভাবে অনুমান করি, কৌনাস সোনার টয়লেট মামলার পাশাপাশি বাংলাদেশ সোনার সেতু মামলাও দুর্নীতির উদাহরণ হয়ে থাকবে।
এ সময় পদ্মা সেতুর সঙ্গে ভারতের কয়েকটি সেতুর নির্মাণ ব্যয়ের কথা তুলে ধরেন রুমিন ফারহানা। বলেন, পদ্মা বহুমুখী সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল ২০১১ সালে। শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৩ সালে। মূল প্রকল্পের পরিকল্পনা করে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২০০৭ সালে। সেই সময় ১০ হাজার ১৬১ কোটি টাকার বহুল আলোচিত পদ্মা প্রকল্প পাস হয়। পরে দুর্নীতির অভিযোগে যখন বিশ্বব্যাংক চলে যায়, তখন আওয়ামী লীগ পদ্মা সেতুর ভার নেয়। এরপর দফায় দফায় এর মেয়াদ বাড়ে। অর্থ বেড়ে সেটা ৩০ হাজার কোটি টাকা হয়। ভারত, চীন, মালয়েশিয়া, ব্রুনাইয়ের মতো দেশে প্রতি কিলোমিটার সেতু তৈরিতে খরচ পড়ে ৫০০ থেকে ৭০০ কোটি টাকা। বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক শামসুল হকের মতে, আমাদের মতো দেশে প্রতি কিলোমিটার শুধু সড়ক ব্যয় ৫০০ কোটি আর রেল সেতুসহ ৭০০ কোটি হতে পারে। তবে নদীর জটিল ভূপ্রকৃতি বিবেচনায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে এটা দ্বিগুণও হতে পারে। অর্থাৎ, রেল সেতুসহ সর্বোচ্চ ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা প্রতি কিলোমিটার হতে পারে। অথচ পদ্মা সেতুর নির্মাণ ব্যয় প্রতি কিলোমিটার ৫ হাজার কোটি টাকা।
ফারহানা বলেন, ‘আমরা যদি ঘরের পাশে ভূপেন হাজারিকা সেতুর দিকে তাকাই, ৯ কিলোমিটার এই সেতুর নির্মাণ ব্যয় ১ হাজার ১০০ কোটি রুপি। অর্থাৎ, ভারতে একটা পদ্মা সেতু নির্মাণ ব্যয় দিয়ে ৩০টি ভূপেন হাজারিকা সেতু নির্মাণ সম্ভব। ভারতের কাচ্চি দরগা থেকে বিদুপুর পর্যন্ত গঙ্গা নদীর ওপারে ৬ লেনবিশিষ্ট ১০ কিলোমিটারের যে সেতু নির্মিত হচ্ছে, সেই সেতুর খরচ হচ্ছে ৩ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ, একটা পদ্মা সেতুর ব্যয়ে ভারতে ১০টি সেতু নির্মাণ সম্ভব। লুটপাট আর কাকে বলে!
বিএনপির এই সংসদ সদস্য বলেন, শুরুতে যখন পদ্মা সেতুর পরিকল্পনা নেয়া হয়, তখন রেল পরিকল্পনা ছিল না। কিন্তু পরে আওয়ামী লীগ এতে রেল যুক্ত করে এবং দাম বেড়ে হয় ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২১ হাজার ৩৬ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে এক্সিম ব্যাংক অব চায়না। বাকিটা দেশের টাকা।
সেতুতে রেল যোগাযোগের অন্যতম কারণ ছিল পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দরের সংযোগ উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকার বহু টাকা নয়ছয় করে পায়রাকে আর গভীর সমুদ্রবন্দর করেনি। সুতরাং রেল কনটেইনার পরিবহনের যে পরিকল্পনা হয়েছিল, সেটিও হচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বলছেন, রেলসেতু আর লাভজনক নয়।
তিনি আরও বলেন, পদ্মা সেতু এমনই এক গোল্ডেন সেতু, যার পরতে পরতে কেবল দুর্নীতি আর দুর্নীতি। ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের ৫৫ কিলোমিটার নির্মাণ হচ্ছে সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকায়। অর্থাৎ প্রতি কিলোমিটার ২০০ কোটি টাকার বেশি।
বিশ্বব্যাংকের ঋণ সরকার না নেয়ার কারণ হিসেবে রুমিন দাবি করেন, বিশ্বব্যাংকের ঋণ নিলে জবাবদিহি থাকতে হয়। কিন্তু এই সরকার হরিলুট করেছে, সেটা তাদের থেকে ঋণ নিলে সম্ভব হতো না। যতই অস্বাভাবিক হোক, সেটা নিয়ে প্রশ্ন তোলার জো নেই। আজ সংসদের পরিবেশের দিকে তাকালে মনে হয়, কী বীভৎস, অসহিষ্ণু এক সংসদ।




