সিলেটের বন্যা: ৫৩৬ কিলোমিটার সড়ক এখনও পানির নিচে
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ মে ২০২২, ৮:৩২:২৯ অপরাহ্ন
বিশেষে প্রতিনিধি : সিলেটের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও জেলার ৫৩৬ কিলোমিটার সড়ক এখনও পানির নিচে রয়েছে বলে জানা গেছে।
সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক), সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটি বন্যায় নগরীর ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণ, তালিকা প্রণয়ন ও করণীয় বিষয়ে প্রতিবেদন তৈরি করবে। এ কমিটির যৌথ প্রস্তাবনা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
নগরীর বন্যা পরিস্থিতিতে গতকাল রোববার সব দপ্তর-সংস্থা ও অংশীজনকে নিয়ে নগরীর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিসিকের আয়োজনে নগর ভবনের সম্মেলন কক্ষে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে নির্দেশনা দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিলেট-১ (সদর-নগর) আসনের সংসদ সদস্য ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
সিলেটের এবারের বন্যায় সড়ক সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দু’দিন ধরে পানি কমে এলেও এখনও অনেক সড়ক পানির নিচে রয়েছে। ফলে পূর্ণাঙ্গ ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণ করত পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
প্রাথমিকভাবে সিসিক, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এবং সড়ক ও জনপথের (সওজ) ৫৩৬ কিলোমিটার সড়ক পানির নিচে রয়েছে বলে জানা গেছে। বন্যার পানি নামলেও এসব সড়ক সংস্কারে লাগবে প্রচুর সময়। সংশ্লিষ্টরা জানান, ডুবে যাওয়া সড়কের মধ্যে সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রায় আড়াইশ কিলোমিটার, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের ২৩০ কিলোমিটার এবং সড়ক ও জনপথের (সওজ) আওতাধীন আটটি সড়কের ৫৫ কিলোমিটার বন্যাপ্লাবিত। এর মধ্যে অনেক সড়কে যানবাহন চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে।
সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান বলেন, সিসিক এলাকার ৫০০ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। ২৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৫টি ওয়ার্ডের প্রায় আড়াইশ কিলোমিটার সড়কে বন্যার পানি উঠে গেছে। এসব সড়কের অনেক স্থানে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। সড়কের পাশের বৈদ্যুতিক খুঁটি থাকায় এসব সড়ক অনেকটা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, পানি নামলেই দ্রুততম সময়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করে কাজ শুরু করা হবে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী এনামুল কবির জানান, তাদের আওতাধীন সিলেট জেলার ১০টি উপজেলার ৬৬টি সড়কের ২৩০ কিলোমিটার পানির নিচে। এসব সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় জেলা ও উপজেলা সড়কের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন রয়েছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, সড়ক ও জনপথের ৫৫ কিলোমিটার সড়ক পানিতে তলিয়ে গিয়ে অনেক স্থানে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
সিলেটে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও উপদ্রুত এলাকায় মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে। নগরীর উপদ্রুত বেশিরভাগ বাসাবাড়ির পানি নেমে গেলেও ময়লা-আবর্জনার পচা দুর্গন্ধে নাভিশ্বাস অবস্থা। এক সপ্তাহ ধরে পানিতে নিমজ্জিত বাসাবাড়ির অনেক আসবাবপত্র নষ্ট হয়েছে। উপজেলা পর্যায়ে অনেক এলাকা এখনও প্লাবিত রয়েছে। সুরমা নদীর পানি কমার প্রবণতা অব্যাহত থাকলেও কানাইঘাট পয়েন্টে ৪ সেন্টিমিটার বেড়েছে। সব পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে সুরমা।
অন্যদিকে, কুশিয়ারা নদীর পানি বাড়ায় ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ উপজেলায় নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। তবে সিলেটে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী নিলয় পাশা বলছেন, বন্যা পরিস্থিতির আর খুব একটা অবনতি হওয়ার আশঙ্কা নেই। চার-পাঁচ দিনের মধ্যে বেশিরভাগ এলাকা থেকেই পানি নেমে যাবে।
সাম্প্রতিক বন্যায় জেলায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কৃষি ও মৎস্য চাষের সঙ্গে সম্পৃক্ত মানুষ। আকস্মিক বন্যায় বোরো ফসল, আউশের বীজতলা ও গ্রীষ্মকালীন সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বন্যায় পানিবাহিত রোগের প্রকোপ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. এসএম শাহরিয়ার। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে শতাধিক লোক ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার তথ্য আমরা পেয়েছি। চর্মরোগও বাড়ছে। পানি কমলে রোগবালাই আরও বাড়তে পারে আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, পানিবাহিত রোগ যাতে ছড়িয়ে না পড়ে এ জন্য এরই মধ্যে ১৪০টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। তারা বিভিন্ন উপজেলায় বন্যার্তদের সেবায় কাজ করছে।
সুরমার পানি কিছুটা কমলেও টানা বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে সিলেটের বিশ্বনাথের লামাকাজী, খাজাঞ্চী ও অলংকারীর পর এবার দৌলতপুর ও দশঘর ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এরই মধ্যে উপজেলার তিনটি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ১১২টি ঘর, ৯২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ অসংখ্য ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। সব মিলিয়ে প্রায় ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। অন্যদিকে, সুরমার ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে উপজেলার লামাকাজী ইউনিয়নের মাহতাবপুর গ্রামের ১৬টি পরিবারের বসতভিটা।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার শতাধিক গ্রাম, চারটি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৩০০ বসতঘর, অসংখ্য রাস্তাঘাট, ৬৯টি প্রাইমারি, ১৫টি হাইস্কুল ও ১০টি মাদ্রাসা বানের পনিতে তলিয়ে গেছে। বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে গবাদি পশুসহ আশ্রয় নিয়েছেন বানবাসি মানুষ।




