সিলেটের কৈলাসটিলার গ্যাস জাতীয় গ্রিডে নিয়মিত সরবরাহ শুরু
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ মে ২০২২, ২:১০:৩১ অপরাহ্ন
এ কূপের ১২টি স্তরে তেল ও গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনার কথা জানায় বাপেক্স। এর মধ্যে চারটিতে তেল, একটিতে তেল-গ্যাস আর বাকি সাতটিতে গ্যাস মজুতের ধারণা

বর্তমানে দেশের ২২টি গ্যাসক্ষেত্র থেকে প্রায় ২৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন হয়
সিলেট অফিস : সিলেটের গোলাপগঞ্জের কৈলাশটিলা গ্যাসক্ষেত্রের ৭ নাম্বার কুপ থেকে জাতীয় গ্রিডে নিয়মিত গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়েছে।
শনিবার (১৪ মে) সকাল ১১ টা থেকে সিলেট গ্যাস ফিল্ডের আওতাধীন এ গ্যাসফিল্ড থেকে গ্যাস সরবরাহ শুরু হয় বলে জানিয়েছেন সিলেট গ্যাস ফিল্ডের মহাব্যাপস্থাপক (পরিচালন) প্রকৌশলী আব্দুল জলিল প্রামানিক। তিনি বলেন, আজ থেকে এই কুপ হতে প্রতিদিন ১৯ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হবে জাতীয় গ্রিডে।
শনিবার সকালে জ্বালানী মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাহবুব হোসেন গ্যাস সরবরাহের উদ্বোধন করেন।
এর আগে গত ৭ মে থেকে এই কুপ হতে পরীক্ষামূলক গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়। তা সফল হওয়ায় আজ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সরবরাহ শুরু হল।
কৈলাশটিলা ৭নং কূপ থেকে ২০১৬ সালের দিকে গ্যাস উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। এরপর এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে সিলেট গ্যাস ফিল্ড কর্তৃপক্ষের হয়ে কূপটিতে ওয়ার্ক-ওভার শুরু করে রাষ্ট্রীয় তেল, গ্যাস অনুসন্ধানকারী প্রতিষ্ঠান বাপেক্স। ওয়ার্ক-ওভার কাজ শেষ হয় গত মাসের দিকে।
নানা পরীক্ষানিরীক্ষা শেষে জাতীয় গ্রিডে এই কুপ থেকে গ্যাস সরবরাহ শুরু করা হয় বলে জানিয়েছেন বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী।
এখন এই কূপ থেকে ২৮০০ পিএসআই-তে গ্যাস উৎপাদন হচ্ছে বলে জানান তিনি। বর্তমানে দেশের ২২টি গ্যাসক্ষেত্র থেকে প্রায় ২৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন হয়।
সিলেট গ্যাস ফিল্ড লিমিটেডের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ২০১০-১২ সালে বাপেক্সের কারিগরি সহায়তায় সিলেটের গোলাপগঞ্জের কৈলাশটিলা, জৈন্তাপুরের হরিপুর ও হবিগঞ্জের রশিদপুর গ্যাস ক্ষেত্রে নতুন করে ত্রিমাত্রিক ভূতাত্ত্বিক (থ্রিডি সাসমিক) জরিপ চালানো হয়। জরিপ চালিয়ে কৈলাশটিলা গ্যাস ক্ষেত্রের ৭ নম্বর কূপে তেল ও গ্যাস মজুতের সম্ভাব্যতা পায় বাপেক্স। জরিপে এ কূপের ১২টি স্তরে তেল ও গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনার কথা জানায় বাপেক্স। এর মধ্যে চারটিতে তেল, একটিতে তেল-গ্যাস আর বাকি সাতটিতে গ্যাস মজুতের ধারণা করা হয়।
এমন সম্ভাবনা পাওয়ায় দেশের প্রথম তেল খনি হিসাবে ঘোষণা করে প্রধানমন্ত্রী ২০১৩ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর গোলাপগঞ্জ সফরকালে এ কূপটির খনন কাজের উদ্বোধন করেন। ২০১৪ সালের ১৭ অক্টোবরে শুরু হয় পুরোদমে খনন কাজ। ২০১৫ সালের ৮ মার্চ খনন কাজ শেষে একটি স্তরে গ্যাসের সন্ধান পেলেও তেলের সন্ধান পায়নি বাপেক্স। পরে ২০১৫ সালের ৫ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় গ্রিডে দৈনিক ৮ থেকে ১০ মিলিয়ন গ্যাস সরবরাহ শুরু হয় এ কূপ থেকে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে ২০১৬ সালের অক্টোবরে গ্যাস উত্তোলনের হার নেমে আসে ০.৫ মিলিয়ন ঘটফুটে। উত্তোলিত গ্যাস অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক না হওয়ায় ২ নভেম্বর এ কূপ থেকে গ্যাস উত্তোলন বন্ধ করে দেওয়া হয়।
২০২১ সালের এপ্রিলে সিলেট গ্যাস ফিল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসাবে যোগ দেন মো. মিজানুর রহমান। তিনি ড্রিলিং লগ বিষয়ে পারদর্শী হওয়ায় যোগদান করেই উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়া এ ৭নং কূপের তথ্য-উপাত্ত (লগ) নিয়ে কাজ শুরু করেন। লগ এনালাইসিস শেষে তিনি এ কূপের ৩০০০ মিটার গভীরতায় ৯ মিটার ব্যাপ্তি গ্যাস ও ২২৬৭ থেকে ২৩০০ মিটার গভীরতার স্তরে প্রায় ৩৩ মিটার ব্যাপ্তি গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা দেখেন। কিন্তু অর্থনৈতিকভাবে সুফল পেতে তিনি নিচের স্তরটিতে অর্থাৎ ৩০০০ মিটার গভীরতাকে বেছে নেন। পরেই রাষ্ট্রীয় তেল-গ্যাস অনুসন্ধানকারী প্রতিষ্ঠান বাপেক্সকে এই কূপে ওয়ার্কওভারের জন্য ঠিকাদার হিসাবে নিয়োগ করে সিলেট গ্যাস ফিল্ড। এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে বাপেক্সের বিজয়-১১ রিগ দ্বারা ওয়ার্ক ওভারের কাজ শুরু করে বাপেক্স।
২৪ ও ২৬ এপ্রিল ডিএসটির মাধ্যমে সফলভাবে ওয়ার্ক ওভারে কাজ শেষ হয়। নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে শনিবার রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে পরীক্ষামূলকভাবে জাতীয় গ্রিডে ১৯ মিলিয়ন ঘটফুট গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আরপিসের ধারণা মতে এ কূপটির এই স্তরে মজুত রয়েছে ৭৫৮ বিলিয়ন ঘটফুট গ্যাস। প্রতি হাজার ঘটফুট গ্যাস ১০ ইউএস ডলারে হিসাব করলে যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ৬৫ হাজার কোটি টাকা।




