আওয়ামী লীগের নতুন সাধারণ সম্পাদক তাহলে কে হচ্ছেন?
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ মে ২০২২, ৫:৩৩:৫৯ অপরাহ্ন
অনুপম প্রতিবেদক : আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে চলতি বছরের শেষে ডিসেম্বরে ঐতিহ্যবাহী এবং ৭৩ বছরের পুরনো দল, বর্তমানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন হওয়ার কথা। এ সম্মেলনকে কেন্দ্র করে তৃণমূল থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে। তবে এই সম্মেলনের চলমান কার্যক্রমে মধ্যে সব কিছু ছাড়িয়ে আলোচনার শীর্ষে রয়েছে সাধারণ সম্পাদক পদটি কে পাচ্ছেন।
দলটির গুরুত্বপূর্ণ এই পদে পরিবর্তন হবে কি না, যদি হয় তাহলে পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক কে হচ্ছেন- এটিই এখন নেতাকর্মীদের মাঝে আলোচনার মূল বিষয়।
আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আগামী ডিসেম্বরেই জাতীয় সম্মেলনের প্রস্তুতি নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে দলটি। এর আগে জেলাসহ তৃণমূল পর্যায়ের সব মেয়াদ উত্তীর্ণ সাংগঠনিক ইউনিটগুলোর সম্মেলনের কাজ চলছে। গত ২০১৯ সালের ২০ ও ২১ ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের সর্বশেষ অর্থাৎ ২১তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সে কারণে দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী চলতি বছরের ডিসেম্বরে বর্তমান কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের (কেন্দ্রীয় কমিটি) নির্ধারিত ৩ বছরের মেয়াদ শেষ হবে।
দলটির নেতাকর্মীদের ধারণা এবার সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তন আসবে। বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের (সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী) পর পর দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম (প্রয়াত) টানা দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালনের পর পরিবর্তন আসে। তার আগে দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে বেশ কয়েক বছর আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন করা সম্ভব হয়নি। তখন আব্দুল জলিল (প্রয়াত) দুই মেয়াদের সমান সময় দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
আওয়ামী লীগের আগামী সম্মেলনকে সামনে রেখে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দলের বেশ কয়েক জন নেতার নাম শোনা যাচ্ছে। তাদের সমর্থকদের মধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ে এসব নাম আলোচিত হচ্ছে। সেই সঙ্গে আলোচিত নেতারাও কাজের মধ্য দিয়ে তাদের যোগ্যতা তুলে ধরার চেষ্টা করছেন।
দেখা যাচ্ছে ১০ জনেরও বেশি নেতার নাম ঘুরেফিরে আলোচনায় আসছে। এর মধ্যে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক আছেন। এর আগেও তিনি আলোচনায় ছিলেন। সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রাহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী ও সাবেক সাংগঠনিক সম্পদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর নামও আলোচনায় রয়েছে। গত সম্মেলনেও খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর নাম আলোচনায় ছিল। দলীয় কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে আলোচনায় আছেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ এবং আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমও। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মণি, সাংগঠনিক সম্পদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, মির্জা আজম। এছাড়া জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নুর ই আলম চৌধুরী লিটনও আলোচনায় আছেন।
কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক তাকে নিয়ে একটি সংবাদ মাধ্যমে আলোচনা প্রসঙ্গে বলেন, ‘গঠনতন্ত্রিক ক্ষমতা বলে দলের প্রধান (শেখ হাসিনা) এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন। অতীত থেকে সেটা হয়ে আসছে। নাম আলোচনায় আসতেই পারে, কিন্তু আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি নেত্রীর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত’। তাছাড়া একটি টিভি চ্যানেলকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, ‘আমার প্রস্তুতি নেই, আমি প্রেসিডিয়াম সদস্য – একজন সাধারণ সদস্য। আমার সাধ্য অনুযায়ী আমি একজন তৎপর কর্মী আওয়ামীলীগের। আমি সততা আন্তরিকতার সাথে দলের জন্যে কাজ করি। আমি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হলাম কি হলাম না- সেটা আমার কাছে কোনো বিষয় না।’ দলের সভাপতি নির্বাচন প্রশ্নে ড. আব্দুর রাজ্জাক জানান, ‘এটা দলের কাউন্সিলাররা নির্বাচন করেন। তারা যদি মনে করেন আগামীতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দায়িত্ব পালনের সুযোগ দিবেন, সেটি সেভাবেই হবে। তাঁর যোগ্যতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। তিনি সঠিকভাবে জাতিকে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার পর থেকেই গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দলের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে’।
ওদিকে আলোচনায় শীর্ষে থাকা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা, দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক দলের সাধারণ সম্পাদক পদের যোগ্য কিনা – প্রশ্নের জবাবে একটি টিভি চ্যানেলকে গতকাল হাস্যোজ্বল মুখে বলেছেন, ‘আমি নিজেকে একদমই যোগ্য মনে করি না। এখানে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ নেই’। তিনি বলেন, ‘সভাপতি পদে কোনো পরিবর্তন আসবে না। আমরা কে কতটুকু যোগ্য অযোগ্য সেটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নেবেন। কী করলে দলটি ভাল চলবে তিনি ভাল জানেন, তিনিই সিদ্ধান্ত নেবেন। বাকী নেতৃত্বের পরিবর্তনও পুরোপুরি মাননীয় নেত্রীর সিদ্ধান্তের উপর নির্ভরশীল’।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এ ব্যাপারে বললেন একটি টিভি চ্যানেলকে যে, ‘যাদের নাম বিভিন্ন পদে উচ্চারিত হয়েছে, তাদেরকে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) ছোটবেলা থেকেই চেনেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বঙ্গবন্ধু কন্যার বিকল্প আমাদের দলে নেই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যখন আমাকে যে দায়িত্ব দিয়েছেন, সে দায়িত্ব আমি নিষ্ঠার সাথে পালন করার চেষ্টা করেছি। তিনি আমাকে দলের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব দিয়েছিলেন, আমি দশ বছর নিষ্ঠার সাথে সে দায়িত্ব পালন করেছি। আমাকে দলের প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব দিয়েছিলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমি দু’দফায় সাত বছর নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেছি। গত আড়াই বছর ধরে আমি দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালন করার চেষ্টা করছি।’
তিনি বলেন ‘কাজকে কেউ ভাল না বাসলে নিষ্ঠার সাথে কাজ করতে পারে না। যেকোনো কাজ, কাজের মধ্যে ডুবে যেতে হবে’।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ৪১ বছর ধরে দলের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি সবাইকে চেনেন। যিনি বা যারা যেকোনো পরিস্থিতিতে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে পারবেন, যিনি নেতাকর্মীদের কাছে গ্রহণযোগ্য – নেতাকর্মীবৎসল, তাকেই তিনি দলের গরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেবেন’।
তাছাড়া, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাহমান এ ব্যাপারে একটি মিডিয়াকে জানালেন, তাঁর চাওয়া পাওয়ার লোভ নেই। বললেন, ‘এই দলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বঙ্গবন্ধু কন্যা অপরিহার্য, আর কেউ অপরিহার্য না। তাঁর কাজের সুবিধার্থে, যিনি তাঁর নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে পারবে, যার দ্বারা দলের ভাল কাজ হবে, যার ভাল কন্ট্রিবিউশন আছে দলে, এ রকম জায়গা থেকেই তিনি হয়ত পছন্দ করবেন (সাধারণ সম্পাদক)। মাননীয় দলীয় প্রধান, তিনিই সিদ্ধান্ত নেবেন’।