টিপুকে খুন করতে ২ কোটি টাকার চুক্তি!
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ মার্চ ২০২২, ১২:১৫:৫৮ অপরাহ্ন
জাহিদুল ইসলাম টিপু
অনুপম নিউজ ডেস্ক : অস্ত্রধারীদের গুলিতে মতিঝিল আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের রহস্য উদ্ঘাটনে তৎপর পুলিশ। পুলিশের একটি সূত্র দাবি করেছে, টিপু হত্যায় দুই কোটি টাকার চুক্তি হয়েছে।
তথ্য মিলেছে কোটি টাকার বিনিময়ে টিপুকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার নেপথ্যে একজন সাবেক কাউন্সিলরসহ কয়েকজন মাঠ পর্যায়ে কাজ করেছে। জোড়া ওই হত্যকান্ডের ওই কাউন্সিলরসহ কয়েকজনকে আটক করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ডিবি। শনিবার (২৬ মার্চ) তাদের আটক করে ডিবি হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে।
২০১৬ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর মতিঝিল এজিবি কলোনীর ১৭-বি ভবনের সামনে দুর্বৃত্তরা গুলি করে যুবলীগ কর্মী রিজভী হাসান বাবু ওরফে বোচা বাবুকে খুন করে। এই খুনের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় পুলিশ ১০ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়। মামলাটি বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন। এই মামলাটি তুলে নিতে টিপুর ওপর চাপ প্রয়োগ করে আসামিরা। ব্যর্থ হওয়ার পর আসামিরা টিপুর প্রতিপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে। এই মামলায় আসামি ছিলেন যুবলীগ ১০ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি মারুফ রেজা সাগর। তিনি পানি সাগর নামে পরিচিত। এই মামলার চার্জশিটে টিপুর মধ্যস্থতায় সাগরের নাম বাদ দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, টিপু হত্যাকান্ডের সময় তাকে বহন করা মাইক্রোবাসের পিছনের সিটে বসেছিলেন বোচা বাবুর বাবা আবুল কালাম। তিনি টিপুর ঘনিষ্ট বন্ধু। মামলাটি তুলে নিতে টিপুর পাশাপাশি মামলার বাদী বোচা বাবুর বাবাকেও চাপ দেওয়া হয়।
এদিকে টিপু হত্যাকান্ডের পর ঘটনাস্থল থেকে সিআইডি’র ক্রাইম সিন আলামত সংগ্রহ করে পরীক্ষা-নীরিক্ষা করছে। সংগৃহীত আলামত পর্যালোচনা করে একজন কর্মকর্তা বলেছেন, এই খুনে ঘাতক নাইনএমএম (9mm) পিস্তল ব্যবহার করে। সেভেন পয়েন্ট সিক্স ফাইভ (7.65) ক্যালিবারের পিস্তলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ১৫টি গুলি করা যায়। ঘটনাস্থলের পাশের একটি ভবনের সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ গোয়েন্দারা পর্যবেক্ষণ করছেন। হত্যায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি শনাক্ত করেছে গোয়েন্দা সংস্থা।
মোটরসাইকেলের সূত্র ধরে বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ দুইজনকে আটক করেছে। তবে আটককৃতরা ডিবির প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে কিলিং মিশনে অংশ নেওয়ার কথা অস্বীকার করেছে। গোয়েন্দারা তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। তবে আটকের বিষয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কোন কর্মকর্তাই নিশ্চিত কোন তথ্য দেননি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ, রেলওয়ে, রাজউক, গণপূর্ত, কমলাপুর আইসিডি ও বিদ্যুৎ ভবনের টেন্ডারবাজির একক নিয়ন্ত্রণ নিয়ে টিপুর সঙ্গে একটি বড় গ্রুপের দ্বন্দ্ব হয়। এই গ্রুপটি হচ্ছে ২০১৩ সালের ২৯ জুলাই গুলশানে ‘শপার্স ওয়ার্ল্ড’ বিপণী বিতানের সামনে খুন হওয়া যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াজুল হক খান মিলকীর গ্রুপ। মিলকী হত্যা মামলার চার্জশিটে ১০ নম্বর আসামি জাহিদুল ইসলাম টিপুর নাম বাদ দেওয়া হয়। চার্জশিটে যুবলীগ নেতা মারুফ রেজা সাগর ওরফে পানি সাগরের নামও বাদ দিয়ে তার স্ত্রী ফাহিমা ইসলাম লোপার নাম দেওয়া হয়। মিলকী গ্রুপের প্রধান শেল্টারদাতা দুবাইয়ে আত্মগোপন করা তেইশ শীর্ষ সন্ত্রাসীর অন্যতম জিসান আহমেদ মন্টি ওরফে জিসান। টিপুর প্রতিপক্ষ গ্রুপটি জিসানের কিলার গ্রুপ দিয়ে ‘কিলিং মিশন’টি সম্পন্ন করায়। কিলিং মিশন সম্পন্ন করার পর পর্যায়ক্রমে ২ কোটি টাকা জিসানের কাছে পৌঁছে যাবে।
অন্যদিকে, টিপু খুনের পর মতিঝিল, পল্টন, শাহজাহানপুর ও খিলগাঁও এলাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডের বিভিন্ন গ্রুপে থমথমে বিরাজ করছে। টিপু চলে যাওয়ার পর বিশাল এলাকার হাজার হাজার কোটি টাকার টেন্ডারবাজির কমিশন কার হাতে যাবে-তা নিয়ে চলছে গোপন আলোচনা। বিদেশ থেকে বিভিন্ন অ্যাপসের মাধ্যমে কথোপকথন চলছে।
এদিকে, স্বামী টিপু হত্যার পর অজানা আতংকে ভুগছেন সংরক্ষিত মহিলা আসনের কাউন্সিলর ফারহানা ইসলাম ডলি।
তিনি বলেন, ‘‘ঘটনার দিন সকালে বাসা থেকে বের হওয়ার সময় তার স্বামী তাকে বলেছিলেন, ‘ডলি আমারে তো মাইরা ফেলব।’ আতংকে আছি।’’ সূত্র : ইত্তেফাক ও সংবাদ




