যাত্রীদের ক্ষোভ : কুয়ালালামপুর-ঢাকা রুটে ভাড়া কমানোর দাবি
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ০১ মার্চ ২০২২, ১:১৩:১৪ অপরাহ্ন
আহমাদুল কবির , মালয়েশিয়া: কুয়ালালামপুর-ঢাকা রুটে, আকাশপথে টিকিটের দাম দেড় থেকে দ্বিগুণ বেড়ে যাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রবাসীরা। কি শ্রমিক কি ব্যবসায়ী সবাইকে গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া।
ভাড়া বাড়ানো হয়েছে তুঘলকি কায়দায়। সিট নেই, যাত্রীর চাপ বেশি এসব কারণ দেখিয়ে এ রুটের প্রবাসীদের পকেট কাটা হচ্ছে। টিকিটের ওপর চাপ পড়বেই-এমনটি নিশ্চিত হয়ে অপেক্ষায় থাকেন কর্তৃপক্ষ। তবে শুরুতেই আকাশপথের বুকিং শেষ হয়ে যায়। শুধু তাই নয়, অবৈধ কর্মীদের দেশে ফেরার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ইতোমধ্যে বিক্রি হয়ে যায় কাঙ্খিত তারিখের ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ টিকিট। এই সুযোগে উড়োজাহাজগুলো ভাড়া বাড়িয়েছে দেড় থেকে দ্বিগুণ।
জানা গেছে, যাওয়া-আসার ১১০০ রিঙ্গিতের টিকিট এখন কুয়ালালামপুর থেকে শুধু বাংলাদেশে যাওয়ার (ওয়ানওয়ে) টিকিট বিক্রি হচ্ছে ১৫০০-২০০০ রিঙ্গিতে। তাও মিলছে না। আকাশপথের টিকিটের এত দাম বৃদ্ধি কেন-জানতে চাইলে সংশ্লিষ্টরা কেউ মুখ খুলতে রাজি হননি। ট্রাভেল এজেন্টরা বলছেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও সংশ্লিষ্টদের তদারকি না থাকায় খেয়াল খুশিমতো ভাড়া বাড়াচ্ছে এয়ারলাইন্সগুলো।
মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত বিভিন্ন দেশের অবৈধ অভিবাসীদের নিজ দেশে যাওয়ার চলতি বছরের ৩১ জুন পর্যন্ত সুযোগ দিয়েছে দেশটির সরকার। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে ও চলমান করোনার দোহাই দিয়ে আকাশ পথের ভাড়া বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে বলে মনে করছেন প্রবাসীরা।
এদিকে স্বল্পমূল্যে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কোনো রূপ হয়রানি ছাড়া ফ্লাইট টিকিট দিয়ে সহযোগিতা করার জন্য ফ্লাইট পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে আহ্বান জানিয়েছেন মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার মো: গোলাম সারোয়ার। প্রবাসীরা যাতে ফ্লাইট টিকিট সহজে স্বল্পমূল্যে ক্রয় করতে পারে তা নিশ্চিত করার আহবান জানিয়েছেন তিনি।
তবে প্রবাসীরা বলছেন, ভাড়া কত নেয়া হচ্ছে বা কত বাড়তে পারে তা নিয়ে প্রতি মুহূর্তে তদারকি করা প্রয়োজন। তাদের অভিযোগ, সংশ্লিষ্টদের আচরণ দেখে মনে হয় কৃত্রিম সংকট তৈরি করেই বাড়তি অর্থ আদায় করা হচ্ছে।
ট্র্রাভেলস এজেন্সিতে আসা যাত্রীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, চাহিদার তুলনায় উড়োজাহাজগুলোর ফ্লাইট কম থাকায় অধিকাংশ আসনের টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। অবিক্রিত যা আছে তার জন্য গুনতে হচ্ছে দ্বিগুণ মূল্য। প্রবাসী রতন মিয়া বলেন, শুধু বাংলাদেশে ‘যাওয়ার টিকিটই ২০০০ রিঙ্গিতে কেনা লাগছে।’
ট্রাভেল এজেন্টরা বলছেন, অতিরিক্ত মুনাফা না করে ঘরমুখো প্রবাসীযাত্রীদের জন্য ছাড় দেয়া উচিত বিমান সংস্থাগুলোর। কিন্তু ঘটছে উল্টো।
সবকটা এয়ারলাইন্সই টিকিটের দাম বাড়িয়েছে তাদের খেয়াল-খুশি মতো। এদের নিয়ন্ত্রণ করা ও দেখভাল করার কেউ নেই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউএস-বাংলার সহকারী ম্যানেজার (মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস) মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘কম ভাড়ার টিকিট অনেক আগেই বিক্রি হয়ে যায়। ফলে শেষ মুহূর্তে এসে কেউ টিকিট কাটতে গেলে সর্বোচ্চ ভাড়ার টিকিটই মিলবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইউএস-বাংলায় টিকিট কাটলে একটা টিকিটের মেয়াদ এক মাস, ছয় মাস ও একবছর থাকে। এ সময়ের মধ্যে বিক্রিত টিকিটের তারিখ আগে বা পরে পরিবর্তন করার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু অন্যান্য এয়ারলাইন্সের এই সিস্টেম নেই। যে তারিখের টিকিট সে তারিখেই ফ্লাইট করতে হবে। এ ছাড়া কেউ যদি ফ্লাইট মিস করে পুনরায় ওই টিকিটে যাতায়াত করতে পারবে না। কিন্তু এ সুযোগটা ইউএস-বাংলায় রয়েছে। ফ্লাইট মিস করলে পরবর্তী ফ্লাইটে যাত্রী যাওয়ার সুযোগ রয়েছে।’
অভিযোগ উঠেছে, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কুয়ালালামপুর রুটের টিকিট শেষ হয়ে গেছে। কোনো টিকিটই নেই। একই অবস্থা অন্য এয়ারলাইন্সগুলোর।
অভিযোগের বিষয়ে বিমানের কান্ট্রি ম্যানেজার ইমরুল কায়েছের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এ দিকে মালয়েশিয়ার অভিবাসন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে রিক্যালিব্রেশন রিটার্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন শুরু হয়। সেই থেকে গত বছরের ২১ ডিসেম্বর মোট এক লাখ ৯২ হাজার ২৮১ জন অবৈধ অভিবাসী এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে স্বেচ্ছায় নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার জন্য নিবন্ধিত হয়েছেন।
নিবন্ধিতদের মধ্যে ইন্দোনেশিয়ার ৯৯ হাজার ৪৭, বাংলাদেশের ২৬ হাজার ৮২১ ও ভারতের ২৩ হাজার ৮৪৪ জন রয়েছেন। এ রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত মোট নিবন্ধিতদের মধ্যে এক লাখ ৬২ হাজার ৮২৭ জন অবৈধ অভিবাসী নিজ দেশে ফিরে গেছেন।
দেড় বছর আগে শুরু হওয়া রিক্যালিব্রেশন রিটার্ন কর্মসূচির অধীনে নথিবিহীন অভিবাসীদের বেশ কয়েকটি মানদন্ডের মাধ্যমে স্বদেশে ফিরে যাওয়ার সময়সীমা বাড়িয়েছে দেশটির সরকার। ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত এ সুযোগ বাড়ানো হয়।




