জগন্নাথপুরে প্রবাসীর স্ত্রীকে ছয় খণ্ড করার কারণ জানালো সিআইডি, গ্রেপ্তার ৩
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ৬:২১:৩৭ অপরাহ্ন
বিশেষ প্রতিনিধি : সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর পৌরশহরের মির্জা আব্দুল মতিন মার্কেটের ‘অভি মেডিকেল হলে’ প্রবাসীর স্ত্রীকে হত্যা করে ৬ খন্ড করার কারণ উদঘাটন করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
শনিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) ঢাকায় প্রেস ব্রিফিং করে বিস্তারিত জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত পুলিশের এ বিশেষ বাহিনীটি। দুপুরে সিআইডির সদর দপ্তরে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত বিবরণ দেন সিআইডির এলআইসি শাখার বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তাধর।
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে এ ঘটনায় সম্পৃক্ততার অভিযোগে তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গ্রেফতাররা হলেন- জগন্নাথপুরের যাদব চন্দ্র গোপের ছেলে অভি মেডিকেল হলের মালিক জিতেশ চন্দ্র গোপ (৩০), কিশোরগঞ্জের ইটনার মৃত রসময় চন্দ্র গোপের ছেলে অনজিৎ চন্দ্র গোপ (৩৮) ও নেত্রকোনার মোহনগঞ্জের পতিত পাবন গোপের ছেলে অসীত গোপ (৩৬)। রাজধানীর ভাটারার নুরের চালা এলাকা থেকে জিতেশকে এবং জগন্নাথপুর পৌর এলাকা থেকে অনজিৎ ও অসীতকে গ্রেফতার করা হয়।
শনিবার দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সংস্থাটির বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর।
শাহনাজ জগন্নাথপুরের নারকেলতলা গ্রামের সৌদি আরব প্রবাসী ছরকু মিয়ার স্ত্রী। লাশ উদ্ধারের দিনই জিতেশ চন্দ্র গোপের নাম উল্লেখ করে জগন্নাথপুর থানায় মামলা করেন শাহনাজ পারভীনের ভাই হেলাল আহমদ।
সিআইডি জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার আসামিরা সবকিছু স্বীকার করেছে।
গ্রেফতার আসামিদের স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে সিআইডি জানায়, ২০১৩ সাল থেকে জগন্নাথপুর পৌর এলাকায় নিজেদের বাসায় দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন শাহনাজ। তার স্বামী দীর্ঘদিন ধরে সৌদিপ্রবাসী। পরিবারের সব সদস্যের ওষুধ জিতেশের ফার্মেসি থেকে কিনতেন শাহনাজ। সেই সুবাদে জিতেশের সঙ্গে শাহনাজের সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। ভুক্তভোগী কিছুদিন ধরে গোপনীয় শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন। এ জন্য ১৬ ফেব্রুয়ারি বিকালে জিতেশের ফার্মেসিতে এলে শাহনাজকে ফার্মেসির ভেতরে প্রাথমিক চিকিৎসা কক্ষে বসিয়ে রাখা হয়। ভিড় কমলে তার সঙ্গে কথা বলে ওষুধ দেওয়া হবে বলে সময়ক্ষেপণ করা হয়।
এরমধ্যে জিতেশ তার বন্ধু মুদি দোকানদার অনজিৎ ও পাশের অরূপ ফার্মেসির মালিক অসীতকে ফার্মেসিতে অপেক্ষায় রাখা শাহনাজের বিষয়ে বললে তারা তাকে ধর্ষণের পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী, শাহনাজকে চিকিৎসার কথা বলে জিতেশ ঘুমের ওষুধ দেয়। ওষুধ খাওয়ার পর শাহনাজ সেখানেই ঘুমিয়ে যান। তাকে ফার্মেসির ভেতর রেখেই তালা দিয়ে চলে যান জিতেশ। সব দোকান বন্ধ হলে এবং রাত গভীর হওয়ার পর জিতেশরা পুনরায় তালাবদ্ধ ফার্মেসি খুলে ভেতরে এনার্জি ড্রিংকস পান করে। পরে তারা ভিকটিমকে দলবেঁধে ধর্ষণ করে।
এ সময় ধর্ষণের বিষয়টি শাহনাজ প্রকাশ করার কথা বললে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে জিতেশরা। তারা শাহনাজের পরনের ওড়না গলায় পেঁচিয়ে এবং বিশ্রামকক্ষে থাকা বালিশ দিয়ে মুখ চেপে ধরে হত্যা করে। পরে লাশটি ধারাল ছুরি দিয়ে মাথা, দুই হাত, দুই পা এবং বুক-পেটসহ ছয় টুকরা করে। দোকানে থাকা ওষুধের কার্টুন দিয়ে খণ্ডিত অংশগুলো ঢেকে রেখে ফার্মেসি তালা দিয়ে চলে যায় তারা।
সিআইডি জানায়, জিতেশদের পরিকল্পনা ছিল- সুবিধাজনক সময়ে শাহনাজের লাশের খণ্ডিত অংশগুলো মাছের খামারে ফেলে দেওয়ার। কিন্তু ভোর হয়ে যাওয়ায় এবং লোকজন চলে আসায় তারা সেই কাজটি করতে পারেননি।




