বসন্ত শুরু হল, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস আজ
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ৪:২২:৫৭ অপরাহ্ন
সারওয়ার চৌধুরী : শীতে শুকিয়ে যাওয়া প্রকৃতি ফের প্রাণবন্ত হওয়ার দিন শুরু। আজ ফাগুনের প্রথম দিন, আজ ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন। শুষ্কতা রুক্ষতা অপসারণ করে জেগে উঠছে প্রাণ চৌদিকে। ঋতুর এ পরিবর্তনের সময়টিতে প্রকৃতিতে আনন্দ এ কারণে যে মাঘের কনকনে শীতে জবুথবু অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসছে সকল প্রাণ। একই সাথে আজ ভালোবাসা দিবসও।
প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ত্রিশ কিলোমিটার বেগে নিজ কক্ষপথে ঘুরতে থাকা আমাদের পৃথিবী এখন যে অবস্থান অতিক্রম করছে, তাতে আমরা পাচ্ছি বসন্ত মৌসুম। গাছে গাছে নতুন পাতা, ফুলের মুকুল, বনে বনে পাখিদের গান; বাতাসে মিষ্টি ফুলের ঘ্রাণ। প্রজাপতিরা রঙিন ডানা মেলেে উড়ে উড়ে জানিয়ে দে বসন্ত এসেছে গো। ঋতুরাজ এ মৌসুম। তাই সাজ সাজ দৃশ্য চৌদিকে। এ মৌসুমের দিনগুলো অপার্থিব মায়াবী এক আবেশে জড়িয়ে রাখে ছোট বড় বৃক্ষ, লতা, পাখ-পাখালী আর মানুষকে। কেননা মন রাঙাবার মৌসুম বসন্ত; অতুলনীয় মায়া ছড়িয়ে দেবার মৌসুম বসন্ত।
বার্ষিক গতির চক্রে কক্ষপথে বিভিন্ন বিন্দুতে পৃথিবীর অবস্থান
ফাগুন শব্দটি ফাল্গুন শব্দের সহজ বা কাব্যিক রূপ। ফাল্গুন নামটি এসেছে ফাল্গুনী নামের নক্ষত্র থেকে। খ্রিষ্টপূর্ব ১৫০০ সালের দিকে চন্দ্রবর্ষ ও সৌরবর্ষ উভয়ই মেনে চলা হতো। ফাল্গুন ছিল পূর্ণ চন্দ্রের মাস। ১৯৫০-১৯৬০ দশকে আনুষ্ঠানিকভাবে পহেলা ফাল্গুন পালন শুরু হয়।
বসন্ত ভাষা ফোটায় প্রাণে প্রাণে তুমুল আনন্দে। কবি উজ্জীবিত হন এ মৌসুমে অতুলনীয় সৃজনের আনন্দে। এ মৌসুম জাগায় উদ্দীপনা নব রূপে। বসন্ত নিয়ে লেখা হয়েছে অনেক গান, কবিতা। কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের লিখেছেন ‘ফুল ফুটুক, আর না-ই ফুটুক আজ বসন্ত’। বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের ‘বসন্ত নিয়ে জনপ্রিয় একটি গান- ‘বসন্ত বাতাসে সই গো বসন্ত বাতাসে, বন্ধুর বাড়ির ফুলের গন্ধ আমার বাড়ি আসে সই গো, বসন্ত বাতাসে’। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন “আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে/তব অবগুন্ঠিত কুন্ঠিত জীবনে/কোরো না বিড়ম্বিত তারে।’ কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছেন, ‘বসন্ত এলো এলো এলোরে
পঞ্চম স্বরে কোকিল কুহুরে/মুহু মুহু কুহু কুহু তানে/মাধবী নিকুঞ্জে পুঞ্জে পুঞ্জে/ভ্রমর গুঞ্জে গুঞ্জে গুনগুন গানে’।
আমাদের জীবনে বসন্ত নিয়ে আসে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’। আত্মত্যাগের পরাকাষ্ঠা প্রদর্শনের মাস ফ্রেবুয়ারির ২১ তারিখ এ বসন্তকালেই প্রাকৃতিকভাবে গ্রন্থিত। এ বসন্তে ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাঙালির স্বাধীনতার বীজ রোপিত হয়েছিল। এ বসন্ত মৌসুমেই আমরা মুক্তিযুদ্ধ শুরু করেছিলাম। তাই বাঙালির জাতীয় ইতিহাসেও বসন্ত আসে এক বিশেষ তাৎপর্য নিয়ে।
দুই বছর আগে বাংলা বর্ষপঞ্জিতে সংশোধন করায় বাংলা ফাল্গুন মাসের প্রথম দিন আর ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস একই দিনে পড়ছে।
ভালোবাসা দিবসের ইতিহাস কি?
ইতালির রোম নগরে ২৬৯ সালে সেন্ট ভ্যালেন্টাইন নামে একজন খৃষ্টান পাদ্রী ও চিকিৎসক ছিলেন। ধর্ম প্রচারের অভিযোগে তৎকালীন রোম সম্রাট দ্বিতীয় ক্রাডিয়াস তাকে বন্দী করেন। কারণ তখন রোমান সাম্রাজ্যে খৃষ্টান ধর্ম প্রচার নিষিদ্ধ ছিল।
বন্দী অবস্থায় তিনি এক কারারক্ষীর অন্ধ মেয়েকে চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করে তোলেন। এতে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের জনপ্রিয়তা বেড়ে যায়। আর তাই তার প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে রাজা তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন। সেই দিন ১৪ ফেব্রুয়ারি ছিল। অতঃপর ৪৯৬ সালে পোপ সেন্ট জেলাসিউও ১ম জুলিয়াস ভ্যালেন্টাইন স্মরণে ১৪ ফেব্রুয়ারিকে ভ্যালেন্টাইন দিবস ঘোষণা করেছিলেন।




