সিলেটে শিশুসন্তানকে হত্যা করে মায়ের আত্মসমর্পণ থানায়
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১০:১৬:৫৭ অপরাহ্ন
সিলেট অফিস : সিলেটে সন্তানের পিতৃ পরিচয় নিয়ে স্বামী সন্দেহ করায় নিজের শিশুকে হত্যা করে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন এক মা। নাজমিন আক্তার (২৮) নামের ওই নারী শ্বাসরোধ করে তার ১৭ মাস বয়সি মেয়েকে হত্যা করেন। বুধবার দুপুরে শাহপরান এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত শিশুটির নাম সাবিহা আক্তার।
নাজমিন নগরের স্কলার্স হোম স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষিকা। পারিবাহিক কলহের জেরে সাবিহাকে বালিশ চাপা দিয়ে ও শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করেন বলে থানায় উপস্থিত গণমাধ্যম কর্মীদের জানান নাজমিন।
এসময় গণমাধ্যম কর্মীরা তার ছবি তুলতে গেলে নাজমিন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘মজা লাগতেছে, আমার মেয়ে মারা গেছে আপনাদের মজা লাগতেছে। যান প্রত্যেকটা ব্যক্তি যান। গিয়ে নিজের মেয়েকে খুন করে আসেন। ক্যামেরা অফ করেন। বলছি ক্যামেরা অফ করেন। আশ্চর্য একটা বিষয়।’
সাংবাদিকদের দিকে তেড়ে গিয়ে তিনি বলেন, ‘নতুন সাংবাদিক হইছেন। সাংবাদিক কী লেখাপড়া করে হইছেন। একটা প্রবলেম হইছে। এটা আগে সলভ হোক। একটা সমাধান আসুক তারপর আপনেরা আমার ছবি তুলেন। তুলে দেখান, এই নারী তার মেয়েকে হত্যা করছে। কিন্তু এখন এইগুলা কি? আমি তো এইগুলা নিতে পারছি না।’
ক্ষুব্ধ কণ্ঠে নাজমিন আরও বলেন, ‘এইগুলা করে কি খুব বেশি ইনকাম করে ফেলবেন। আপনাদের ইনকামের উপর গজব পড়বে। সাংবাদিকগিরি দেখাইতে আসছে।’
থানায় নাজমিন বলেন, আমি আমার মেয়েকে হত্যা করেছি, আমার ফাঁসি হোক’- থানায় বসে বলছিলেন নাজমিন জাহান (২৮)। নগরের স্কলার্স হোম স্কুলের শিক্ষক তিনি।
নাজমিন জানান, স্বামীর সাথে বিরোধের জেরে মেয়েকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করেন তিনি। মেয়ের কান্নার শব্দ শুনে প্রতিবেশিরা এগিয়ে এসে তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে আসেন।
বিকেলে হাসপাতাল থেকে নাজমিনকে কতোয়ালি থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। নাজমিনের স্বামী সাব্বির হোসেনকেও আটক করেছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সিলেটের দক্ষিণ সুরমার গোলাপগঞ্জ এলাকার নাজমিনের সাথে দক্ষিণ সুরমার বদলি এলাকার সাব্বির হোসেনের বিয়ে হয় ২০১৫ সালে। বিয়ের পর থেকে তারা শাহপরান এলাকায় থাকেন। নাজমিন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্কলার্সহোম স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষিকা ও তার স্বামী কাতার প্রবাসী।
এর আগেও একটি বিয়ে হয়েছিলো নাজমিনের। সেই সংসারে তার একটি সন্তান রয়েছে।
থানায় উপস্থিত গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে নাজমিন বলেন, বিয়ের পর আমার স্বামী বিদেশ চলে যায়। এরপর চার বছর পর দেশে ফিরে। কিন্তু বিদেশ থাকা অবস্থায় তিনি আমার ভরণ পোষণের দায়িত্ব নেননি। দেশে ফিরে আমাকে অনেক বুঝিয়ে আবার সংসার শুরু করেন তিনি। তখন আমি গর্ভবতী হই। আমাকে গর্ভবতী রেখেই তিনি আবার কাতার চলে যান।
নাজমিন অভিযোগ করে বলেন, বিদেশে গিয়ে সাব্বির অভিযোগ করেন আমার গর্ভের সন্তান তার নয়। আমি তখন ডিএনএ টেস্ট করার কথা বলি। কিন্তু সাব্বির ও তার তার পরিবার আমার বিরুদ্ধে কুৎসা রটাতে থাকে।
মেয়ের চেহারা অবিকল তার বাবার মতো হয়েছে জানিয়ে নাজমিন বলেন, সাব্বির ১৫ দিন আগে দেশে এসেছেন। কিন্তু একবারও মেয়েকে দেখতে আসেননি। বরং আমার বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার করছেন।
স্বামীর বিরুদ্ধে পরকীয়ার অভিযোগ এনে তিনি বলেন, আমার মেয়ে বড় হয়ে চরিত্রহীন পিতার সন্তান- এমন পরিচয় যাতে না দিতে হয়, তাই নিজের বিবেচনায় সাবিহাকে হত্যা করেছি।
নিজের মেয়েকে হত্যার দায় স্বীকার করে নাজমিন আরও বলেন, আমি কাউকে ফাঁসাবো না। সাব্বিরকেও ফাঁসাবো না। তাকে ফাঁসালেও সে কম শাস্তিতে পার পেয়ে যাবে। তার বিচার আল্লাহ করবেন। আমি আমার মেয়েকে খুন করছি। আমার ফাঁসি হোক।
ক্ষোভ প্রকাশ করে নাজমিন বলেন, হাসপাতালে সাব্বিরের ভাইকে পাইছিলাম। তাকে জুতা দিয়ে মারতে চাইছিলাম। মারতে পারলে শান্তি হতো। কিন্তু পারিনি।
পারিবাহিক কলহের জেরে সাবিহাকে গলা টিপে তার মা নাজমিন হত্যা করেন জানিয়ে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী মাহমুদ বলেন, নাজমিনকে আমরা থানায় নিয়ে এসেছি। তার স্বামীকেও আটক করেছি। ঘটনাটি যেহেতু শাহপরান থানা এলাকার তাই শাহপরান থানা পুলিশকে খবর দিয়েছি। তারাই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
নিহত শিশুর মরদেহ ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে বলে জানান ওসি।
বুধবার দুপুরে সিলেট নগরের শাহপরাণ এলাকায় নাজমিন তার শিশু কন্যাকে হত্যা করেন বলে জানায় পুলিশ। নিহত শিশুর নাম সাবিহা আক্তার। বিকেলে হাসপাতাল থেকে নাজমিনকে কতোয়ালি থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। নাজমিনের স্বামী সাব্বির আহমদকেও আটক করেছে পুলিশ।




