একুশে পদক পাচ্ছেন অভিনেতা মাসুম আজিজ
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ৭:৩৫:০০ অপরাহ্ন
মুরাদ হোসেন, পাবনা : শিল্পকলায় বিশেষ অবদান রাখায় ‘একুশে পদক-২২’-এ ভূষিত হলেন বরেণ্য নাট্যাভিনেতা, নাট্যরচয়িতা ও চলচ্চিত্র পরিচালক এবং পাবনার কৃতিসন্তান মাসুম আজিজ।
তার এ প্রাপ্তিতে পাবনায় সর্বস্তরের মানুষ আনন্দ প্রকাশ করছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আজকের টক অফ দ্যা টাউন তিনি। এ শুভ দিনে পাবনার বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব মহিউদ্দিন ভূঁইয়ার সংগৃহীত মাসুম আজিজের কিছু তথ্য :
১৯৫৩ সালের ২২ অক্টোবর পাবনা জেলার ফরিদপুর উপজেলার খাগড়বাড়িয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করা মাসুম আজিজ ১৯৭২ থেকে নাট্যচর্চা শুরু করে ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনে নাট্যশিল্পী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। ওই বছরই প্রয়াত আবু তাহেরের প্রযোজনায় বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রাচী নাটকের একটি মুখ্যচরিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে তাঁর টেলিভিশন অভিনয়ের শুরু। অদ্যাবধি তিনি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন টেলিভিশনসহ শিল্পের প্রায় প্রতিটি শাখায়।
১৯৮৫ সালে মাসুম আজিজ তালিকাভুক্ত হন বেতারে। একই সাথে নাট্যশিল্পী এবং নাট্যকার হিসেবে। তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনের একজন তালিকাভুক্ত নাট্যকার। ২০০৪ সালে উত্তম আকাশের পরিচালনায় ‘মমতাজ’ ছবিতে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে তিনি চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ করেন। ২০০৬ সালে প্রয়াত কাজী মোর্শেদের রচনা ও পরিচালনায় ‘ঘানি’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।
টেলিভিশনে অভিনয়ের জন্য ২০০০ সালে ‘একজন আয়নাল লস্কর’ নাটকে তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে মেরিল প্রথম আলো সমালোচনা পুরস্কার লাভ করেন। একই বছর ‘একজন আয়নাল লস্কর’ নাটকে অভিনয়ের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি (বাচসাস) পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া ‘বিরস গল্প’ নাটকে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি (বাচসাস) পুরস্কার এবং হুমায়ন আহমেদের ’২৪ ক্যারটম্যান’ নাটকে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে তিনি ঝিলিক চ্যানেল আই ঈদ অনুষ্ঠানমালা পুরস্কার লাভ করেন। ২০১১ সালে প্রয়াত খালিদ মাহমুদ মিঠুর রচনা ও পরিচালনায় ‘গহীনে শব্দ’ চলচ্চিত্রের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় অনুষ্ঠিত সাইলেন্ট রিভার ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল মাসুম আজিজকে শ্রেষ্ঠ অভিনেতার সম্মান দেয়। একই বছর ‘গহীনে শব্দ’ চলচ্চিত্রের জন্য তিনি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি (বাচসাস) পুরস্কার লাভ করেন।
সংগীত-ই ছিল মাসুম আজিজের প্রথম পছন্দ। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে তিনি সাংস্কৃতিক জীবন শুরু করেন সংগীত পরিচালক হিসেবে। ঘটনাচক্রে এক সময় তিনি জড়িয়ে পড়েন নাট্যচর্চায়। মঞ্চনাটক দিয়েই তাঁর নাট্যচর্চার শুরু। আজ অবদি তিনি মঞ্চকেই তাঁর সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মূল প্লাটফরম বলে মনে করেন। তিনি নাট্যদল ঢাকা পদাতিকের সদস্য হিসেবে বর্তমানেও মঞ্চ নিয়েই বেশিরভাগ সময় অতিবাহিত করেন।
আশির দশকে ঢাকার মঞ্চে বেশকিছু উল্লেখযোগ্য প্রযোজনায় তিনি মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করে ঢাকার দর্শকদের মন জয় করেন। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো- ড. জামিল আহমেদের পরিচালনায় নিকোলাই গোগোলের বিখ্যাত নাটক গভর্নমেন্ট ইনস্পেকটর এর বাংলা রূপান্তর ‘ইনস্পেকটর জেনারেল’, ‘রাক্ষস খোক্কস’, ‘বিষাদ সিন্ধু’; এসএম সোলায়মানের রচনা ও পরিচালনায় ‘এই দেশে এই বেশে’, ‘আমিনা সুন্দরী’।
মাসুম আজিজ নির্মাতা ও নাট্যকার হিসেবেও দক্ষতার প্রমাণ রেখেছেন। নাটক ও চলচ্চিত্র অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি নাটক রচনা ও পরিচালনা করেন। ১৯৮৫ সাল থেকে তাঁর নাটক পরিচালনা শুরু। চারপাশের মানুষ আর জীবন দেখে, জীবনের গভীরে প্রবেশ করে তিনি নাটক লিখতে শুরু করেন।
মাসুম আজিজের লেখা উল্লেখযোগ্য নাটক : কাকাতুয়া, ছেড়া তমশুক, সিন্ধু সারস, কদম আলী বয়াতি, ইতুনী, বিরস গল্প, হেলিকপ্টার, পাগলা ঘন্টা, আবদুল কুদ্দুস- একটি অসমাপ্ত গল্পের নায়ক, বাবলা কাঠের গলুই ইত্যাদি। মঞ্চ, টেলিভিশন আর চলচ্চিত্র নিয়েই তাঁর ব্যস্ততা। তিনি সরকারি অনুদানে ‘সনাতন গল্প’ নামে তারই রচনায় একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির অনুদানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোটোগল্প আপদ অবলম্বনে তাঁর নাট্যরূপ ও পরিচালনায় ‘আপদ’ নাটকটি এখন তাঁর দল ঢাকা পদাতিক থেকে মঞ্চস্থ হচ্ছে। এছাড়া মঞ্চের জন্য আরও কয়েকটি নাটকের প্রস্তুতি চলছে।
কদম আলী বয়াতি, বিরস গল্প, একজন আয়নাল লস্কর, উড়ে যায় বকপক্ষী, অচিন রাগিনী প্রভৃতি নাটকে মাসুম আজিজের সাবলীল অভিনয় এখনো দাগ কাটে দর্শকের মনে।
মাসুম আজিজের স্ত্রী সাবিহা জামানও একজন অভিনয়শিল্পী। ছেলে উৎস জামান বাবা-মায়ের মতো অভিনয়ের সাথে জড়িত এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)-এর স্থাপত্য বিভাগ থেকে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং করেছেন। মেয়ে প্রজ্ঞা আজিজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে সম্মানসহ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেছেন।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে শিল্পকলায় একুশে পদক পেয়েছেন পাবনার একই উপজেলার আরেক কৃতিসন্তান কাদেরী কিবরিয়া।