২ হাজার বছর আগের কম্পিউটার
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১০:৩১:৩০ অপরাহ্ন
অনুপম নিউজ ডেস্ক : গ্রিসের সিমি দ্বীপের এক দল স্পঞ্জ সংগ্রহকারী ডুবুরি অ্যান্টিকিথেরা দ্বীপের কাছে ১৯০০ সালে সমুদ্রের ৪৫ মিটার গভীরে ডুবে থাকা এক প্রাচীন রোমান জাহাজের সন্ধান পেয়েছিলেন।
সেই জাহাজের ধ্বংসাবশেষ থেকে উদ্ধার হয় বেশ কিছু দামি প্রত্নবস্তু। যার মধ্যে ছিল ব্রোঞ্জ ও মার্বেল পাথরের মূর্তি, রঙিন পাত্র, কাচের সরঞ্জাম, গয়না, প্রাচীন মুদ্রা ইত্যাদি। সেই সঙ্গে পাওয়া যায় এক রহস্যময় বস্তু, যা ঠিক কী, তা সেই ডুবুরিরা বুঝতে পারেননি। পরে ২০২১ সালে বিশেষজ্ঞরা জানান, অ্যান্টিকিথেরা থেকে প্রাপ্ত যন্ত্রটি আসলে একটি অ্যানালগ কম্পিউটার, যার কাজ ছিল ব্রহ্মাণ্ডের চরিত্র উদ্ঘাটন।
প্রত্নতত্ত্ববিদরা জানান, জাহাজটি রোডস থেকে রোমের দিকে যাচ্ছিল এবং সম্ভবত এতে বোঝাই সামগ্রীগুলি ছিল রোমানদের দ্বারা লুন্ঠিত। অনুমান, রোমান সেনাপতি সুল্লা এই সামগ্রীগুলি লুঠ করে ইটালির দিকে পাঠাচ্ছিলেন।
উদ্ধার করা রহস্যময় বস্তুটি নিয়ে বিভিন্ন সময় প্রত্নতত্ত্ববিদরা গবেষণা করেন। ১৯৫১ সালে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানের ইতিহাস বিশেষজ্ঞ ডেরেক জে ডি সোল্লা প্রাইস প্রত্নবস্তুটির নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। ১৯৭১ সালে প্রাইস ও নিউক্লিয়ার ফিজিক্সের বিশেষজ্ঞ শারাল্যাম্পোস কারাকালোস বস্তুটির এক্স রে এবং গামা রে প্রতিচ্ছবি তৈরি করেন। সেই সময়েও বোঝা যায়নি, যন্ত্রটি ঠিক কী কাজের জন্য নির্মিত হয়েছিল।
২০০৮ সালে বিশেষজ্ঞরা সিদ্ধান্তে আসেন, যন্ত্রটি করিন্থে নির্মিত। প্রাচীনকালে করিন্থের উপনিবেশ ছিল সাইরাকিউজ এবং বিখ্যাত গ্রিক দার্শনিক আর্কিমিডিস ছিলেন সাইরাকিউজের লোক। ধারণা করা হয়, যন্ত্রটির সঙ্গে আর্কিমিডিসের ঘরানার কোনও যোগাযোগ থাকা সম্ভব।
পরে ২০১৪ থেকে ২০১৭ এর মধ্যে বিস্তারিত গবেষণায় যন্ত্রটিতে গ্রিক ত্রিকোণমিতির প্রয়োগও লক্ষ করেন গবেষকরা।
২০২১-এ বিশেষজ্ঞরা জানান, অ্যান্টিকিথেরা থেকে প্রাপ্ত যন্ত্রটি আসলে একটি অ্যানালগ কম্পিউটার, যার কাজ ছিল ব্রহ্মাণ্ডের চরিত্র উদ্ঘাটন। ২০০০ বছর আগে গ্রিকরা সৌরজগতের পাঁচটি মাত্র গ্রহের অস্তিত্ব সম্পর্কে জ্ঞাত ছিলেন। এই যন্ত্রে সেই পাঁচটি গ্রহের গতিবিধি নির্ণয়ের ব্যবস্থা ছিল। তবে, কারা তৈরি করেছিলেন যন্ত্রটি তা অজানা রয়ে গেছে।
ওই বছর যন্ত্রটির কিছু অংশ আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে পুনর্নির্মাণ করা সম্ভব হয়। ইউনিভার্সিটি কলেজ লণ্ডন-এর গবেষকরা সেই অসাধ্যসাধনটি করে দেখান। বিভিন্ন গিয়ার-হুইল দ্বারা চালিত এই যন্ত্রে সূর্য, চাঁদ, বুধ, শুক্র, বৃহস্পতি, মঙ্গল ও শনি গ্রহের গতিপ্রকৃতি নির্ণয় করা যেত বলে তারা জানান।