ইসি গঠন : কয়েক দিনের মধ্যেই সার্চ কমিটি
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ জানুয়ারি ২০২২, ১০:২২:৫১ অপরাহ্ন
এই দুই জনের মধ্যে একজন নারীকে রাখার প্রস্তাব দেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। তার প্রস্তাবটি গৃহীত হওয়ায় সার্চ কমিটিতে রাষ্ট্রপতির মনোনীত দুই জন বিশিষ্ট নাগরিকের মধ্যে বাধ্যতামূলক একজন নারীকে রাখার বিধান যুক্ত করা হয়েছে পাশ হওয়া বিলে
অনুপম নিউজ ডেস্ক : বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) সংসদে দীর্ঘ প্রায় তিন ঘণ্টা বিতর্কের পর কিছু সংশোধনীসহ ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল-২০২২’ কণ্ঠভোটে পাশ হয়েছে। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বিলটি পাশের জন্য উত্থাপন করলে দীর্ঘ প্রায় তিন ঘণ্টা বিতর্কের পর এটা সংসদে গৃহীত হয়। বিলটি পাশের পর সংসদে উপস্থিত থাকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারদলীয় সংসদ সদস্যরা টেবিল চাপড়ে অভিনন্দন জানান।
কয়েক দিনের মধ্যেই সার্চ কমিটি
বিলটি সংসদে পাশের পর এখন রাষ্টÌপতি মো. আবদুল হামিদ তাতে সম্মতি দিলেই সেটি আইনে পরিণত হবে। ধারণা করা হচ্ছে, আজকালের মধ্যেই বিলটিতে রাষ্ট্রপতি স্বাক্ষর করবেন, এরপর গেজেট প্রকাশ হবে। এই আইনের অধীনেই কয়েক দিনের মধ্যে রাষ্ট্রপতি ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করবেন। সার্চ কমিটির সুপারিশের পর দেশে প্রথম বারের মতো আইন অনুযায়ী নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে দেবেন রাষ্ট্রপতি।
যেসব সংশোধনী গৃহীত
বিলের ওপর আনা কিছু সংশোধনী সংসদে গৃহীত হয়েছে। এর মধ্যে দুটি ছিল আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির করা সুপারিশ। বাকিগুলো হয়েছে গতকাল সংসদে কয়েক জন সংসদ সদস্যের আনা প্রস্তাবের ভিত্তিতে। বিলের শিরোনামেই পরিবর্তন আনা হয়েছে। পাশের জন্য আইনমন্ত্রীর উত্থাপিত বিলের শিরোনাম ছিল, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল-২০২২’। সংসদে সংশোধনী প্রস্তাব গ্রহণের মাধ্যমে এখন নাম হবে ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল-২০২২’।
বিলে বলা ছিল, ‘রাষ্ট্রপতি ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করবেন।’ এর মধ্যে বিশিষ্ট নাগরিকদের মধ্য থেকে দুই জনকে মনোনয়ন দেবেন রাষ্ট্রপতি। এই দুই জনের মধ্যে একজন নারীকে রাখার প্রস্তাব দেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। তার প্রস্তাবটি গৃহীত হওয়ায় সার্চ কমিটিতে রাষ্ট্রপতির মনোনীত দুই জন বিশিষ্ট নাগরিকের মধ্যে বাধ্যতামূলক একজন নারীকে রাখার বিধান যুক্ত করা হয়েছে পাশ হওয়া বিলে। উত্থাপিত বিলে বলা ছিল, ‘সার্চ কমিটি ১০ কার্যদিবসের মধ্যে রাষ্ট্রপতির কাছে নাম প্রস্তাব করবে।’ এক্ষেত্রে সংশোধনী এনে ‘১৫ কার্যদিবস’ করার বিধান যুক্ত করা হয়েছে।
এছাড়া আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির করা দুটি সুপারিশও গৃহীত হয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগের যোগ্যতা ও অযোগ্যতার শর্তে দুটি পরিবর্তন আনার সুপারিশ করে স্থায়ী কমিটির সভাপতি শহীদুজ্জামান সরকার বুধবার সংসদে বিলটির ওপর প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। সংসদে উত্থাপিত বিলে সিইসি ও কমিশনারদের যোগ্যতাসংক্রান্ত ধারায় বলা হয়েছিল, সিইসি ও কমিশনার হতে সরকারি, বিচার বিভাগীয়, আধা সরকারি বা বেসরকারি পদে নূন্যতম ২০ বছর কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এই ধারায় সংশোধনী এনে সরকারি, বিচার বিভাগীয়, আধা সরকারি বা বেসরকারি পদের পাশাপাশি ‘স্বায়ত্তশাসিত ও পেশায়’? যুক্ত করার সুপারিশ করে স্থায়ী কমিটি। এছাড়া অযোগ্যতার ক্ষেত্রে বিলের ৬(ঘ) ধারায়ও স্হায়ী কমিটি কিছুটা পরিবর্তনের সুপারিশ করে। এ ধারায় বলা হয়েছিল, নৈতিক স্খলনজনিত ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে নূন্যতম দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে সিইসি ও কমিশনার হওয়া যাবে না। এখানে দুই বছরের কারাদণ্ড উঠিয়ে শুধু ‘কারাদণ্ড’ রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া বিলের ওপর বিভিন্ন শব্দ ও ছোটখাট কয়েকটি সংশোধনী প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। সংসদ সদস্যদের ৬৪টি সংশোধনী প্রস্তাবের মধ্যে ২২টি আইনমন্ত্রী গ্রহণ করেন, যা সংসদে কণ্ঠভোটে গৃহীত হয়। সংশোধনীগুলো গ্রহণের সময় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘এতগুলো সংশোধনী আগে কখনো গ্রহণ করা হয়নি।’ স্পিকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘মাননীয় স্পিকার অনেক দিন পর এমপিরা আমাকে পানি খাইয়ে দিয়েছেন।’
সার্চ কমিটি গঠন
পাশকৃত বিলে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করবেন। সিইসি ও কমিশনার হিসেবে নিয়োগের জন্য প্রতিটি পদের বিপরীতে দুই জন করে মোট ১০ জনের নাম প্রস্তাব করার জন্য একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করবেন রাষ্ট্রপতি। অনুসন্ধান কমিটির সভাপতি হবেন প্রধান বিচারপতির মনোনীত আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি। আর সদস্য হিসেবে থাকবেন প্রধান বিচারপতি মনোনীত হাইকোর্টের একজন বিচারপতি, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান এবং রাষ্ট্রপতির মনোনীত দুই জন বিশিষ্ট নাগরিক (যাদের মধ্যে একজন নারী থাকবেন)। সার্চ কমিটি রাজনৈতিক দল এবং পেশাজীবী সংগঠনের কাছ থেকে নাম আহ্বান করতে পারবে। কমিটির কাজে সাচিবিক সহায়তা দেবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।