লাখো ভক্তের উপস্থিতিতে ফুলতলী ছাহেবের ১৪তম ইন্তেকাল বার্ষিকী পালিত
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ জানুয়ারি ২০২২, ৪:৪৩:২৪ অপরাহ্ন
সংবাদদাতা : প্রখ্যাত আলেম আল্লামা আব্দুল লতিফ চৌধুরী ফুলতলী (র.)-এর ১৪তম ইন্তেকাল বার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল শনিবার ফুলতলী ছাহেব বাড়ি সংলগ্ন বালাই হাওরে অনুষ্ঠিত হয় ঈসালে সাওয়াব মাহফিল। লাখো মানুষের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত এ মাহফিল সকাল ১০টায় আল্লামা ফুলতলী (র.)-এর মাজার জিয়ারতের মধ্য দিয়ে শুরু হয়।
কনকনে শীত উপেক্ষা করে নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বেই জনতার ঢল নামতে ফুলতলী ছাহেব বাড়িতে। জোহরের পর মানুষের আগমনে কানায় কানায় পূর্ণ হয় মাঠ। খতমে কুরআন, খতমে বুখারী, খতমে খাজেগান, খতমে দালাইলুল খাইরাতের পাশাপাশি স্মৃতিচারণমূলক ও জীবনঘনিষ্ট আলোচনায় অত্যন্ত ভাবগম্ভীর পরিবেশে অতিবাহিত হয় পুরো দিন। মাহফিলে তা’লীম-তরবিয়ত প্রদান করেন হযরত আল্লামা ইমাদ উদ্দিন চৌধুরী বড় ছাহেব কিবলাহ ফুলতলী। বাংলাদেশ আন্জুমানে আল ইসলাহর সভাপতি মাওলানা মুহাম্মদ হুছামুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলী’র পরিচালনায় মাহফিলে দেশের শীর্ষ পীর, উলামা মাশায়েখগণ বয়ান পেশ করেন।
তা’লীম-তরবিয়ত প্রদান করেন হযরত আল্লামা ইমাদ উদ্দিন চৌধুরী বড় ছাহেব কিবলাহ ফুলতলী বলেন, আমরা দুনিয়াতে চিরদিন থাকবো না। একদিন না একদিন আমাদের এ পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হবে। আমরা কত মানুষের জানাযায় উপস্থিত হই। যতদিন জীবিত থাকি যেনো পাড়া প্রতিবেশির জানাযায় অংশগ্রহণ করি, কাফন দাফনে সহযোগিতা করি। তিনি প্রিয়নবী (সা.)-এর হাদীস উদ্ধৃত করে বলেন, যে ব্যক্তি কোনো জানাযায় শরীক হয়ে জানাযার নামায পড়ে সে এক পাহাড় পরিমাণ সওয়াব লাভ করে আর যে জানাযার নামাযে শরীক হবার পাশাপাশি কাফন দাফনেও শরীক হয় সে দুই পাহাড় পরিমাণ সওয়াব লাভ করবে। আমাদের এ বিষয়ে সচেতন হওয়া প্রয়োজন।
তিনি মেহমানদারি ও প্রতিবেশির হক আদায়ের প্রতি গুরুত্বারোপ করে বলেন, প্রিয়নবী (সা.) বলেছেন, যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি বিশ্বাস রাখে সে যেনো মেহমানের সমাদর করে, প্রতিবেশিকে সম্মান করে এবং হয়তো ভালো কথা বলে নতুবা নীরব থাকে। তিনি এতীমের হকের বিষয়ে সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, এতিমের হক আত্মসাৎ করা আগুন ভক্ষণ করার শামিল। কোনো অসহায় বাবা মৃত্যুর আগে হয়তো তার সন্তানদের ছায়া দেওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তিনি তা করে যেতে পারেননি। তার মৃত্যুর পর তার প্রতিবেশি এতিমের সম্পদ দখল করে নিয়েছেন এমন অভিযোগ শুনেছি। আপনারা এতিমের সম্পদ আত্মসাৎ নয় বরং উদ্ধারের চেষ্টা করবেন। জালিম যত শক্তিশালী হোক তার মুকাবিলায় আমাদের একটি অস্ত্র আছে তা হলো এতীমের কান্না। এতীমের কান্নাকে ভয় করবেন। তিনি জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা প্রিয় মাতৃভূমির সাধারণ জনগণ, অসহায় মানুষের প্রতিনিধি। গ্রাম বাংলার এ অসহায় মযলুম মানুষদের পাশে দাঁড়ান, ভালো মানুষদের গুরুত্ব দিন। কোনো সার্কেল বা ব্যক্তির দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে সমাজের খিদমতে নিজেকে উৎসর্গ করুন।
১৪তম ইন্তেকাল বার্ষিকী উপলক্ষে ঈসালে সাওয়াব মাহফিলে অংশ নিতে ভোর থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শত শত গাড়ী বহর নিয়ে ভক্ত মুরিদান ও মুহিব্বীন ফুলতলী ছাহেববাড়ী অভিমুখে রওয়ানা হন। বেলা বাড়ার সাথে সাথে জনসমুদ্রে পরিণত হয় বালাই হাওরসহ ফুলতলী ও আশপাশ এলাকা। আট্রগ্রাম থেকে শেওলা পর্যন্ত সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। গভীর রাতেও দূরদুরান্ত থেকে লোকজন গাড়ি নিয়ে ফুলতলী ছাহেব বাড়িতে আসতে থাকেন। মাহফিল স্থলের বাইরে মুসল্লীর মূল আকর্ষণ ছিল আল্লামা ফুলতলী ছাহেবের মাজার। ভক্ত, অনুসারীগণ মাজার জিয়ারত করে প্রিয় মুর্শিদের দরজা বুলন্দির জন্য প্রার্থনা করে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। সারা দিনরাত চলে মাজার প্রাঙ্গণে তেলাওয়াত, জিকির, আযকার ও দোয়া। ফজরের নামাজের পর লাখো মানুষের উপস্থিতিতে আখেরী মোনাজাতের মাধ্যমে মাহফিলের কার্যক্রম শেষ হবে।
মাহফিলে পুলিশের পাশাপাশি সহস্রাধিক স্বেচ্ছাসেবক টিম আইন শৃংখলা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করেন। গোটা ফুলতলী এলাকা মুসল্লীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠে। ভক্ত মুরিদদের শোক সাগরে ভাসিয়ে শত শত মসজিদ মাদ্রাসা এতিমখানা খানখাসহ নানা ধর্মীয় ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা আল্লামা ফুলতলী ২০০৮ সালের ১৫ জানুয়ারি ইন্তেকাল করেন। অব্যাগত মুসল্লীদের খানার জন্য বিশাল আয়োজন করা হয় আয়োজকদের পক্ষ থেকে। মানুষের ইহকালীন শান্তি, সমৃদ্ধি ও পরকালীন মুক্তি ও করোনামুক্তির জন্য বিশেষ মোনাজাত করা হয় মাহফিলে।