সিলেট বিভাগে ৮২ ইউপিতে ভোটগ্রহণ চলছে আজ
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ ডিসেম্বর ২০২১, ১১:২৯:৩৭ অপরাহ্ন
সিলেট অফিস : পর্যায়ক্রমে চলতে থাকা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের চতুর্থ ধাপের ভোটগ্রহণ আজ ২৬ ডিসেম্বর। এ পর্যায়ে আজ সিলেট বিভাগের ৮২ ইউনিয়নে ভোটগ্রহণ হচ্ছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে এসব ইউনিয়নে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ইউনিয়নগুলোতে চলবে ভোটগ্রহণ।
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানা গেছে, যেসব ইউয়িনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে সেসব ইউনিয়নের প্রতিটি উপজেলার জন্য নির্ধারিত ৪ জন করে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর বাইরেও কোথাও দু’জন, কোথাও তিনজন, এমনকি কোথাও পাঁচজন অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট রয়েছেন। রোববারের নির্বাচনে কেন্দ্র প্রতি মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ, আনসার, অঙ্গীভূত আনসারের ২২ জনের ফোর্স। এছাড়া পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসারের একটি করে টিম প্রতি ইউপিতে মোবাইল ফোর্স হিসেবে এবং প্রতি তিনটি ইউপির জন্য একটি করে স্ট্রাইকিং ফোর্স মোতায়েন থাকবে।
প্রতি উপজেলায় র্যাবের থাকবে দুটি মোবাইল টিম ও একটি স্ট্রাইকিং টিম, প্রতি উপজেলায় বিজিবির দুই প্লাটুন সদস্য থাকবে মোবাইল টিম হিসেবে। আর এক প্লাটুন নিয়োজিত থাকবে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে।
আজ চতুর্থধাপে সিলেট বিভাগের যেসব ইউনিয়ন পরিষদে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে সেগুলো হচ্ছে- সিলেট জেলার গোলাপগঞ্জ উপজেলার বাঘা, গোলাপগঞ্জ, ফুলবাড়ী, লক্ষীপাশা, বুধবারিবাজার, ঢাকা দক্ষিণ, লক্ষণাবন্দ, ভাদেশ্বর, পশ্চিম আমুড়া, উত্তর বাদেপাশা, শরীফগঞ্জ ইউনিয়ন ও বিয়ানীবাজার উপজেলার আলীনগর, চারখাই, দুবাগ, শেওলা, কুড়ারবাজার, মাতিউরা, তিলপাড়া, মুল্লাপুর, মুড়িয়া, লাওতা ইউনিয়ন।
মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলার ফতেহপুর, উত্তরভাগ, মুনশীবাজার, পাঁচগাঁও, রাজনগর, টেংরা, কামারচাক, মনসুরনগর ইউনিয়ন ও মৌলভীবাজার সদর উপজেলার খলিলপুর, মনুমুখ, কামালপুর, আপারকাবাগলা, আখাইলকুড়া, একাটুনা, চাদনীঘাঁট, কনকপুর, আমতৈল, নাসিরাবাদ, মুস্তফাপুর, গিয়াসনগর ইউনিয়ন।
হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার লাখাই, মুড়াকুড়ি, মুড়িয়াউখ, বামৈ, করাব, বুল্লা (ইভিএম) ইউনিয়ন ও বানিয়াচং উপজেলার বানিয়াচং উ.পূ, বানিয়াচং উ.প, বানিয়াচং দ.পূ, দৌলতপুর, খাগাপাশা, বড়ইউড়ি, খাগাউড়া, পুকড়া, সুবিদপুর, মকরমপুর, সুজাতপুর, মন্দরি, মুরাদপুর, পৈলারকন্দি ইউনিয়ন।
সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার কলকলিয়া, চিলাউড়া হলদিপুর, রাণীগঞ্জ, সৈয়দপুর শাহারপাড়া, আশারকান্দি, পাইলগাঁও, পাটলি ইউনিয়ন ও দিরাই উপজেলার রফিনগর, ভাটিপাড়া, রাজানগর, চরনারচর, দিরাই সরমঙ্গল, করিমপুর, জগদল, তাড়ল, কুলঞ্জ ইউনিয়ন ও বিশ্বম্বরপুর উপজেলার ফতেহপুর, বাধাঘাট দক্ষিণ, পলাশ, ধনপুর ও সলুকাবাদ ইউনিয়ন।
গোলাপগঞ্জ উপজেলার ১০ টি ইউনিয়নে উপজেলা নির্বাচন কমিশনের দেয়া তথ্যমতে মোট ৫৪ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী ও সাড়ে ৪শতাধিক সাধারণ সদস্য (পুরুষ) এবং সংরক্ষিত সাধারণ সদস্য (মহিলা) প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন।
চেয়ারম্যান প্রার্থীদের মধ্যে ১০টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত ১০ জন, জাতীয় পার্টির ৩ জন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ১ জন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ১ জন, জাসদ ১ জন, বিদ্রোহী(স্বতন্ত্র) ৪ জন, বিএনপি (স্বতন্ত্র) ১৫ জন, জামাত (স্বতন্ত্র) ৮ জন, (সরাসরি কোন রাজনৈতিক দল নয় এমন) স্বতন্ত্র ১১ জন নির্বাচনে সরাসরি প্রতিদ্বন্ধিতা করলেও প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নে দ্বিমূখী ও ত্রিমুখী লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
মৌলভীবাজারের রাজনগরে ৮ ইউনিয়নে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের মধ্যে ৭টিতে ৩৩জন চেয়ারম্যান প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। কামারচাক ইউনিয়নে আতাউর রহমান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে যাওয়ায় সেখানে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন হচ্ছে না। ৭ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৭ জন প্রবাসী রয়েছেন। উপজেলার ৭৭টি ভোট কেন্দ্রে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তায় ঢেকে দেয়া হয়েছে প্রতিটি কেন্দ্র। নির্বাহী ও জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের টীম সার্বক্ষনিক টহল দেবে ৮টি ইউনিয়নে। রয়েছে ও বিজিবির টহল টিমও।
জানা যায়, রাজনগর উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে ১ লক্ষ ৭১ হাজার ৭০১জন ভোটার রয়েছেন। এদের মধ্যে ৮৬ হাজার ৯৮৭জন পূরুষ ও ৮৪ হাজার ৭১৪ নারী ভোটার রয়েছেন। ৭৭টি ভোট কেন্দ্রে ৪১৮টি বুথ রয়েছে। এসব কেন্দ্রে ৭৭জন প্রিজাইডিং, ৪১৮জন সহকারী প্রিজাইডিং ও ৮৩৬জন পোলিং অফিসার রয়েছেন। ভোট কেন্দ্রগুলোর সার্বিক নিরাপত্তায় প্রতিটি কেন্দ্রে চারজন পুলিশ ও ১৭জন আনসার সদস্য রয়েছেন।
রাজনগর উপজেলার ৭টিতে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন হচ্ছে। কামারচাক ইউনিয়নে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মো. আতাউর রহমান চেয়াম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। সাত ইউনিয়নে মোট ৩৩জন চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাদের ম্যধ্যে ইউরোপ, আমেরিকা, ও মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসী ৭জন চেয়ারম্যান প্রার্থী এবার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন ১নং ফতেহপুর ইউনিয়নে সৌদিআরব প্রবাসী মো. আমির আলী, ২নং উত্তরভাগ ইউনিয়নে আমেরিকা প্রবাসি মোহাম্মদ এস মিয়া, ৩নং মুন্সিবাজার ইউনিয়নে আমেরিকা প্রবাসী রাহেল হোসেন। ৪নং পাচঁগাও ইউনিয়নে লন্ডন প্রবাসি জহিরুল বাচ্চু ইসলাম, ৫নং রাজনগর সদর ইউনিয়নে ইংল্যান্ড প্রবাসী শিপলু আহমেদ। ৬ নং টেংরা ইউনিয়নে আমেরিকান প্রবাসি আরজান খান ও ৮নং মনসুরনগর ইউনয়নে ইংল্যান্ড প্রবাসী সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া।
সাধারণ মানুষের কল্যাণে কাজ করার লক্ষ্যে নির্বাচন করছেন বলে জানান এসব প্রবাসী। রাজনগরীতির সাথে টুকটাক সম্পৃক্ততা থাকায় দেশের মাষের কথা ভেবেই তারা নিজেদেও নির্বাচনে জড়িয়েছেন বলে জানালেন কয়েকজন।
৬নং টংরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী আমেরিকা প্রবাসি আরজান জানান, এলকায় একটি উচ্চ বিদ্যালয় স্থাপন করে মানুষের সাথে মিশে গিয়েছি। এখন আরেকটি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় স্থাপন করার পরিকল্পনা নিয়েছি। টেংরা ইউনিয়নে একটি হাসপাতাল করার ইচ্ছা রয়েছে। আর এই কাজ করতে হলে একটি দায়িত্বশীল অবস্থানে থাকতে হয়। এ কারণে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছি।
৩ নং মুন্সিবাজার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী রাহেল হোসেন বলেন, দেশে ১৬ মাস অবস্থানের পর দেখতে পেলাম এলাকার তরুণ ও যুবকরা ব্যপক হারে মাদকাসক্ত হচ্ছে। মাদকের বিরোদ্ধে শক্ত ভুমিকা নিতে হলে বুঝতে পারলাম কিছু ক্ষমতার দরকার। তাই চেযারম্যান প্রার্থী হয়েছি। বাকিরাও দুর্নীতির বিরোদ্ধে রুখে দাড়ানোর মনোভাব নিয়েই নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন।
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার ৭ ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থীর সাথে বিদ্রোহী আওয়ামীলীগ ও সতন্ত্র প্রার্থীর লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে সাধারণ ভোটারদের প্রশ্ন নির্বাচন সুষ্ঠ হবেতো? বিজয়ের লক্ষ্যে প্রার্থীদের পক্ষে শনিবার রাতে বিভিন্ন স্থানে টাকার ছড়াছড়ি চলছে বলে অনেকে অভিযোগ করেছেন।
নির্বাচনে ৭ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে মোট ৩৭ জন প্রার্থী ভোটযুদ্ধে লড়ছেন। তাঁরা হলেন, ১নং কলকলিয়া ইউনিয়নে আওয়ামীলীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী আলাল হোসেন রানা, স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী লন্ডন প্রবাসী রফিক মিয়া ও আবদুস সোবহান। এ ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থীর সাথে সতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে লড়াই হতে পারে বলে ভোটাররা জানান।
২নং পাটলি ইউনিয়নে আওয়ামীলীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী আংগুর মিয়া, বিদ্রোহী আওয়ামীলীগ চেয়ারম্যান প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান সিরাজুল হক, আতিকুর রহমান আতিক, আবদুল হাই আজাদ ও এনামুল ইসলাম। এ ইউনিয়নে আংগুর মিয়া ও সিরাজুল হকের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে বলে ভোটার রা জানান।
৫নং চিলাউড়া-হলদিপুর ইউনিয়নে আওয়ামীলীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী আবদুল গফুর, বিদ্রোহী আওয়ামীলীগ চেয়ারম্যান প্রার্থী উপজেলা আওয়ামীলীগ সহসভাপতি শহিদুল ইসলাম বকুল, বর্তমান চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগ নেতা আরশ মিয়া, মুজিবুর রহমান, আবদুল মমিন ও ইলাছ মিয়া।
৬নং রাণীগঞ্জ ইউনিয়নে আওয়ামীলীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী শেখ ছদরুল ইসলাম, বিদ্রোহী আওয়ামীলীগ¿ প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগ নেতা শহিদুল ইসলাম রানা, ছালিক মিয়া, আমান উদ্দিন আহমদ লেচু, সাবেক চেয়ারম্যান মজলুল হক ও সিরাজুল ইসলাম আসিক। এ ইউনিয়নে শেখ ছদরুল ইসলাম ও শহিদুল ইসলাম রানার মধ্যে দ্বিমুখি লড়াই হতে পারে।
৭নং সৈয়দপুর-শাহারপাড়া ইউনিয়নে আওয়ামীলীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান আবুল হাসান, বিদ্রোহী আওয়ামীলীগ চেয়ারম্যান প্রার্থী মকসুদ মিয়া, আজহারুল ইসলাম কামালী, সৈয়দ আসাদ হোসেন চৌধুরী ও মুকিতুর রহমান। এ ইউনিয়নে আবুল হাসান ও মুকিতুর রহমানের মধ্যে লড়াই হতে পারে।
৮নং আশারকান্দি ইউনিয়নে আওয়ামীলীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী আবদুস ছত্তার, বিদ্রোহী আওয়ামীলীগ চেয়ারম্যান প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগ নেতা আইয়ূব খান, জাতীয় পার্টি মনোনীত শাহ তারেক রহমান নিপু, স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী গোলাম কিবরিয়া চৌধুরী পারভেজ, মোহাম্মদ আলী, আহমেদ হোসাইন, লেবু মিয়া ও সৈয়দ জমিরুল হক।
৯নং পাইলগাঁও ইউনিয়নে আওয়ামীলীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী সুন্দর উদ্দিন, বিদ্রোহী আওয়ামীলীগ চেয়ারম্যান প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগ নেতা মখলুছ মিয়া, চেয়ারম্যান প্রার্থী ফারুক আহমদ ও দবিরুল ইসলাম। মূল লড়াইয়ে মখলুছ মিয়া, ফারুক আহমদ ও সুন্দর উদ্দিনের নাম শোনা যাচ্ছে।
এছাড়া ৭ ইউনিয়নের সকল ওয়ার্ডে নারী সদস্য পদে ৮৯ জন ও সাধারণ সদস্য পদে ২৩১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন।