বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম বীরপ্রতীক আর নেই
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ১০ ডিসেম্বর ২০২১, ৭:৩৭:৪৫ অপরাহ্ন
বাংলাদেশ সরকারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের গেজেট নোটিফিকেশন (নম্বর ৮/২৫/ডি-১/৭২-১৩৭৮ তারিখ ১৫ ডিসেম্বর, ১৯৭৩) তালিকায় ৩৫৪ নম্বরে রয়েছেন সিরাজুল ইসলাম বীর প্রতীক, সেক্টর-৫, পদবী এফ এফ
সিলেট অফিস : মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান রাখায় রাষ্ট্রীয় ‘বীরপ্রতিক’ খেতাবপ্রাপ্ত বিশ্বনাথের কৃতিসন্তান সিরাজুল ইসলাম আর নেই। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজেউন।
শুক্রবার সকাল আনুমানিক ১১টা ৪৫ মিনিটের সময় সিলেট মহানগরীর সুবিদ বাজার বনকলা পাড়ার নিজ বাসায় তিনি ইন্তেকাল করেন। তার গ্রামের বাড়ি বিশ্বনাথের দেওকলস ইউনিয়নের আগ্নপাড়া।
বাংলাদেশ সরকারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের গেজেট নোটিফিকেশন (নম্বর ৮/২৫/ডি-১/৭২-১৩৭৮ তারিখ ১৫ ডিসেম্বর, ১৯৭৩) তালিকায় ৩৫৪ নম্বরে রয়েছেন সিরাজুল ইসলাম বীর প্রতীক, সেক্টর-৫, পদবী এফ এফ।
ব্যক্তিগত জীবনে ৫ সন্তানের জনক সিরাজুল ইসলাম বীরপ্রতীক দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সারে ভুগছিলেন। এরমধ্যে তার ব্রেনস্ট্রোকও হয়।
বীর প্রতীক সিরাজুল ইসলাম বিশ্বনাথ উপজেলার দেওকলস ইউনিয়নের আগ্নপাড়া গ্রামে ১৯৪৮ সালের ১৯শে মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম মরহুম আলফু মিয়া শিকদার ও মা মোছা. ছবরুন নেছা। সিরাজুল ইসলাম দেওকলস প্রাইমারি স্কুল থেকে শিক্ষাজীবন শুরু করেন। বিশ্বনাথ রামসুন্দর অগ্রগামী উচ্চবিদ্যালয় থেকে ১৯৬৫ সালে এসএসসি, মৌলভীবাজার কলেজ থেকে ১৯৬৮ সালে এইচএসসি এবং সিলেট এমসি কলেজ থেকে ১৯৭৩ সালে বিএ ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৭৩ সালে তিনি সিলেট ল’কলেজে ভর্তি হন।
সিরাজুল ইসলাম ১১ দফা ও ৬৯ এর গণ-আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। তিনি ১৯৬৯-৭০ শিক্ষা বর্ষে এমসি কলেজ ছাত্রসংসদের ভিপি এবং সিলেট ছাত্র ইউনিয়নের অন্যতম সদস্য ছিলেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাতে বর্বর পাকিস্তানি বাহিনী বাঙালি নিধনযজ্ঞে মেতে উঠলে বীরপুরুষ সিরাজুল ইসলাম বর্বর পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে জীবন-মরণ সংগ্রামে লিপ্ত হন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় সুনামগঞ্জ জেলার উত্তর সীমান্তঘেঁষে বালাট এলাকায় তিনি যুদ্ধে অংশ নেন। এটি বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত এলাকা। ১৯৭১ সালে এখানে ছিল ৫ নম্বর সেক্টরের একটি সাব-সেক্টর। সাব-সেক্টরে মুক্তিবাহিনীর বেশির ভাগ যোদ্ধা গণবাহিনীর সদস্য। অর্থাৎ ছাত্র-যুবক-জনতা। তাঁরা ছিলো স্বল্প প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। তাঁদের সঙ্গে মাত্র ২৩৫ জন বাঙালি সেনাসদস্য আর বেশ কিছু মুজাহিদ, পুলিশ ও আনসার। গণবাহিনীর একটি দলের দলনেতা সিরাজুল ইসলাম। সেখানে এক রাতে নিঃশব্দে এগিয়ে চলেছেন একদল মুক্তিযোদ্ধা। তাঁদের নেতৃত্বে সিরাজুল ইসলাম। তাঁদের লক্ষ্য বেরিগাঁওয়ের পাকিস্তানি সেনাদের বাংকার। নির্দিষ্ট সময়ে (রাত ১২টা এক মিনিট) তাঁরা একযোগে বাংকারে সফল গ্রেনেড হামলা চালালেন। গ্রেনেড বিস্ফোরণের সঙ্গে সঙ্গে পাকিস্তানিদের মধ্যে তোলপাড় শুরু হয়ে গেল। পাকিস্তানিদের মধ্যে আর্তনাদ ও চিৎকার। তারপর পাকিস্তানিরা বৃষ্টির মতো গুলি শুরু করল। তখন তাঁরা দ্রুত ওই এলাকা থেকে নিরাপদ স্থানে চলে গেলেন। বালাট সাব-সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা মূলত হিট অ্যান্ড রান পদ্ধতিতে যুদ্ধ করতেন। কয়েক দিন পর পর হঠাৎ পাকিস্তানিদের ওপর আক্রমণ করে তাঁরা দ্রুত সরে পড়তেন। তাঁদের মূল লক্ষ্য পাকিস্তানিদের মানসিকভাবে দুর্বল করে দেওয়া। সিরাজুল ইসলাম কয়েকবার তাঁর দল নিয়ে এভাবে সুনামগঞ্জের বেরিগাঁও ও ষোলঘরে অপারেশন করেন।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয় এবং পৃথিবীর মানচিত্রে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা হয়। স্বাধীনতা সংগ্রামের পুরোভাগে থেকে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে।
সিরাজুল ইসলাম বীরপ্রতীকের মৃত্যুতে অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোরের প্রধান সম্পাদক: বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: মনির উদ্দিন চৌধুরী গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি প্রয়াতের বিদেহি আত্মার মাগফিরাত কামনা করে শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।




