দেশে মোবাইল-ইন্টারনেট সেবার মান খারাপ যে কারণে
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ১০ ডিসেম্বর ২০২১, ২:৪৫:০৩ অপরাহ্ন
সেবার মানের দিক থেকে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, শ্রীলঙ্কারও ধারেকাছেও নেই বাংলাদেশের মোবাইল সেবা। ভয়েস কল, মোবাইল ইন্টারনেট উভয় ক্ষেত্রে নির্ধারিত মূল্য পরিশোধ করেও কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছে না বাংলাদেশের মানুষ
অনুপম নিউজ ডেস্ক : দেশে মোবাইল অপারেটরদের সেবার মান খারাপ। নির্ধারিত টাকা প্রিপেইড করেও ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন দিনে কয়েক ঘণ্টা থাকেই। সেবার মান খারাপের জন্য বেতার তরঙ্গের স্বল্পতা এবং অপটিক্যাল ফাইবারের ব্যবহার কম বলে উল্লেখ করা হয়েছে। মোবাইল অপারেটরদের সঙ্গে ওয়াইড টেলিকমিউ-নিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন) ও টাওয়ার কোম্পানিগুলোর স্নায়ুযুদ্ধের কথা স্বীকার করছে খোদ বিটিআরসি। সহসাই এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের কোনো পথের সন্ধানও নেই বিটিআরসির কাছে।
বিটিআরসির চেয়ারম্যাম শ্যাম সুন্দর সিকদার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘পরিস্থিতির উত্তরণে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি। এমনকি এনটিটিএন, টাওয়ার কোম্পানি ও মোবাইল অপারেটরদের সঙ্গে দূরত্ব কীভাবে কমানো যায় সে চেষ্টাও আমরা করছি। এখন যদি কোনো ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহক মামলা করে আমরা তাদের পাশে থাকব। কেউ সঠিক সেবা না পেলে তার জন্য বিটিআরসিকে দায়ী করা ঠিক না। কারণ বিটিআরসি তো সরাসরি সেবা দিচ্ছে না। যারা সেবা দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে আপনি অভিযোগ করতে পারেন। আমরা সব সময় গ্রাহকদের স্বার্থের কথা বিবেচনা করি। যে কোনো পরিস্থিতিতে আমরা গ্রাহকদের পাশে থাকব।’
সেবার মানের দিক থেকে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, শ্রীলঙ্কারও ধারেকাছেও নেই বাংলাদেশের মোবাইল সেবা। ভয়েস কল, মোবাইল ইন্টারনেট উভয় ক্ষেত্রে নির্ধারিত মূল্য পরিশোধ করেও কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছে না বাংলাদেশের মানুষ। বারবার কল কেটে যাওয়া, ঘন ঘন মোবাইল সেবার মোবাইল ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। এর প্রতিফলন ঘটেছে বৈশ্বিক সূচকেও। বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠান ওকলার সর্বশেষ প্রতিবেদনে মোবাইল ইন্টারনেটের গতিতে আগের তুলনায় বাংলাদেশের অবস্থানের অবনতি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অপারেটরদের পর্যাপ্ত অপটিক্যাল ফাইবার সংযোগ ব্যবহার না করা এবং চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল বেতার তরঙ্গ বরাদ্দ নেওয়ার কারণেই এমন সমস্যা হচ্ছে। ঘাটতি দূর করে সেবার মান বাড়ানোর জন্য তেমন চেষ্টাও করছে না।
‘‘বারবার কল কেটে যাওয়া, ঘন ঘন মোবাইল সেবার মোবাইল ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। এর প্রতিফলন ঘটেছে বৈশ্বিক সূচকেও। বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠান ওকলার সর্বশেষ প্রতিবেদনে মোবাইল ইন্টারনেটের গতিতে আগের তুলনায় বাংলাদেশের অবস্থানের অবনতি হয়েছে’’
টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, ভবিষ্যতে বাংলাদেশে ফিক্সড ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটকে জনপ্রিয় করাই লক্ষ্য। এজন্য ব্রডব্যান্ড সেবার উন্নয়নের জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আর মোবাইল টেলিযোগাযোগ সেবায় ভয়েস কলের গুণমান নিশ্চিত করাকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি মোবাইল ইন্টারনেট সেবার মানের উন্নতির জন্যও বিটিআরসি পদক্ষেপ নিয়েছে। অপারেটরদের আমরা নিয়মিত বলছি। দামে বেশি হলেও বাংলাদেশে মোবাইল ইন্টারনেট সেবার গতি ও মান এখনো বৈশ্বিক গড়ের চেয়ে অনেক পিছিয়ে। ডাটা সেবার গতি পরিমাপক ওকলার তথ্যমতে, বিশ্বের ১৪০টি দেশের মধ্যে গতি বিবেচনায় বাংলাদেশের অবস্থান ১৩৬তম। গত বছরের জানুয়ারিতে ১৩১তম অবস্হানে ছিল বাংলাদেশ। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে এদিক থেকে বাংলাদেশের চেয়ে পিছিয়ে শুধু আফগানিস্তান। মালদ্বীপ, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কায় মোবাইল ইন্টারনেটের গতি বৈশ্বিক গড়ের চেয়ে অনেক বেশি। ভারতেও সেবাটির গতি বৈশ্বিক গড়ের কাছাকাছি।
‘‘বিটিআরসির চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, বিটিআরসি এরই মধ্যে ২২৭টি উপজেলায় ১২ হাজার ৮০০ কিলোমিটার এলাকায় মোবাইল অপারেটরদের সেবার গুণমান (ড্রাইভ টেস্ট) পরীক্ষা করেছে। পরীক্ষায় কোনো অপারেটরেই সন্তোষজনক সেবার মান পাওয়া যায়নি’’
দেশের অপারেটরদের জন্য নতুন করে ২ হাজার ৩০০ মেগাহার্টজ বা আড়াই হাজার মেগাহার্টজ অথবা ৩ হাজার ৫০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ড থেকে তরঙ্গ বরাদ্দের বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আগামী মার্চে নিলামের প্রস্ত্ততি নিচ্ছে বিটিআরসি। গ্রামীণফোনের প্রায় সাড়ে ৮ কোটি গ্রাহকের বিপরীতে বরাদ্দকৃত তরঙ্গের পরিমাণ ৪৭ দশমিক ৪ মেগাহার্টজ। রবির প্রায় সাড়ে ৫ কোটি গ্রাহকের বিপরীতে বরাদ্দকৃত তরঙ্গের পরিমাণ ৪৪ মেগাহার্টজ। বাংলালিংকের প্রায় ৪ কোটি গ্রাহকের বিপরীতে তরঙ্গের পরিমাণ ৪০ মেগাহার্টজ ও টেলিটকের প্রায় ৬৫ লাখ গ্রাহকের বিপরীতে তরঙ্গ ২৫ দশমিক ২ মেগাহার্টজ।
বিটিআরসির চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, বিটিআরসি এরই মধ্যে ২২৭টি উপজেলায় ১২ হাজার ৮০০ কিলোমিটার এলাকায় মোবাইল অপারেটরদের সেবার গুণমান (ড্রাইভ টেস্ট) পরীক্ষা করেছে। পরীক্ষায় কোনো অপারেটরেই সন্তোষজনক সেবার মান পাওয়া যায়নি। সবচেয়ে বেশি কল ড্রপ পাওয়া গেছে গ্রামীণফোনের ক্ষেত্রে। বৃহস্পতিবার টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সাংবাদিকদের সংগঠন টিআরএনবির সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ তথ্য দেন। আগামী ১২ ডিসেম্বর রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটকের মাধ্যমে পরীক্ষামূলক ফাইভজি চালু হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ফোরজি সেবায় এখন পর্যন্ত গুণমান পুরোপুরি নিশ্চিত হয়নি, এ বিষয়টি বিটিআরসিরও নজরে আছে।




