অঘ্রানে ক্ষেত ভরা সোনালী ফসল দেশে, তবু চালের দাম বাড়ছে
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ০১ ডিসেম্বর ২০২১, ১০:৩৬:৫০ অপরাহ্ন
সিলেট অফিস : আমনের ভরা মৌসুম এখন। অঘ্রানের ক্ষেত ভরা সোনালী ফসল। নতুন চালের ঘ্রাণ বাংলার বাতাসে। শীতের পিঠা পুলির দিন এখন। কিন্তু চালের দাম বাড়তে থাকছে কেন?
মাঠ ভরা ধান তবু চালের দাম বাড়ছে। খুচরা বাজারে একদিনেই মানভেদে প্রতি কেজি চালে ৩ থেকে ৪ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। অথচ দেশের ধান-চালের বড় বড় মোকাম ও হাটবাজারগুলোতে এখন নতুন আমন ধানের ব্যাপক সরবরাহ। প্রতিদিনই হাট-বাজারগুলোতে ধান-চালের এ সরবরাহ বাড়ছে। তাহলে চালের দাম বাড়ছে কেন?
ব্যবসায়ীরা বলেছেন, ডিজেলের দাম বৃদ্ধিতে পরিবহন খরচ বেড়েছে। আগে মোকাম থেকে চাল আনতে যে ট্রাক ভাড়া ছিল ১৭ থেকে ১৮ হাজার টাকা। এখন তা নেওয়া হচ্ছে ২২ থেকে ২৪ হাজার টাকা। এই বাড়তি ভাড়া চালের দামের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। এছাড়া ধানের দাম বেশি। গত বছরের চেয়ে এবার মণ প্রতি ১৫০ থেকে ২০০ টাকা বেশি। এর প্রভাব পড়েছে চালের দামের ওপর।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, ইতোমধ্যে ইউরোপের কয়েকটি দেশে করোনার মহামারির চতুর্থ ঢেউ শুরু হয়েছে। বাংলাদেশেও আবার করোনার চতুর্থ ঢেউ আসতে পারে। তাই একটি চক্র আগেভাগেই ব্যাপকভাবে ধান-চাল মজুদ করছে। এর প্রভাবে চালের বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে।
খুচরা বাজারে প্রতি কেজি নাজিরশাইল/মিনিকেট ৬০ থেকে ৬৮ টাকা, পাইজাম/লতা ৫১ থেকে ৫৬ টাকা ও ইরি/স্বর্ণা ৪৮ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হয়। অথচ একদিন আগে নাজিরশাইল/মিনিকেট ৫৬ থেকে ৬৮ টাকা, পাইজাম/লতা ৪৮ থেকে ৫৬ টাকা ও ইরি/স্বর্ণা ৪৪ থেকে ৪৮ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশও (টিসিবি) গতকাল তাদের নিত্যপ্রণ্যের বাজারদরের প্রতিবেদনে চালের দাম বাড়ার এ তথ্য জানিয়েছে।
কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, চলতি বছর দেশে ৫৫ লাখ ৭৭ হাজার হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ কোটি ৪৭ লাখ ৫৩ হাজার টন। আশা করা হচ্ছে, চলতি মৌসুমে আমনের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। কিন্তু অবৈধ মজুতদারি নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে না কেন? এ প্রশ্ন সচেতন মহলের।
উল্লেখ্য, সূত্র জানায়, চলতি বছর জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ১০ লাখ ৬৫ হাজার টন চাল আমদানি করা হয়েছে। আর গত ২০২০-২১ অর্থবছরে সরকারি, বেসরকারি পর্যায়ে ১৩ লাখ ৫৯ হাজার টন চাল আমদানি হয়েছে। বর্তমানে সরকারের গুদামে ১৫ লাখ টন খাদ্যশস্য মজুত আছে। এরমধ্যে চাল ১২ দশমিক ৩২ লাখ টন ও গম ২ দশমিক ৭৬ লাখ টন। ফলে দেশে ধান-চালের কোন সংকট নেই। সম্প্রতি অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে আমন সংগ্রহ অভিযানের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছেন, বর্তমানে সরকারের গুদামে যথেষ্ট পরিমাণে খাদ্যশস্যের মজুত রয়েছে। খাদ্যনিরাপত্তায় এই মজুদ বৃদ্ধি করতে সরকার সচেষ্ট।
তিনি বলেন, কেউ যেন অবৈধ মজুদ করে খাদ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করতে না পারে সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। কোন কারণ ছাড়া চালের দাম বাড়ালে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।