ডলার সংকট, টাকার মান কমছে
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ২১ নভেম্বর ২০২১, ৮:৪২:৪১ অপরাহ্ন
অনুপম নিউজ ডেস্ক : বাড়তে থাকছে ডলারের দাম। কমে যাচ্ছে টাকার মান। দাম-উঠা নামার খেলা – অর্থনীতির খেলা। আমদানিকারদের গুণতে হচ্ছে বাড়তি অর্থ। আর আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ার প্রভাব পড়ছে গ্রাহক পর্যায়েও। অন্যদিকে চিকিৎসাসহ বিভিন্নকাজে বিদেশে গমনেচ্ছুরা পড়ছেন নানা ভোগান্তিতে। পরিস্থিতি উত্তরণে ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছে। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংক বাজারে প্রচুর পরিমাণে ডলার ছাড়তে শুরু করেছে। গত বছরে উল্টো পরিস্থিতি ছিল। সেসময় বাংলাদেশ ব্যাংক বাজার থেকে ডলার কিনে নিয়েছিল।
মূলত, করোনার পর আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য উন্মুক্ত হয়েছে। একইসঙ্গে চিকিৎসা, ভ্রমণ ও পড়াশোনার জন্য বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা তুলে দেওয়ায় অনেকেই এখন বিদেশে যাচ্ছেন। এ কারণে নগদ ডলারের চাহিদা অনেক বেড়েছে। চাহিদা বাড়ার কারণে দামও বেড়েছে। একইসঙ্গে টাকার তুলনায় অন্যান্য দেশের মুদ্রার মানও বাড়ছে। ডলারের দাম আরও বাড়তে পারে- এমন আশায় অনেকে ডলার আটকে রেখেছেন বলে সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন। এতে সমস্যা আরও বাড়ছে।
গত কয়েকদিনে খোলা বাজারে (কার্ব মার্কেট) ডলারের দাম আকাশ ছোঁয়া। বর্তমানে এক ডলার কিনতে ব্যয় করতে ৯৩ টাকার বেশি ব্যয় করা লাগছে বিদেশগামীদের। অবশ্য আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের দাম কিছুটা কম। তবে ব্যাংকে চাহিদামত ডলার পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ আছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারেও প্রতিনিয়ত ডলারের দাম বাড়ছে। গত ১০ নভেম্বর যেখানে প্রতি ডলারে বিক্রি মূল্য ছিল ৮৫ টাকা ৭৫ পয়সা। সেখানে ১৪ নভেম্বর ৫ পয়সা বেড়ে দাঁড়ায় ৮৫ টাকা ৮০ পয়সা। গত আগস্ট মাসের শুরুতে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলারের দাম ছিল ৮৪ টাকা ৮০ পয়সা।
করোনা মহামারির সময়ে দেশে রেমিট্যান্স আয় অনেক বেড়েছিল। পরে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় আন্তর্জাতিক চলাচল শুরু হওয়ার পরে রেমিট্যান্স কমতে শুরু করেছে। অন্যদিকে আমদানি ব্যয়ও বাড়তে শুরু করেছে। করোনার চলাকালীন সময়ে শিল্পের কাঁচামাল ও মেশিনারিজ আমদানি কম ছিল। সম্প্রতি তা বাড়তে শুরু করেছে। মহামারী চলাকালে প্রবাসীরা বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠালেও এখন অবৈধ পথেও (হুন্ডি) কিছু আসছে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের। আর আমদানির ক্ষেত্রেও এ পথের আশ্রয় নেয় অনেক আমদানিকারক।
এছাড়া করোনার ভ্যাকসিনের আমদানির অর্থও পরিশোধ করতে হচ্ছে। প্রত্যাশা অনুযায়ী রপ্তানি আয়ও হচ্ছে না। সব মিলিয়ে বাজারে বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদার তুলনায় সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এসব কারণে করোনা মহামারী পরবর্তীতে ডলার সঙ্কট প্রকট আকার ধারণ করেছে। অবশ্য ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় যারা রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন তাদের জন্য সুবিধাজনক হচ্ছে। একইভাবে ডলারের দাম বাড়ায় সুবিধা পাচ্ছেন রপ্তানিকারকরা।
ডলারের চাহিদা ও দাম বেড়ে যাওয়া বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম গতকাল বলেন, করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকায় দেশে মূলধ্বনি যন্ত্রপাতি ও পণ্য আমদানি বেড়েছে। এসব পণ্যের দায় পরিশোধ করতে সঙ্গত কারণেই ডলারের চাহিদা বাড়ছে। আর বাড়তি চাহিদার কারণে দামও কিছুটা বেড়েছে। বাজার স্থিতিশীল রাখতে প্রয়োজনের আলোকে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার বিক্রি করছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রা মজুত রয়েছে। ফলে দাম বাড়লেও দুশ্চিন্তার কিছু নেই।
টাকার মান কমার এই প্রবণতাকে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি বাণিজ্যের জন্য ইতিবাচক বলে জানান অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও অর্থনীতির গবেষক জায়েদ বখত।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, একটি ব্যাংক তার মূলধনের ১৫ শতাংশের সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা নিজেদের কাছে ধরে রাখতে পারে। এর অতিরিক্ত হলেই তাকে বাজারে ডলার বিক্রি করতে হবে।




