ইউরোপে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ, আরও ৫ লাখ মানুষ মারা যেতে পারে
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ২১ নভেম্বর ২০২১, ৭:৫৯:১৭ অপরাহ্ন
অনুপম নিউজ ডেস্ক : ইউরোপে করোনা পরিস্থিতি খুব খারাপের দিকে। জার্মানিতে দুদিন আগে ২৪ ঘণ্টায় ৬৫ হাজার ৩৭১ জনের শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এর ফলে দেশটিতে করোনা পরিস্থিতি ক্রমেই আরও অবনতির দিকে যেতে শুরু করেছে। অষ্ট্রিয়ায় কঠোর লকডাউন ঘোষণা। বৃটেনে প্রতিদিন গড়ে ৪০ হাজার মানুষ করোনা আক্রান্ত হচ্ছে।
ইউরোপের করোনার নতুন ঢেউ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। সংস্থাটি বলেছে, ইউরোপে করোনা সংক্রমণের নতুন ঢেউ নিয়ে তারা ‘অত্যন্ত উদ্বিগ্ন।’
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির সঙ্গে আলাপকালে ডব্লিউএইচওর আঞ্চলিক পরিচালক ডা. হ্যানস ক্লুগে জরুরি পদক্ষেপ না নেওয়া হলে আগামী মার্চের মধ্যে আরও ৫ লাখের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটতে পারে বলে সতর্ক করেছেন তিনি।
তবে ইউরোপের এই কর্মকর্তা বলেছেন, মাস্ক পরা বৃদ্ধি করা হলে তাৎক্ষণিকভাবে সংক্রমণ রোধে সহায়তা করতে পারে। ইউরোপের কয়েকটি দেশে করোনাভাইরাসের উচ্চ-সংক্রমণ হারের রেকর্ড, কিছু দেশে পূর্ণাঙ্গ এবং আংশিক লকডাউন জারির মধ্যে ডব্লিউএইচওর এই সতর্কবার্তা এলো।
ডা. ক্লুগে বলেছেন, শীতের মৌসুম, অপর্যাপ্ত টিকাদান এবং অতি-সংক্রামক ডেল্টা ধরনের আঞ্চলিক আধিপত্যের মতো কিছু কারণ করোনাভাইরাসের বিস্তারের পেছনে কাজ করেছে। টিকা নেওয়ার হার বৃদ্ধি, মৌলিক জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার বাস্তবায়ন এবং নতুন চিকিৎসা এই ভাইরাসের উত্থানের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়তা করতে পারে।
ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য কী করা দরকার, তা আমরা জানি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের অঞ্চলে মানুষের মৃত্যুর আবারও এক নম্বর কারণ হয়ে উঠেছে কোভিড-১৯।’
ক্লুগে বলেন, বাধ্যতামূলক টিকাদানের পদক্ষেপকে ‘সর্বশেষ অবলম্বন’ হিসেবে দেখা দরকার। তবে এই বিষয়টি সম্পর্কে ‘আইনি এবং সামাজিক বিতর্ক’ করা ‘খুব সময়োপযোগী’ হবে।
‘আমাদের কোভিড পাসের মতো বিষয় আছে,’ বলে জানিয়েছেন তিনি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই কর্মকর্তা বলেছেন, এটি ‘অবাধ স্বাধীনতার ওপর বিধি-নিষেধ নয়, বরং আমাদের ব্যক্তি স্বাধীনতা অব্যাহত রাখার একটি হাতিয়ার।’
এদিকে, ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে অস্ট্রিয়া শুক্রবার কোভিড-১৯ টিকা গ্রহণ আইনীভাবে প্রয়োজনীয় হয়ে উঠবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। দেশটিতে আগামী সোমবার থেকে পুরোপুরি লকডাউন কার্যকর হবে। এর আগে, দেশটিতে একই ধরনের বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছিল গত ফেব্রুয়ারিতে।
করোনাভাইরাসের রেকর্ড সংক্রমণ এবং টিকা নেওয়ার নিম্ন হারের কারণে দেশটিতে নতুন করে এই লকডাউনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। অষ্ট্রিয়ার চ্যান্সেলর আলেকজান্ডার শ্যালেনবার্গ বলেছেন, ‘একটি মুক্ত সমাজে এই সিদ্ধান্ত নেওয়াটা কঠিন ছিল। কিন্তু এই দুষ্ট চক্র ভাঙতে আমাদের একমাত্র টিকেট টিকা।’
বিবিসিকে তিনি বলেন, এটি পুরো সমাজের জন্য সমস্যা, এমনকি যাদের টিকা দেওয়া হয়েছে তাদের জন্যও। যারা টিকা নেননি, অসুস্থ হয়ে পড়েছেন; তাদের কারণে টিকা নেওয়াদেরও নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) যাওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তাদের প্রভাব অন্যদের ওপর পড়ছে।
করোনার উত্থানের কারণে ইউরোপের আরও অনেক দেশ নতুন করে বিধি-নিষেধ আরোপ করতে শুরু করেছে। মহাদেশজুড়ে করোনাভাইরাসের রেকর্ড সংক্রমণের হারের কারণে টিকা না নেওয়া লোকজনদের জন্য নতুন করে বিধি-নিষেধ আরোপ করছে চেক প্রজাতন্ত্র এবং স্লোভাকিয়া।
অন্যদিকে, নেদারল্যান্ডসের নতুন করোনা বিধি-নিষেধ ঘিরে রাতারাতি সহিংস দাঙ্গা ছড়িয়েছে রটারডামে। দেশটিতে নতুন বিধি-নিষেধ এবং নববর্ষের সন্ধ্যায় আঁতশবাজি নিষিদ্ধে সরকারি পরিকল্পনার বিরুদ্ধে শত শত মানুষ বিক্ষোভ করেছেন।
জার্মানির স্বাস্থ্যমন্ত্রী জেনস স্প্যান দেশটির করোনা পরিস্থিতিকে ‘জাতীয় জরুরি’ অবস্থা হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তবে দেশটিতে জাতীয় লকডাউন জারির কথা নাকচ করে দেননি তিনি।
শুক্রবার যুক্তরাজ্যে নতুন করে ৪৪ হাজার ২৪২ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। দেশটির সরকার বারবার বলছে, তাদের লকডাউন জারির কোনো পরিকল্পনা নেই। তবে ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসকে (এনএইচএস) রক্ষায় ইংল্যান্ডে করোনার অতিরিক্ত বিধি-নিষেধ ফিরে আসতে পারে বলে জানানো হয়েছে।
প্ল্যান বি হিসেবে সরকারের এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, কিছু ভেন্যুতে কোভিড-১৯ পাস ও ঘরোয়া অনুষ্ঠানে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক এবং বাসা থেকে কাজের নিয়ম চালু হতে পারে।