দেশরত্ন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার যুদ্ধ জয়ের গল্প
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ নভেম্বর ২০২১, ৮:৪১:২৯ অপরাহ্ন
: : শাহ শামীম আহমেদ : :
যুদ্ধ জয়ের গল্প শুনতে ভালো লাগে। কিন্তু যিনি যুদ্ধ করে জয় ছিনিয়ে আনেন বা জয়যুক্ত হন অথবা ইতিহাস সৃষ্টি করেন তাকে নিয়ে গল্প বলা যত সহজ যুদ্ধ বা সংগ্রামটা তত সহজ নয়। মহাকালের খাতায় এমনি অসীম সাহসী সংগ্রামের ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন দুই বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।
১৯৭১ সালে ৯ মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ যখন বিশ্বে স্বমহিমায় দাঁড়াতে চেষ্টা করছে তখনই ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত শক্তি ও দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রকারিদের হাতে নিহত হন। বিদেশ থাকায় বেঁচে যান তাঁর দুকন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। শুরু হয় তাদের নতুন জীবন ও সংগ্রাম।
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল বাঙালি জাতিকে স্বাধীন ও বিশ্ব দরবারে সুপ্রতিষ্ঠিত করা। নব্য উপনিবেশিক পাকিস্তানি শাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। সমগ্র বাঙালি জাতিকে সংগঠিত করেছেন, সংগ্রামী পতাকাতলে সমবেত করেছেন। সশস্ত্র যুদ্ধ করে স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনার মন্ত্রে উজ্জ্বীবিত ও নেতৃত্ব দিয়েছেন। কিন্তু শত্রু তো বসে থাকে না। ষড়যন্ত্র করে, ছোবল মারে এক সময়। সেই ছোবলটাই শত্রুরা মেরেছিল ১৯৭৫ সালে। শুধু বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করেনি, জাতীয় চার নেতাকেও জেলে হত্যা করে, বাঙালি জাতিকে পঙ্গু করে দেয়ার চেষ্টা করে। যুদ্ধে বিধ্বস্ত, বিশৃঙ্খল, হত- দরিদ্র একটি দেশ হিসেবে বিশ্বে বাংলাদেশ পরিচিতি পায়।
কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ ছিল চেনা শত্রু পাকিস্তানি শোষক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে।৭৫ পর শুরু হলো চেনা-অচেনা শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ও লড়াই এবং সংগ্রাম।
বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা শুরু করেন দেশবাসীকে সংগঠিত করে নতুন এ যুদ্ধ। ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনা নির্বাসন থেকে ফিরেন দেশে। অল্পদিনেই জনতার মুক্তির সংগ্রামে নেত্রী হয়ে ওঠেন বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনা।
সামরিক বেসামরিক ক্ষমতালোভী শোষকদের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের লড়াইয়ে শামিল হয়ে, নেতৃত্ব দিয়ে দেশবাসীকে জাগ্রত করেন। দীর্ঘ সংগ্রামের মাধ্যমে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে আবার রাষ্ট্রক্ষমতায় নিয়ে আসেন ১৯৯৬ সালে। ছিন্নভিন্ন একটি রাজনৈতিক দলকে সুসংগঠিত করার লড়াইও কম ছিল না। অন্ধকারে নিমজ্জিত ও শোষণের বিবরে নিপতিত জাতিকে উদ্ধার করে নতুন স্বপ্ন দেখান, আলো দেখান বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা।
জাতির ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসে বঙ্গবন্ধু হত্যা ও জেলহত্যার বিচার অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯৬ সালেই। খুনীরা শাস্তি পায়। ক্ষমতালোভীরা জাতিকে কলংকিত করে যে বিচার বন্ধ করে দিয়েছিল ইনডিমিনিটি আইন করে, তা অপসারিত করে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করেন শেখ হাসিনা।
সামরিক জান্তাকে হটিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ছিল শেখ হাসিনার প্রথম যুদ্ধ জয়। দ্বিতীয় যুদ্ধ জয় হলো বঙ্গবন্ধু হত্যা ও জেল হত্যার খুনিদের বিচার ও শাস্তিদান নিশ্চিত করা।
সেই সঙ্গে শুরু হয় ভাগ্যপীড়িত জাতিকে উন্নয়নের পথে নিয়ে যাওয়া। শোষণ থেকে মুক্তির লড়াই।
এই ঈপ্সিত উন্নয়নের পথে অন্যতম বাধা ছিল যুদ্ধাপরাধীদের নানা ষড়যন্ত্র। জাতির অভ্যুদয়ের সময় ৭১-এর কলংক তিলক এই যুদ্ধাপরাধি ও মানবতাবিরোধী অপরাধিদের বিচার করা ছিল জাতিকে কলংকমুক্ত করার তৃতীয় যুদ্ধ।
২০১০ সালে শুরু হয় যুদ্ধাপরাধি ও মানবতা বিরোধীদের অপকর্মের বিচার। নানা বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে এপর্যন্ত মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ৯ জন ফাঁসি ও যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত হয়েছে। আরও অনেকের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করেছে আদালত।
গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও একাত্তরের কলংক মুক্তির গল্পের পাশাপাশি জাতিকে বিশ্ব দরবারে প্রতিষ্ঠিত করতে যেসব লড়াই করতে হয় এর মধ্যে ধর্মীয় উগ্রবাদিতার বিরুদ্ধে লড়াই ও জঙ্গি নির্মূল ছিল অন্যতম কাজ। বিশ্বের বহু দেশ ধর্মীয় উগ্রবাদিতার কারণে সহিংসায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশেও এর বিস্তার নানাভাবে ঘটে চলেছে।
জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার ধর্মের অপব্যবহার, ধর্মের নামে জঙ্গি হওয়া বা জঙ্গি সহিংসতাকে প্রশ্রয় না দিয়ে শক্ত হাতে নির্মূল করতে সক্ষম হয়েছেন। নামে-বেনামে নানা ষড়যন্ত্রকারীদের ষড়যন্ত্রকে একইভাবে প্রতিহত ও সন্ত্রাস দমণ করে দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিচ্ছেন। এতে বিশ্বে শান্তির দেশ হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছে বাংলাদেশ।
এসব হলো দেশের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র ও জাতির উন্নয়নের বিরুদ্ধে চক্রান্তকারীদের জাল ছিন্ন করার গল্প। অসীম সাহস, দৃঢ়তা এবং আত্মবিশ্বাস না থাকলে এই চেনা -অচেনা জাতির শক্রদের নির্মূল করা সম্ভব নয়। শেখ হাসিনা সেই নেত্রী যিনি বিশ্ব দরবারে জাতিকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে শিখিয়েছেন।
দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে খুব বেশি নয়, মাত্র আড়াই মেয়াদে দেশে যে উন্নয়ন হয়েছে সে উন্নয়নের গল্প যদি সংক্ষেপেই বলি তাহলেও বলে শেষ করা যাবে না, যা দেশবাসী নয় বিশ্বের কাছেও বিস্ময়কর।
কৃষি ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটিয়ে কৃষিপ্রধান দেশকে শিল্পপ্রধান দেশ হিসেবে বিশ্বে পরিচিত করে তোলার কৃতিত্ব শেখ হাসিনা ও তাঁর সরকারের। ১৬ কোটি মানুষের দেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ, রফতানির দেশ।
শিল্পোয়নে দেশ এমন নজির সৃষ্টি করেছে গার্মেন্টস রফতানিতে বাংলাদেশ বিশ্বে ২য় অবস্থানে রয়েছে।
বিদ্যুত উৎপাদনে দেশের চাহিদা পুরণ করতে যেখানে সাড়ে ৩ হাজার মেগাওয়াট ছিল অতি নগন্য সেখানে বর্তমানে সাড়ে ২০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উতপাদিত হচ্ছে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে গ্রামে-গঞ্জে বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে।
যোগাযোগ ব্যবস্থার এতোই উন্নতি করেছে জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার বাংলাদেশের এমন কোনো অঞ্চল নেই পাকা রাস্তা হয়নি। গ্রামীন অবকাঠামোর উন্নয়নে দেশে উৎপাদন ও উন্নয়নের বলিষ্ঠ যে প্রবাহ সৃষ্টি হয়েছে তাতে অর্থনীতির চাকা জাতীয় জীবনে সমৃদ্ধির জোয়ার এনেছে।
বাংলাদেশের উন্নয়নে এবং দেশকে বিশ্ব দরবারে প্রতিষ্ঠিত করতে এ গল্পগুলো জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় আর্ন্তজাতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যে ভুমিকা রেখে চলেছে তাও উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। দেশে আভ্যন্তরীণ সন্ত্রাস দমন ও জঙ্গী নির্মূল করার পাশাপাশি বিশ্বের দেশে দেশে শান্তি রক্ষায় প্রশংসা কুড়িয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্ব শক্তির নানা টানাপোড়নের বাঁকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিও বিশ্বের মেহনতি মানুষের পক্ষে আরেকটি গল্প। সর্বোপরি, বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতির ভাগ্যোন্নয়নে জননেত্রী শেখ হাসিনার অবদান ও সংগ্রামেরই গল্প,যা বলে শেষ করা যাবে না। আর এ সব গল্প- বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পুরণ।
লেখক: সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ