যেভাবে লেখক হয়ে উঠলেন নোবেল বিজয়ী গুরনাহ
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ জুন ২০২৩, ১১:১৮:২৯ অপরাহ্ন
আমি কেবল চেয়েছি যতটা সম্ভব বিশ্বস্তভাবে লিখতে। লিখে-টিকে আবার এটা ভাবিনি যে আমি ‘মহৎ কিছু’ লিখে ফেলেছি। আমি বুঝি জগতে কিছু ব্যাপার আছে যেসব নিয়ে আমি চিন্তিত, আমি ওসব বুঝবার চেষ্টা করি, অনুসন্ধান করি।
সারওয়ার চৌধুরী
কীভাবে লেখক হয়ে উঠলেন আব্দুলরাজাক গুরনাহ? আর দশ জন যেভাবে হন সেভাবে হয়েছেন কি?
তাঁর সাফ কথা- তিনি ভার্জিনিয়া ওলফের মতো না, যিনি দশ বছর বয়সে বুঝতে পেরেছিলেন, তিনি লেখক হবেন। তিনি বললেন, একদিন আমি দেখলাম, আমি কিছু লিখেছি যেভাবে সাধারণ মানুষ কিছু লেখে সেরকম আরকি। পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা লিখতে লিখতে এমন এক জায়গায় এসে পৌঁছলাম যেখান থেকে আমি নিজেকে প্রশ্ন করলাম :
এটা কি? আমি কী করছি এসব? তখন আমি এমন এক জায়গায় পৌঁছলাম, যেখান থেকে বুঝলাম কিছু লিখা আর লেখার পার্থক্য। আমি কিছু লিখছি, আমাকেই এসবকে সুন্দর করে সাজাতে হবে। তার মানে, কিছু লিখা (সাহিত্যের) মানেই কিছু লিখা না, অধিক কিছু। আপনাকে আপনার নিজের অস্তিত্ব থেকে কিছু বলতে হচ্ছে এ লেখায়। একটা জায়গা থেকে এটা উপন্যাস হয়ে ওঠার দিকে গেল। ব্যাপারটা এভাবেই আসে বোধ হয়। লিখতে লিখতে আপনি নিজেই দেখবেন এটা ইমপ্রুভ করতে হচ্ছে, করলেন। পরে দেখলেন প্রকাশক খুঁজে এটা প্রকাশের তাগাদা অনুভব করছেন.. এই তো এভাবে লেখক হয়ে গেলাম।
গুরনাহ আরও বললেন,
আমি কেবল চেয়েছি যতটা সম্ভব বিশ্বস্তভাবে লিখতে। লিখে-টিকে আবার এটা ভাবিনি যে আমি ‘মহৎ কিছু’ লিখে ফেলেছি। আমি বুঝি জগতে কিছু ব্যাপার আছে যেসব নিয়ে আমি চিন্তিত, আমি ওসব বুঝবার চেষ্টা করি, অনুসন্ধান করি।
‘বিশ্ব সাহিত্য’ ক্যাটাগরিকে বিশ্বাস করার মতো সত্য কিছু মনে করেন না গুরনাহ। প্রথমত, আমি বুঝতে চাই, বিশ্ব সাহিত্য বলতে আমরা কী বুঝি? ইংরেজি সাহিত্য? বা ফরাসি বা জার্মান সাহিত্য? প্রাচীন পারস্য বা চীনা সাহিত্য? নাকি অন্য কোনো প্রাচীন সাহিত্য? অথবা যেকোনো সাহিত্য মানে বিশ্ব সাহিত্য? সব মিলিয়ে সাহিত্য কতটুকু গুরুত্ববহ? হ্যাঁ, এদিক থেকে সবার জন্যে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, মানুষ সাহিত্য তৈরি করে, ভোগ করে, সাহিত্য থেকে শিখে।
বিবিসি-র রস এ্যাটকিন্সকে আবদুলরাজাক গুরনাহ বললেন, “ঠিক মধ্যাহ্নভোজের আগে আমি তখন চা বানাচ্ছিলাম। সেই সময় আমার ফোন রিং দিলো। আমি ভেবেছিলাম কোনো বিক্রয়কর্মী ফোন করেছে হয়ত। ফোন ধরার পর অপর পাশে থাকা ব্যক্তি বলেন, ‘হ্যালো আপনি সাহিত্যে নোবেল পেয়েছেন’। আমি বললাম, ‘দয়া করে তুমি, দূর হও। আমাকে একা থাকতে দাও।”
তাঁর হুবহু জবাবটা-
“Come on, get out of here! Leave me alone.”
ইংরেজি ভাষার কায়দাতে ‘কাম অন’ নানা অর্থে ব্যবহার হয়। কখনো অনুনয় করে কিছু বলতে ‘কাম অন’ ব্যবহার হয়, মানে কাম-অন অর্থ প্লিজ, (PLEASE—used in cajoling or pleading) গুরনাহ বিরক্তি বোধ থেকে অনুনয় করে বলছিলেন তাঁকে একা থাকতে দিতে।
পরে যিনি ফোন করেছিলেন তিনি গুরনাহকে বুঝাতে সক্ষম হন সত্যি সত্যি তিনি এবছর সাহিত্যে নোবেল পেয়েছেন।
(ফেবিনে রথ, মারা হলজেনথাল এবং লিসা জিনজেলের নেয়া সাক্ষাৎকার থেকে অংশ বিশেষ নেওয়া, ফ্রাংকফুর্ট, ২১ জানুয়ারি, ২০১৬)
সারওয়ার চৌধুরী : নির্বাহী সম্পাদক, অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর