শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার আগে ৮০ শতাংশ শিক্ষক কর্মচারীকে টিকা দিতে হবে : জাতীয় পরামর্শক কমিটি
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২১, ২:৪৮:৪২ অপরাহ্ন
অনুপম সংবাদদাতা : সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার আগে ৮০ শতাংশ শিক্ষক ও কর্মচারীকে কোভিড-১৯ টিকা দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি।
করোনা মহামারী শুরু হওয়ার পর দেড় বছর বন্ধ থাকার পর আগামী ১১ সেপ্টেম্বর থেকে সারা দেশে স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সংক্রমণ পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রণে না আসায় স্বাস্থ্যবিধির বেশকয়েকটি ধারা উল্লেখ করে সরকারকে তা বিবেচনার অনুরোধ জানিয়েছে জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি।
গত ২ সেপ্টেম্বর জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির ভার্চুয়াল সভায় এসব সিদ্ধান্ত এসেছে বলে জানান কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লাহ।
পরামর্শক কমিটি বলছে, স্কুল এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে কমপক্ষে ৮০ শতাংশ শিক্ষক এবং কর্মচারীদের কোভিড-১৯ এর টিকা নেওয়া থাকতে হবে। তারা দ্বিতীয় ডোজের ১৪ দিন পার হবার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যোগ দিতে পারবেন। তবে ক্ষেত্রবিশেষে প্রথম ডোজের ১৪ দিন পরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যোগদানের অনুমতি প্রদান করা যেতে পারে।
কমিটি আরও বলেছে, উচ্চতর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ১৮ বছরের অধিক বয়সী শিক্ষার্থীদের দ্রুত টিকা নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মাস্ক পড়া নিশ্চিত করতে পারবে না, সেসব প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এছাড়া কেন্দ্রীয়ভাবে সব শিক্ষার্থীর জন্য উপযুক্ত মানসম্পন্ন এবং সঠিক মাপের মাস্কের ব্যবস্থা ও বিতরণ করা, হাত পরিষ্কার করতে জীবাণুমুক্তকরণ স্টেশন স্থাপন করতে হবে।
পরামর্শক কমিটি বলছে, প্রথমদিকে স্বল্প সময়ের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখতে হবে যেন খাবার গ্রহণের জন্য শিক্ষার্থীদের মাস্ক খোলার প্রয়োজন না হয়।
পরামর্শক কমিটির সুপারিশে বলা হয়েছে, শ্রেণিকক্ষে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সমাগম নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য নির্দিষ্ট কোন ক্লাসটি সপ্তাহের কোনদিন হবে তা বিভক্ত করে দেওয়া যেতে পারে।
যেমন, প্রথমদিকে পরীক্ষার্থীদের ক্লাস প্রতিদিন খোলা রাখা ছাড়া বাকি সব ক্লাস সপ্তাহের এক বা দুই দিন খোলা রাখা যেতে পারে। এতে করে একটি নির্দিষ্ট দিনে যেই ক্লাসটি খোলা থাকবে তার শিক্ষার্থীরা অন্যান্য খালি শ্রেণিকক্ষগুলো ব্যবহার করে তাতে নির্দিষ্ট দূরত্ব মেনে বসতে পারবে। সকালের সমাবেশ বন্ধ রাখতে হবে। এই ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরামর্শ অনুযায়ী যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক একটি স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) প্রস্তুত করা দরকার বলে মনে করেন পরামর্শক কমিটির সদস্যরা।
এছাড়া স্কুল বন্ধ থাকার কারণে শিক্ষার্থীরা যে সকল ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে এবং তাদের যে মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়েছে তা কমানোর যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছে পরামর্শক কমিটি।
যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আবাসিক সুবিধা রয়েছে, সেসব প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি গাইডলাইন প্রণয়ন করেছে জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি।
সেখানে বলা হয়েছে :
# ক্যাফেটারিয়া, ডাইনিং, স্পোর্টস রুমসহ যেসব স্থানে শিক্ষার্থী সমাবেশ হয়, সেগুলো বন্ধ রাখতে হবে। রান্নাঘর থেকে শিক্ষার্থীদের কক্ষে খাবার সরবরাহের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
# একাধিক শিক্ষার্থী একই বিছানা ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকবে
# মাদ্রাসায় একসঙ্গে নামাজ, সমাবেশ ইত্যাদির ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট নির্দেশনা মেনে চলা।
কারিগরি পরামর্শক কমিটি বলেছে,
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুনরায় খুলে দেওয়ার আগে করনীয় এবং বর্জনীয় কাজ সম্পর্কে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিবাবকসহ প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য কর্মচারীদের একটি ওরিয়েন্টেশনের মাধ্যমে সুস্পষ্ট ধারণা দিতে হবে।
এই ওরিয়েন্টেশন সীমিত উপস্থিতি ও নির্দিষ্ট দুরত্ব মেনে স্বশরীরে আয়োজন করা যেতে পারে তবে প্রয়োাজনে অনলাইন সেশন অনুষ্ঠিত হতে পারে।
যেসব শিক্ষার্থীদের কোভিড-১৯ এর লক্ষণ থাকবে তাদের বাড়িতে কোয়ারেন্টিন বা আইসোলেশন থাকাকালীন তাদের শুশ্রুষার জন্য জন্য নির্দেশনা এই ওরিয়েন্টেশনে থাকতে হবে।
যেসব শিক্ষার্থীদের রোগের লক্ষণ পাওয়া যাবে অথবা তাদের পরিবারের কারও এরকম লক্ষণ থাকবে অথবা কোভিড-১৯ রোগ পাওয়া যাবে তাদেরকে অনুপস্থিত গণ্য না করে ১৪ দিন বড়িতে থাকার অনুমতি দিতে হবে।
স্কুল এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং অন্যান্য কর্মচারীদের মধ্যে সংক্রমণ পর্যবেক্ষণ এবং দৈনিক রিপোর্ট করতে হবে।
নির্বাচিত কিছু স্কুল এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং অন্যান্য কর্মচারীদের নমুনা পরীক্ষা এবং সার্ভেইলেন্সের প্রোটোকল তৈরি এবং বাস্তবায়ন করতে হবে।
যেসব জেলায় ল্যাব আছে সেসব জেলার স্কুল এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এই সার্ভিল্যান্সের জন্য নির্বাচন করা যেতে পারে।
যে সকল জেলায় সংক্রমণের হার ২০ শতাংশের বেশি সেই জেলাগুলোতে আরও নিবিড় সার্ভেইলেন্স থাকা উচিত।
স্বাস্থ্যবিধি সুষ্ঠুভাবে পালনের লক্ষ্যে মনিটরিং টিম গঠন করে দৈনিক মনিটরিং করতে হবে বলে সুপারিশ করেছে কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় এই কমিটি।