শফি আহমেদ চৌধুরীর পরাজয় : চিরদিন কাহারও সমান নাহি যায়
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১:৪১:০৫ অপরাহ্ন
অনুপম প্রতিবেদক : ‘‘চিরদিন কাহারও সমান নাহি যায়
আজিকে যে রাজাধিরাজ কাল সে ভিক্ষা চায়’’- নজরুলগীতি
সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচনে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হলো গতকাল ৪ সেপ্টেম্বর। ভোটার উপস্থিতি কম হলেও শান্তিপূর্ণ একটি নির্বাচন হলো এ কারণে বলা যায় যে, কোনো ভোটকেন্দ্রে গোলযোগ হয়নি, মারামারি হয়নি।
এ নির্বাচনে শফি আহমেদ চৌধুরী পেলেন ৫ হাজার ১৩৫ ভোট। তিনি এ আসন থেকে দুই বারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য। বিগত ওই দুই নির্বাচন তিনি করেছিলেন বিএনপি মনোনীত হয়ে। এবার দল ত্যাগ করে, দল থেকে বহিস্কৃত হয়ে নির্বাচনে অংশ নেন। উল্লেখযোগ্য বিফল হলো, ১৪৯টি কেন্দ্রের একটিতেও বিজয়ী হতে পারেননি বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী শফি আহমেদ চৌধুরী। এমনকি তাঁর নিজের কেন্দ্রেও পরাজিত হয়েছেন তিনি।
কারণ যা-ই হোক, তিনি এবার বেদনাদায়ক পরাজয় পেয়েছেন। অতীতে বিজয়ী হয়েছিলেন। তখন সবার চেয়ে বেশি ভোট পেয়ে জিতেছিলেন। ২০০১ সালে তিনি ৫৫,৯৯৪ ভোট পেয়ে জিতেছিলেন, এমপি হয়েছিলেন। সে তুলনায় এবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব বেশি ভোট পেয়েছেন। তিনি ৯০ হাজার ৬৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন।
১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬ সালের ষষ্ঠ এবং ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রার্থী হিসেবে সিলেট-৩ (দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন শফি আহমেদ চৌধুরী।
শফি আহমেদ চৌধুরীর পরাজয়ের কারণ খুঁজলে অনেক কারণ পাওয়া যাবে। কিন্তু সবচেয়ে সারগর্ভ কথা মনে হয় এই যে- চিরদিন কাহারও সমান নাহি যায়।
দল নীতি আদর্শ ঠিক থাকলে কি সকলের দিন সমান যায়? জগতের ইতিহাস দেখায়- তবুও যায় না। নীতি-আদর্শ-দল সমেত মসনদ হারানোর ইতিহাস তো আছেই অনেক। অনিবার্য কারণ, কেউই দিনগুলোকে সোনার খাঁচায় ধরে রাখতে পারে না আজীবন। ব্যাপারটা প্রাকৃতিক। মানুষ প্রকৃতির বাইরের কিছু না। মানুষকে শৈশব বাল্য কৈশোর যৌবন বার্ধক্য পার হতে হয় প্রাকৃতিক হিসাবের কারণেই।
যদি মানুষ দল নীতি আদর্শ ধরে থেকে তার বদলে যাওয়া ঠেকাতে পারতো, তাহলে মানুষ নিজের ভাগ্যের নিয়ন্ত্রক হতে পারতো। সে সেল্ফ-ডিটারমাইনিং হতে পারতো। মানুষের দ্বারা তা সম্ভব না। কেন সম্ভব না?
খলিল জিবরান দেখালেন- ‘‘মানুষ ভিক্ষুক সব’’। ধনীও ভিক্ষুক গরীবও ভিক্ষুক। রাজাও ভিক্ষুক প্রজাও ভিক্ষুক, প্রেসিডেন্টও ভিক্ষুক, জনগণও ভিক্ষুক, মাল্টি বিলিওনিয়ারও ভিক্ষুক পেনিলেস-কপর্দকশূন্য মানুষটিও ভিক্ষুক, বিজ্ঞানীও ভিক্ষুক অবিজ্ঞানীও ভিক্ষুক। ভিক্ষুককে ভিক্ষা দেন যিনি, তিনিও ভিক্ষুক। মানুষ নামের প্রাণীগুলোর জীবন জুড়ে আছে কেবল এটা চাই ওটা চাই-অভাব আর অভাব। অভাবী কোনো সত্তা সেল্ফ-ডিটারমাইনিং হওয়া সম্ভব না। এই ব্যাপারটা প্লেটোর চাইতেও অধিক শক্তভাবে বয়ান করেছেন হেগেল ‘সায়েন্স অব লজিক’-এ।
ভিক্ষুক মানুষ, মানে মানুষ জাত-মানবজাতি ভিক্ষুক। বহু কারণে মানুষ অসহায় হয়। এই মানুষের চিরদিন কাহারো সমান নাহি যায়।