দ্বিতীয় ম্যাচেও বাংলাদেশ জয় পেলো
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১০:৩৩:১১ অপরাহ্ন
অনুপম স্পোর্টস ডেস্ক : ৫ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে নিউজিল্যান্ডকে ৪ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ।
শেষ ওভারের সমীকরণ দাঁড়ালো জিততে হলে ২০ রান দরকার নিউজিল্যান্ডের। মোস্তাফিজুর রহমানের করা প্রথম ৪ বল থেকে ৭ রানের বেশি তুলতে পারেনি নিউজিল্যান্ড। ফলে আরেকটা টি-টোয়েন্টি জয়ের সুবাস পাচ্ছে তখন মাহমুদউল্লাহর বাংলাদেশ। ওই সময়েই বড় এক ভুল করে বসলেন মোস্তাফিজ। হাত ফসকে তার পঞ্চম বলটা টম লাথামের মাথার ওপর দিয়ে এমন জায়গায় গিয়ে পড়ল উইকেটরক্ষক নুরুল হাসান সোহানও ধরতে পারলেন না, বল গড়িয়ে গেল সীমানায়। অর্থাৎ নো বলে পাঁচ রান পেয়ে গেল নিউজিল্যান্ড। ২ বলে কিউইদের তখন ৮ রান দরকার। টি-টোয়েন্টিতে যেটা খুবই সম্ভব। শেষ পর্যন্ত অবশ্য কিউইদের হিসেব মিলাতে দেননি মোস্তাফিজ। দারুণ দুই ডেলিভারিতে তিন রানের বেশি নিতে দেননি। যাতে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচে শেষ পর্যন্ত ৪ রানের জয় পেয়েছে বাংলাদেশ।
৪ রানের এই জয়ে পাঁচ ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজে ২-০তে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ। সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৭ উইকেটে জিতেছিল মাহমুদউল্লাহর দল। অর্থাৎ পরবর্তি তিন ম্যাচের একটি জিতলেই এই সিরিজও জিতবে বাংলাদেশ। সেক্ষেত্রে জিম্বুবয়ে, অস্ট্রেলিয়ার পর টানা তৃতীয় সিরিজ জেতা হয়ে যাবে মাহমুদউল্লাহর বাংলাদেশের।
শুক্রবার (৩ সেপ্টেম্বর) মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ১৪১ রানের জবাব দিতে নেমে আজও শুরুতে বিপদে পড়েছে নিউজিল্যান্ড। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে সাকিব আল হাসানকে এক ছক্কা হাঁকিয়ে পরের বলেই বোল্ড রাচিন রবীন্দ্র (৯ বলে ১০)। এরপর দুই রান উঠতেই ফিরলেন অপর ওপেনার টম ব্যান্ডেলও (৬)। কিন্তু শুরুর ধাক্কা কাটিয়ে নিউজিল্যান্ডকে দারুণভাবে টানছিলেন তিনে নামা অধিনায়ক টম লাথাম।
এই ম্যাচের উইকেটকে আগের ম্যাচের মতো অতোটা দূরহ মনে হয়নি। তবে অন্যপ্রান্ত থেকে ইয়ং, কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম, হেনরি নিকোলাসদের নিয়মিত বিরতিতে তুলে নিয়ে নিউজিল্যান্ডকে ঠিকই চাপে রেখেছিল বাংলাদেশ। এই চাপের মধ্যে বুক চিতিয়ে লড়লেন ল্যাথাম। দলকে জেতাতে পারেননি অবশ্য, তবে লাথামের এই লড়াই নিশ্চয় অনুপ্রাণিত করবে নিউজিল্যান্ডকে। উইকেট ধরে রেখেছেন, আবার রানের চাকাও সচল রেখেছিলেন।
তৃতীয় উইকেটে উইল ইয়ংয়ের সাঙ্গে ৪৩ রানের জুটি গড়ে প্রাথমিক ধাক্কাটা কাটিয়ে উঠেছিলেন লাথাম। তারপর প্রত্যাশিত সঙ্গ পাননি কারও কাছ থেকেই, কিন্তু নিজে ঠিকই দলকে শেষ পর্যন্ত জয়ের পথে রেখেছিলেন। শেষ ওভারে মোস্তাফিজুর রহমানের নো বল নাটকের পর মনে হচ্ছিল লাথামের বীরত্বে হয়তো ম্যাচ জিতছে নিউজিল্যান্ড। শেষ পর্যন্ত লাগাম টেনে ধরেছেন সেই মোস্তাফিজই।
শেষ পর্যন্ত ২০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ১৩৭ রানে থেমেছে নিউজিল্যান্ড। লাথাম অপরাজিত ছিলেন ৬৫ রানে। ৪৯ বলে ৬টি চার ১টি ছয়ের সাহায্যে এই ইনিংস খেলে লাথাম দেখিয়ে দিয়েছেন মিরপুরের উইকেটে রান করা সম্ভব। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২২ রান করেছেন ইয়ং।
বাংলাদেশের পক্ষে চার ওভারে ১২ রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়েছেন শেখ মেহেদি হাসান। চার ওভারে ২৯ রান খরচায় দুই উইকেট পেয়েছেন সাকিব আল হাসান। অন্য উইকেটটি নাসুম আহমের।
এর আগে দুই ওপেনার লিটন কুমার দাস, নাইম শেখ ও অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের কার্যকরী তিনটি ইনিংসের ওপর ভর করে ১৪১ রানের সংগ্রহ গড়ে বাংলাদেশ। টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং করতে নেমে শুরুটা দারুণ হয়েছে বাংলাদেশের। গত ম্যাচে ৯ রানের মধ্যে ফেরা দুই ওপেনার আজ প্রথম উইকেটে তোলেন ৫৯ রান। গত অস্ট্রেলিয়া এবং চলতি নিউজিল্যন্ড সিরিজ মিলিয়ে এটাই বাংলাদেশের সেরা ওপেনিং জুটি। কিন্তু এই জুটি ভাঙতেই যেন পথ হারিয়ে বসল বাংলাদেশ!
দশম ওভারের তৃতীয় বলে রাচিন রবীন্দ্রকে টেনে খেলতে গিয়ে বোল্ড লিটন দাস। ফেরার আগে তিনটি চার এবং একটি ছক্কায় ২৯ বলে ৩৩ রান করেছেন। বাংলাদেশের ইনিংসে ছক্কা এই একটিই, সিরিজের প্রথম ছক্কাও এটি। লিটন ফেরার পর তিনে উইকেটে আসেন মুশফিকুর রহিম। উইকেটে বাঁহাতি নাইম শেখ ছিলেন বলেই হয়তো বাহাতি সাকিব আল হাসানের জায়গায় তিনে ডানহাতি মুশফিকুর রহিমকে পাঠানো হয়েছিল! কিন্তু এই টনিক টিকেনি এক বলও। রবীন্দ্রর পরের বলেই স্ট্যাম্পিং মুশফিক। বিনা উইকেটে ৫৯ থেকে অল্প সময়ের মধ্যেই দুই উইকেটে ৫৯ হয়ে পড়ে বাংলাদেশ।
এরপর সাকিব চারে নেমে দারুণ দুটি বাউন্ডারি মারলেও উইকেটে বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি। কোল ম্যাকনকিকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ধরা পড়েছেন ৭ বলে ১২ রান করে। এর কিছুক্ষণ পর জোড়া ধাক্কা খেয়েছে বাংলাদেশ।
দারুণ খেলতে থাকা নাইম রবীন্দ্রর বলে হাঁকাতে গিয়ে ধরা পড়েন ব্যক্তিগত ৩৯ রানের মাথায়। ৩টি চারের সাহায্যে ৩৯ বলে এই রান করেন তরুণ ওপেনার। আফিফ হোসেন ধ্রুব ৩ রান করে ফিরেছেন এর তিন বল পর। এরপর অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর ব্যাটে এগিয়েছে বাংলাদেশ। নুরুল হাসান সোহানকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশকে একশ চল্লিশের ওপারে নিয়েছেন রিয়াদ।
শেষ পর্যন্ত ২০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৪১ রানে থেমেছে বাংলাদেশ। মাহমুদউল্লাহ ৩২ বলে ৫টি চারের সাহায্যে অপরাজিত ছিলেন ৩৭ রানে। নুরুল ৯ বলে করেন ১৩ রান। নিউজিল্যান্ডের হয়ে রাচিন রবীন্দ্র নিলেন ২২ রানে তিন উইকেট।