প্রবাসে বৈধ অভিবাসন: বয়ে আনে সম্মান ও শান্তির বারতা
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ০১ সেপ্টেম্বর ২০২১, ৪:৩৩:০৮ অপরাহ্ন
প্রবাসে বৈধ অভিবাসন: বয়ে আনে সম্মান ও শান্তির বারতা
আহমাদুল কবির
নিজ দেশে নয় অন্যদেশে গিয়ে অবস্থান করায় অভিবাসন। প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে কর্মী ক্যাটাগরিতে সব থেকে বেশি অভিবাসন হয়ে থাকে। সুন্দর ভবিষ্যতের প্রত্যাশা এবং পরিবারের আর্থিক স্বচ্ছলতা আনয়ন করে থাকে। লক্ষ্য থাকে বাড়িতে থাকা সদস্যদের সুখে রাখা। তাই নিজে অসুখী থাকলেও দেশে থাকা প্রিয়জনদের বুঝতে দেয় না, কাজ আর কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকে। মাঝে মাঝে আপনজনদের কথা মনে হলে ভিতরটা হাহাকার করে ওঠে কিন্তু অবৈধ হবার কারণে অনেকের বছরে বা দুবছরে দেশে যাবার সুযোগ হয় না।
বৈধদের নিয়োগ চুক্তি মোতাবেক বছরে একবার দেশে যাবার সুযোগ আছে। এ সুযোগ কেউ গ্রহণ করে কেউ করে না।
প্রবাসে একজন ব্যাক্তির সব থেকে জরুরী হলো সচেতনভাবে থাকা। কেউ কোন কিছু বললে সেগুলো যাচাই বা চিন্তা করে দেখা নইলে প্রতারণা, প্রতারণা থেকে দ্বন্দ্ব সংঘাত এমন কি হত্যার ঘটনাও ঘটে। দেখা গেছে যারা ভিসায় লেখা নিয়োগকর্তার অধীনেই নির্দিষ্ট স্থানে কাজ করে তারা ভালো থাকে। অপরদিক যারা প্রলুব্ধ হয় , নানান চটকদার কথা শুনে লোভে পড়ে বা অন্যের দেখাদেখি নিজেও লোভ করে শেষে তাদের পরিণাম ভালো হয় না কেননা যে দেশে বসবাস করে সে দেশের আইন কানুনের বাইরে গিয়ে কখনোই ভালো থাকা যায় না। পরিবেশ পরিস্থিতি বুঝা এবং নিয়োগকর্তার অধীনেই থাকা হলো নিরাপদ এবং এটাই সুরক্ষা এরফলে দেশ থেকে প্রেরণকারী রিক্রুটিং এজেন্সি এবং দূতাবাস সহজেই দ্রুত সহযোগিতা করতে পারে। কেননা আইন অনুযায়ী নিয়োগকর্তা কর্মীর কাজ, বেতন, আবাসন , বীমা , চিকিৎসা, ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তি, নিরাপত্তা এবং চুক্তি শেষে দেশে ফেরত প্রেরণ করা, এমনকি মৃত্যু হলে লাশ দেশে প্রেরণ এর দায় দায়িত্ব পুরাটাই নিয়োগকর্তা এবং রিক্রুটিং এজেন্সির। এসবের কোন কিছু ন পেলে প্রথমত নিকটস্থ লেবার অফিসে অভিযোগ করতে হয় এবং অভিযোগের কপি দূতাবাসে দিতে হয় বা সরাসরি দূতাবাসেও অভিযোগ করতে হয় যেন দূতাবাস সে সম্পর্কে মালয়েশিয়া সরকারকে অবহিত করতে পারে এবং কোন আইনি কাগজ পত্রের দরকার হলে দ্রুত দিতে পারে, নিয়োগ কর্তার সাথে দেনদরবার করে সমস্যার সমাধান করে। ইদানিং মালয়েশিয়া সরকার ওয়ার্ক ফর ওয়ার্কার নামে একটি মোবাইল অ্যাপ চালু করেছে যার মাধ্যমে বিদেশি কর্মী অভিযোগ করতে পারছে। তাছাড়াও ইমেইল করে , ফোন বা চিটি দিয়েও বা অন্য লোকের মারফত দিয়েও দূতাবাসকে অবহিত করা যায়। অনেক সময় দেশে থাকা কর্মীর পরিবার এবং দেশ থেকে প্রেরণকারী রিক্রুটিং এজেন্সি দূতাবাসকে অবহিত করে সাহায্য নিশ্চিত করে। অর্থাৎ যে ভিসা নিয়ে বিদেশে গেছেন সে ভিসার শর্ত মেনে চলা অন্যতম বড় রক্ষা কবচ। কিন্তু এই একটি বিষয় পরিপালন না করার ফলে জীবনে নেমে আসে চরম অনিশ্চয়তা। তখন কাজ, থাকা খাওয়া আর রোজগার ভালোভাবে করতে পারে না। সাম্প্রতিক করোনা মহামারী উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত যে, যেসকল কর্মীর অবস্থান নিজ নিজ কোম্পানিতে তাদের দেখভাল কোম্পানি করছে। অপরদিকে যারা ভিসা নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় কাজ করে তাদের রয়েছে চরম অনিশ্চয়তা। তখন এই অবৈধ হবার ফলে যে দেশে অবস্থান করে সে দেশ এবং নিজ দেশ ও পরিবারের জন্য বিপদের হয়ে যায় অর্থাৎ মুহূর্তের মধ্যে সুখ থেকে দুঃখে নিপতিত হয়। এজন্য দেশ থেকে প্রেরণের আগে সব কিছু ভালো করে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। তথাপি লোভ ও প্রলোভনের ফলে জীবনে বিপর্যয় নেমে আসে। দেখা গেছে যে সকল কর্মী বৈধভাবে অবস্থান করে তাদের জন্য আইনি ভাবে যত লড়াই করা যায় অবৈধ হলে সবই নষ্ট হয়ে যায়। তাই আবেগ বা লোভের বশবর্তী হয়ে ক্ষতি হবে এমন কোন সিদ্ধান্ত নিলে প্রবাস জীবন সত্যিই দুর্বিষহ হয়ে যায়।
নিজ দেশের আচার ব্যবহার জীবন যাত্রা এমন কি রাজনৈতিক পরিবেশও প্রবাসী কর্মীর জন্য ক্ষতিকর হয়। কেননা সেসব সাধারণ বৈশিষ্ট্য হিসেবে ধরে নিয়ে নিয়োগকর্তার ঠিক তদ্রুপ আচরণ করে যেন নিজ দেশের মত ক্ষতিকর কোন আচরণ করতে না পারে। সেরকম জাতির নিয়ম কানুন মেনে চলা, শৃংখলা বজায় রাখা, অন্যের বিষয়ে নাক না গলানো, মিথ্যা না বলা, প্রতারণা না করা ইত্যাদি ভালো গুণ যেমন ভালো ইমেজ দেয় তেমনি শঠতা, প্রতারণা , মিথ্যা এবং জ্বালাও পোড়াও ভাঙচুর মিছিল মিটিং জাতীয় অশান্তির বিষয়গুলো নিয়োগকর্তা এবং সে দেশের প্রশাসন কে অন্য ধরনের কৌশল নিতে দেখা যায় , ফলেদেখা গেছে একই বিষয়ে দুই দেশের কর্মীর জন্য দুরকম আচরণ করে। মালয়েশিয়ার গত সাধারণ নির্বাচনের সময় ছবি এবং ভিডিও প্রচার করে দেখানো হয়েছিল যে বাংলাদেশিরাও নির্বাচনে প্রচারণায় অংশ নিয়েছে সেখানে অন্য কোন দেশের নাগরিকদের এ রকম করতে দেকাহ্ যায় নি। এসব স্থানীয় জনগণ এবং সরকার ভালোভাবে নেয় না এবং শ্রম মার্কেট ও দ্বাপক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে দীর্ঘ মেয়াদী প্রভাব রয়েছে। তাই মালয়েশিয়ার জনগণ ও সরকারের বিষয়গুলো বিবেচনা করতে হয়। সব থেকে নিরাপদ নিয়োগকর্তার অধীনে থাকা তাহলে এসব নিয়ে ভাবতে হয় না। সুরক্ষা ও অধিকার নিশ্চিত হয়। সে দেশের আইন, রীতি নীতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতিকে কটাক্ষ করলে বা সামাজিক উৎপাত সৃষ্টি করলে বা মানুষের অসন্তোষের কারণ হলে তাকে সে দেশের জনগণ ভালোভাবে নে না এবং তাকে অবস্থান করতে দেওয়া হয় না।
অনুমান করা হয় বৈধ ও অবৈধভাবে অন্তত ৮ থেকে সাড়ে ৮ লাখের মতো বাংলাদেশি রয়েছেন মালয়েশিয়ায়। দেশটির ১৩টি প্রদেশে প্ল্যান্টেশন,কৃষি, মেনুফ্যাকচারিং, কন্সট্রাকশন, মাইনিং এবং সার্ভিস সেক্টরের বিভিন্ন সাব সেক্টরে সাধারণ কর্মীরা কাজ করেন। এছাড়াও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এক্সিকিউটিভ এবং হাই স্কিলড স্পেসিফিক ওয়ার্ক বাংলাদেশিরা দক্ষতার সঙ্গে করছেন, কুড়াচ্ছেন সম্মানও।
বিদেশে ভিসাহিন থাকা কখনোই যেমন নিরাপদ নয় তেমনি সম্মানেরও না। তাই যদি ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধি না করা হয় বা ভিসার অপব্যবহার হলে বিদেশে গ্রেফতার হতে হয়, শাস্তি হয় এবং নিজ দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বিদেশে আয় করে দেশে বাড়িতে টাকা পাঠিয়ে যেমন বলা হয় দেশের জন্য করছি, ঠিক তেমনি বিদেশের মাটিতে করা এধরনের অনিয়ম বা খারাপ কাজের প্রতিক্রিয়াও নিজ দেশের ওপরই পড়ে অর্থাৎ দেশের ক্ষতি হয়। একজন প্রবাসী সুনাম ও দুর্নাম দুটোই দেশের ওপর পড়ে। মানুষ ভালোটা কমই মনে রাখে। তাই ব্যক্তিকে সাবধান হতে হবে। আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়ে যেমন যা ইচ্ছা করা যায় না, বিদেশ ঠিক তেমনই, যা ইচ্ছা তাই করা যায় না। বিদেশ অন্য দেশের নাগরিককে অতিথি হিসেবেই দেখে। যে দেশে বসে আয় করে নিজের পরিবারের উন্নতি করা হয়, সে দেশ ও কর্মক্ষেত্রের প্রতি দায় দায়িত্ব পালন করতে হয়, না হলে প্রত্যাখ্যান করে।
প্রবাসীরা নিজের ইচ্ছায় যতটা না অবৈধ হয় তার থেকে বেশি তাদের অবৈধ পথে নিয়ে যাওয়া হয় নানান ভাবে যেমন পাচার করে আনা, ইচ্ছা করে ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধি না করে অবৈধ করা, কোম্পানি থেকে ভাগিয়ে আনা, কর্মী ভিসা নিয়ে অন্য কাজ করা, এক কোম্পানির ভিসা দিয়ে অন্য কোম্পানিতে নিযুক্ত করা ইত্যাদি। এসব প্রবাসীরা কারো না কারো উপর ভরসা করেই ঠকে। তাই
একদিকে ভুলে বা ইচ্ছায় আইন কানুন বিধি ভঙ্গ করে প্রবাসীরা বিপদে নিপতিত হয়, অপরদিকে এসব নিয়ে প্রবাসীদের অধিকার ইত্যাদির কথা বলে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রবাসীদের উস্কে দেওয়ার কথা বলে থাকে। এতে সে দেশ আরও কঠোর অবস্থানে যায়।
পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নিয়ে চলার ক্ষেত্রেও বৈধ ও অবৈধ বড় ফ্যাক্টর , যেমন চলমান করোনা মহামারীর প্রেক্ষিতে বৈধরা থাকা , খাওয়া বা কাজের সুযোগ পেলেও, অবৈধদের নিজেকেই সব করতে হচ্ছে । করোনা শুরুতে দূতাবাসের এবং কমিউনিটির বিভিন্ন সংগঠনের থেকে সহযোগিতা করার সময় লক্ষ করা গেছে যে , যারা অবৈধ তাদের কাজ নেই এবং যে এজেন্ট আছে সেও দেখে না। অনেক ক্ষেত্রে এজেন্টের সাথে যোগাযোগ করে দূতাবাস খাবারের ব্যবস্থা করেছে। আবার কাজ করার ক্ষেত্রে অবশ্যই করোনা টেস্ট করার শর্ত পূরণ করতে বৈধোদের কোন সমস্যা হয় নি । অপরদিকে অবৈধদের করোনা টেস্ট করার ক্ষেত্রেও সমস্যা পেতে হয়েছে তো কাজ করা পরে। এসব মিডিয়াসহ বিভিন্নভাবে হাইকমিশনের নজরে এলে হাইকমিশন মালয়েশিয়া সরকারের সাথে আলাপ আলোচনা করে বৈধতা প্রদানের রিক্যালাইব্রেশিন বা বৈধতা প্রদান কার্যকরণ শুরু করে, করোনা টেস্ট ও ভ্যাকসিন নিশ্চিত করেছে। একই সাথে করোনা কারণে কোন কোম্পানি বেশি লক রাখতে না পারলে বা চালাতে না পারলে অন্য কোম্পানীর নামে ভিসা করা অর্থাৎ কোম্পানি পরিবর্তন করার সুযোগ করে দিয়েছে। ফলে এখন কাজ করতে ইচ্ছুক কেউ বৈধতা নিয়ে কাজ করতে পারছে।
যেকোন প্রবাসী প্রতারিত হলে ভিকটিম হিসেবে আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার আছে মালয়েশিয়ায়। সে ক্ষেত্রে ভিকটিমকে পুলিশ রিপোর্ট করতে হয় । পুলিশ রিপোর্ট দূতাবাসে দাখিল করলে বা দূতাবাসে অভিযোগ দিলে তারপক্ষে দূতাবাস মালয়েশিয়া সরকারের সাথে এসব নিয়ে কাজ করে। অপরদিকে ভিকটমের নিজস্ব ইচ্ছায় আইনজীবী বা উকিল নিয়োগ করতে পারে। সাধারণত মালয়েশিয়ার নিয়ম অনুযায়ী উকিল মামলা অনুযায়ী ফিস নিয়ে থাকে। দূতাবাস থেকে সরকারিভাবে কোন উকিল নিযুক্ত করার সুযোগ নেই। পুলিশ ও আদালত হাইকমিশনের নিকট থেকে দোভাষী, আইন সহকারী, কাগজপত্র ও নানান ধরনের সহযোগিতা নিয়ে থাকে। তাই যে কেউ মামলা করলে বা মামলার শিকার হলে যেন হাইকমিশনে অবহিত করে এতে তারপক্ষে দূতাবাস নিয়ম অনুযায়ী কাজ করে থাকে।
কেউ গ্রেফতার হলেন কিনা বা প্রিয়জনের কোন খোঁজ খবর পাওয়া যাচ্ছে না নিশ্চয় দুশ্চিন্তা বেড়ে যায় । খোঁজ পাবার উপায় আছে। বিদেশে থাকা ভাই/ স্বামী/ ছেলে কোথায় আছে জানার উপায় বাংলাদেশ সরকারের বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসী আইন ২০১৩, অভিবাসি ব্যাবস্থাপনা বিধিমালা, বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসী ( রিক্রুটিং এজেন্ট লাইসেন্স ও আচরণ ) বিধিমালা, ২০১৯ এবং দুই দেশের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী কর্মীর রিক্রুম্নটমেন্ট, এমপ্লয়মেন্ট এবং রিপাট্রিয়েশন অর্থাৎ কাজে নিযুক্ত করা, বিদেশে খোঁজ খবর রাখা এবং দেশে ফিরে আসা পর্যন্ত যাদের দায়িত্ব তারাই বলতে পারে। তাই প্রথমত যে রিক্রুম্নটিং এজেন্সির মাধ্যমে বিদেশে গেছে সেই এজেন্সিকে আগে জানালে এজেন্সি কোম্পানি এবং দূতাবাসের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। কেননা আইন ও বিধি অনুযায়ী বিদেশে কাজের উদ্দেশ্যে কর্মী প্রেরণ, এরপর কাজ, থাকা এবং দেশে বাড়িতে ফিরে আসার ক্ষেত্রে রিক্রুটিং এজেন্সির দায়িত্ব। পাশাপাশি জেলা কর্ম সংস্থান অফিস, জনশক্তি অফিস,ওয়েজ আণার্স ওয়েলফেয়ার বোর্ড, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিকট খোঁজ করার সুযোগ আছে। দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে যে, রিক্রুটিং এজেন্সি সহযোগিতা নিয়ে থাকে এমনকি এজেন্সির প্রেরিত কোন কর্মীর বেতন, ভাতা , কাজ, ছুটি এসব নিয়ে সমস্যা হলে দূতাবাসকে জানিয়ে প্রতিকার করে থাকে। তাছাড়াও সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর মন্ত্রণালয়ের মাধ্যম দূতাবাসে পত্র লিখে প্রতিকার পাওয়া নিশ্চিত করছে । বর্তমানে ফোন, ইমেইল ব অন্যকোন মারফত তথ্য দিলেও দূতাবাস খুজেঁ বের করে। এ ক্ষেত্রে সঠিক তথ্য যেমন নাম, পাসপোর্ট নং, কোম্পানির নাম, ঠিকানা , রিক্রুটিং এজেন্সির নাম ইত্যাদি দিতে হয়।
গ্রেফতার হলে আইনত শাস্তি হয় বা ছাড়া পায়। ছাড়া পাওয়ার ক্ষেত্রে ভিসায় লেখা কোম্পানির মালিক বা প্রতিনিধি উপস্থিত হলে তদন্তকালে বা আদালতে বিচারের মাধ্যমে মালিকের নিকট বা জিম্মায় ছেড়ে দেয় । এ ক্ষেত্রে দূতাবাসের নিকট ছেড়ে দিবে না কারণ দূতাবাস ভিসা স্পনসর নয়। দূতাবাস তখন মালিক কে খুজে বের করে পুলিশ না আদালতের নিকট আনে।যেন কর্মীকে ছেড়ে দেয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে মালিককেও আদালত আর্থিক জরিমানা করে। যাদের অবৈধ অনুপ্রবেশ পাসপোর্ট ও ভিসা নাই, কোম্পানি থেকে পালিয়ে যাবার কারণে পুলিশ ও ইমিগ্রেশন রিপোর্ট করে তারা গ্রেফতার হলে শাস্তি নিশ্চিত । তখন তাদের জেল জরিমানা ও বেত্রাঘাত শাস্তি হয়। কারাভোগের পর ইমিগ্রেশনের অধীনে দিয়ে দেওয়া হয় দেশে ফেরত প্রেরণ করার জন্য। তখন ইমিগ্রেশন ক্যাম্পে রেখে দেশে ফেরত প্রেরণের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে করে ইমিগ্রেশন। অর্থাৎ ফলিতে তুলে দেওয়া অবধি ইমিগ্রেশন কাজ করে। দেশে ফেরত প্রেরণ করার ক্ষেত্রে দুটি বিষয় জরুরী একটি ট্রাভেল ডকুমেন্ট ( পাসপোর্ট বা টিপি) অপরটি ফ্লাইট টিকিট। প্রথমটির মধ্যে যদি ভ্যালিড পাসপোর্ট থাকে তাহলে দূতাবাসের সাথে কোন কাজ নাই, আর যদি পাসপোর্ট না থাকে তাহলে ব্যাক্তির আবেদনের প্রেক্ষিতে দূতাবাস ট্রাভেল পাস ইস্যু করে। ইদানিং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে নাগরিকত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েই ট্রাভেল পাশ ইস্যু করছে বলে জানা গেছে।
ফ্লাইট টিকিট আটক ব্যাক্তিকে নিজস্ব উদ্যোগে সংগ্রহ করতে হয়। এ ক্ষেত্রে ক্যাম্প থেকে ফ্লাইট তারিখ ও তথ্য জেনে নিয়ে টিকিট দিতে হয়। সরাসরি বা দূতাবাসের মধ্যমে টিকিট দেওয়া যায়। এসময় ক্যাম্পে থাকা বন্দীরা দেশে কথা বলার সুযোগ পায়।
বর্তমানে করোনা মহামারীর ফলে নানান ধরনের নিয়ম কানুন নিষেধাজ্ঞা ইত্যাদি দেওয়ায় এবং ক্যাম্পে কারো করোনা হলে সকলকে ১৪ দিন কয়ারেন্টিং থাকায় দেশে ফেরত প্রেরণ অনেক শ্লথ হয়েছে ফলে তাদের দুঃখ ভোগ বেড়েছে যেন বিনা দোষে জেল খাটছে। এ বিষয়ে বিশেষ বিমান ব্যাবস্থা করার সুযোগ কাজে লাগানো যেতে পারে। কারণ আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এদের অবশ্যই দেশে ফিরে যেতে হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দেশে ফিরত আসা একজন প্রবাসী ফোনে জানান, “নতুন ভিসা ও পাসপোর্ট হাতে পাওয়ার আগেই একদিন কুয়ালালামপুরে বাংলা মার্কেটে গেছি। সেখানে হঠাৎ পুলিশের অভিযান। সেখানে যত বাংলাদেশি তারা পেয়েছে সবাইকে আটক করে নিয়ে গেল। যাদের বৈধ কাগজ ছিল তাদের ছেড়ে দেয়া হল। আমাকে প্রথমে ডিটেনশন সেন্টারে রাখা হল। এরপর আদালত আমাকে ভিসার মেয়াদ শেষ করার পরও সেদেশে থাকার জন্য তিন মাসের কারান্ড দেয়।”
ব্রাকের অভিবাসন কর্মসূচীর প্রধান শরিফুল হাসান বলছেন, ” দেখা গেছে মালয়েশিয়া যাওয়ার সময় শ্রমিকের মালিক বা কোম্পানির সাথে কাজের চুক্তি ভঙ্গ করে বেশি বেতনের জন্য অন্য কারো সাথে কাজ নিয়েছেন। কাজ ও বেতন সম্পর্কে মিথ্যা ধারনা দেওয়া। মালয়েশিয়ায় যাওয়ার অতিরিক্ত খরচ তুলতে অধিক আয়ের আশায় আইন ভঙ্গ করে। এসবই শ্রমিকদের আটক হওয়ার মুল কারণ।”
এক প্রবাসী দেশ থেকে ফোনে জানান যে, অধিক খরচের টাকা তোলার আশায় বৈধ থেকে অবৈধ হলে আত্মীয় তাকে মাত্র একদিন থাকতে দিয়েছিল। এরপর তাকে চলে যেতে বলেন তিনি।
দালালের কাছে নতুন কাজ চাইলে তার কাছে এক লাখ টাকা দাবি করেন তিনি।
এরপর এই যুবক নিজেই একটি রুটির দোকানে কাজ খুঁজে নেন। এই পরিস্থিতিতে অবৈধ শ্রমিক হিসেবে পুলিশের হাতে আটক, শাস্তি ও সে দেশ থেকে বহিস্কার হন।
অভিবাসন বিষয়ক সাংবাদিক গাজী মেরাজ হোসেন বলেন, ‘ ইদানিং মালয়েশিয়া সরকার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার সাথে সে দেশের কর্মীদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া জোর জবরদস্তি শ্রমের এবং মিথ্যা বলে, অতিরিক্ত অর্থ নিয়ে কর্মী নিয়ে যাওয়ার ঘটনা অবহিত করার জন্য অনুরোধ করেছে। সেখানে বেতন, কাজ , আবাসন ইত্যাদি ২২ টি বিষয়ে তথ্য দেওয়া সুযোগ দিয়েছে। এ ধরনের সুযোগ কর্মীরা গ্রহণ করতে পারে। যেন নিজের অধিকার সুরক্ষিত থাকে। এসব মালয়েশিয়া সরকারের খুবই প্রশংসনীয় উদ্যোগ। ”
এটিএন বাংলার কারেন্ট এ্যাফেয়ার্স এডিটর, সিনিয়র সাংবাদিক কেরামত বিপ্লব বলেন, ‘ নিজের জানা থাকা বা সচেতনতার উপর ভালো কোন প্রতিকার নেই, বুঝতে হবে প্রবাসে নির্দিষ্ট চুক্তির অধীনে কাজ করতে হয় সেটাই তার জন্য বড় আইন। পাশপাশি সে দেশের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানিয়েও অনেক কিছু আদায় করা যায়।”
সাংবাদিক মোস্তফা ফিরোজ বলেন, ” অভিবাসন ব্যয় অবশ্যই সহনীয় পর্যায়ের হতে হবে, একটি টাকাও খরচ না হলে আরো ভালো। তবে আমি অনুরোধ করব কর্মী ভাইয়েরা যেহেতু মালয়েশিয়ায় একনাগাড়ে দশ বছর কাজ করার সুযোগ আছে, বৈধভাবে নিয়ম মেনে থেকে সে সুযোগকে কাজে লাগানো সর্বোত্তম পন্থা হবে।”
মালয়েশিয়ায় থাকা কর্মীদের সেবা নিচিত করতে একটি সুরক্ষা নেটওয়ার্কের আওতায় আনার জন্য পূর্ববর্তী হাইকমিশনার মহ. শহিদুল ইসলাম উদ্যোগ নিয়েছিলেন এবং এজন্য তিনি প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় পত্র দিয়েছিলেন। করোনাকালে নতুন হাইকমিশনার গোলাম সরোয়ার যোগ দেবার পর দূতাবাসের সেবা ক্ষেত্রে পরিবর্তন আমার চেষ্টা করছেন। গত শোক দিবসের অনুষ্ঠানে তিনি এসব নিয়ে কথা বলেছেন। একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার কোথাও তিনি ইতিপূর্বে বলেছিলেন। প্রবাসীরা থাাকিয়ে আছে করোনা দুর্যোগ কেটে যাবে এবং সব মিলিয়ে প্রবাসীদের সকল সেবা আরো ভালো ও স্মার্ট রূপ পাবে।