বঙ্গবন্ধু সবাইকে ফোন করেছিলেন-আব্দুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমেদ, শফিউল্লাহ্র সঙ্গে কথা হয় : প্রধানমন্ত্রী
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ আগস্ট ২০২১, ৮:৫৯:৫৯ অপরাহ্ন
নিজস্ব সংবাদদাতা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর ক্ষমতা দখলকারী খোন্দকার মোশ্তাক আহমেদ সেনাপ্রধান বানিয়েছিলেন বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে। কারণ, জিয়া ছিলেন মোশ্তাকের মূল শক্তি।’
গতকাল গণভবন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোকদিবস উপলক্ষে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক স্মরণ সভায় প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, মোশ্তাক জিয়ার ওপর নির্ভর করে রাষ্ট্রপতি হয়েছিল। কিন্তু সে কতোদিন থাকতে পেরেছিল? থাকতে কিন্তু পারেনি। মীরজাফরও পারেনি। কারণ, বেঈমানদের ব্যবহার করে সবাই। তাদের বিশ্বাস করে না, রাখে না। জিয়াউর রহমান সেই কাজটাই করেছিল। ….মোশ্তাক কিন্তু তিন মাসও পূর্ণ করতে পারেনি। তাকে বিদায় নিতে হয়েছিল। জেলখানা হত্যাকাণ্ডও হয় জিয়াউর রহমানের নির্দেশে। সে-ই করেছে। কারণ, সে-ই সব ক্ষমতার অধিকারী ছিল তখন।
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ১৫ আগস্ট যখন আমাদের বাসায় গুলি শুরু হয়, বঙ্গবন্ধু কিন্তু সবাইকে ফোন করেছিলেন। আব্দুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে কথা হয়। সেনাপ্রধান শফিউল্লাহ্র সঙ্গেও কথা হয়। সেনাবাহিনীরও যার যা ভূমিকা ছিল, তারা কিন্তু কাজ সঠিকভাবে করেনি। এর পেছনে রহস্যটা কী? সেটাই কথা। শেখ হাসিনা বলেন, জিয়াউর রহমান যে কোথায় যুদ্ধ করেছেন এমন ইতিহাস কোনোদিন শোনা যায়নি। আমাদের অনেক মুক্তিযোদ্ধা আহত হয়েছেন। বিভিন্ন ফিল্ডে যুদ্ধ করেছেন। কিন্তু তার সেই ধরনের কোনো ইতিহাস নেই। আমাদের চট্টগ্রামের মুক্তিযোদ্ধারা… আমাদের এমপি মোশাররফ সাহেব আছেন। তিনি সরাসরি অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছিলেন। তারা কিন্তু তার নাম দিয়েছিল “মিস্টার রিট্টিট”। ওনাদের কাছে গল্প শুনেছি, যেখানেই যুদ্ধ লাগতো তার চেয়ে অন্তত তিন মাইল দূরে থাকতো জিয়াউর রহমান। সে কখনও অস্ত্র হাতে সামনাসামনি যুদ্ধ করেনি। তাকে নেতৃত্ব দেয়া হয়েছিল কিছুদিনের জন্য।
শেখ হাসিনা বলেন, জিয়াউর রহমান দেশের স্বাধীনতা ও অস্তিত্বে কখনও বিশ্বাস করতেন না। তাকে ধরে এনে মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণাপত্র পাঠ করানো হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়ার পরও জিয়াউর রহমান পাকিস্তানি বাহিনীর সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরে কোনও সরকারই দেশের উন্নয়ন করেনি বলে জানান- প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান কিছু প্রচার পেয়েছিল। সে নাকি গণতন্ত্র দিয়েছে। যে দেশে প্রতিরাতে কারফিউ থাকে, সেটা আবার গণতন্ত্র হয় কীভাবে? ভোট চুরি থেকে সবকিছুই এই জিয়াউর রহমান শুরু করে। এমনকি সংবিধান লঙ্ঘন করাও সে শুরু করে। আমাদের সৌভাগ্য যে, হাইকোর্টের একটি রায় সামরিক আইন দিয়ে ক্ষমতা দখলকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়াউর রহমানের কবরে মারামারি করলো বিএনপি। তারা জানে না সেখানে জিয়ার কবর নেই, তার লাশ নেই। তারা তো ভালোই জানে। তাহলে এত নাটক করে কেন? খালেদা জিয়াও ভালোভাবে জানে। খালেদা জিয়া বা তারেক জিয়া কি বলতে পারবে তারা জিয়ার লাশ দেখেছে? গুলি খাওয়া লাশ তো দেখাই যায়। বা কোনও একটি ছবি কেউ দেখেছে? দেখেনি। কারণ, ওখানে কোনও লাশ ছিল না। সেখানে একটা বাক্স আনা হয়েছিল। সেই বাক্সের ফাঁক দিয়ে যারা দেখেছে তারা জানে। সেই এরশাদের মুখ থেকেই শোনা, কমব্যাট ড্রেস পরা ছিল লাশ। জিয়াউর রহমান তো তখন প্রেসিডেন্ট। সে তো কমব্যাট ড্রেস পরে না। এটা কী বিএনপি’র লোকেরা জানে না। সেখানে গিয়ে তাদের মারামারি-ধস্তাধস্তির চরিত্র তো এখনও যায়নি। ১৯৮১ সালে নির্বাসিত জীবন শেষে দেশে ফিরে আসার ঘটনা বর্ণনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ফিরে আসার পরে সেই চেনা মুখগুলো পাইনি। বনানীতে সারি সারি কবর পেলাম। তবে পেয়েছি লাখো মানুষ আর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী।