প্রত্যক্ষদর্শী সিফাতের সাক্ষ্য : পা দিয়ে মেজর সিনহার গলা চেপে ধরে মৃত্যু নিশ্চিত করেন ওসি প্রদীপ
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ আগস্ট ২০২১, ৬:২২:৩৯ অপরাহ্ন
অনুপম নিউজ ডেস্ক : প্রত্যক্ষদর্শী সাহেদুল ইসলাম সিফাত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে গতকাল সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন। তিনি মামলার ২ নম্বর সাক্ষী ও সিনহার সঙ্গী। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে সিফাত আদালতকে বলেন, সেদিন রাতে (৩১ জুলাই, ২০২০) লিয়াকত আলীর গুলিতে রাস্তায় ঢলে পড়ে কাতরাচ্ছিলেন সিনহা মো. রাশেদ খান। টেকনাফ থানার তৎকালীন ওসি প্রদীপ ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রথমে লিয়াকত আলীর সঙ্গে আড়ালে গিয়ে কথা বলেন। এরপর সিনহার কাছে গিয়ে উত্তেজিত কণ্ঠে আপত্তিকর ভাষায় গালমন্দ করেন প্রদীপ। এরপর তিনি নিজের পা দিয়ে সিনহার শরীর নড়াচড়া করে দেখেন। তখনো সিনহা জীবিত ছিলেন এবং ‘পানি, পানি’ করছিলেন। তখন সিনহার বুকে লাথি মারেন প্রদীপ এবং পা দিয়ে গলা চেপে ধরে মৃত্যু নিশ্চিত করেন। তল্লাশিচৌকির ভিতরে নিয়ে তাকেও (সিফাত) মারধর করেন প্রদীপ। ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফের মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর তল্লাশিচৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত সিনহার সঙ্গে গাড়িতে ছিলেন সিফাত। গতকাল আলোচিত এ হত্যা মামলায় দ্বিতীয় দিনের মতো সাক্ষ্য গ্রহণ করেন বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল। এর আগে আদালতে মামলার বাদী ও সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌসকে ঘটনার বিষয়ে জেরা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। সকাল সোয়া ১০টায় শুরু হওয়া দুজন সাক্ষীর (শারমিন ও সিফাত) জেরা ও সাক্ষ্য দেওয়া শেষ হয় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে। রাত পৌনে ৮টার দিকে প্রদীপসহ মামলার ১৫ আসামিকে আদালত থেকে প্রিজন ভ্যানে তুলে পুনরায় কারাগারে পাঠানো হয়। এ সময় আদালতের কাঠগড়ায় ছিলেন মামলার অন্যতম আসামি প্রদীপ কুমার দাশ, লিয়াকত আলীসহ ১৫ জন আসামি। সাক্ষ্য গ্রহণ ও জেরার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেন। জেরা শেষে প্রদীপের আইনজীবী রানা দাশগুপ্ত বলেন, হত্যাকান্ডের সঙ্গে প্রদীপ কুমার দাশ মোটেও জড়িত ছিলেন না। তিনি আদালতের কাছে সেটাই প্রমাণের চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, আদালতের প্রতি আমাদের আস্থা আছে। প্রসঙ্গত, গত বছর ৩১ জুলাই রাত সাড়ে ১০টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়ায় পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান।
ঘটনাস্থলে ওসি প্রদীপ
এ ঘটনায় ৫ আগস্ট নিহত সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেন।
আদালতের কাঠগড়ায় লুকিয়ে বসে ওসি প্রদীপের মোবাইলে কথোপকথন : আদালতের কাঠগড়ায় লুকিয়ে বসে ওসি প্রদীপের মোবাইলে কথোপকথন ভাইরাল হয়েছে। একদিকে মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার শুনানি চলছে আদালতে, অন্যদিকে কাঠগড়ায় মোবাইলে কথা বলছেন কক্সবাজারের টেকনাফ থানার বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ। সোমবার কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলার প্রথম দিনের সাক্ষ্য গ্রহণের সময় মোবাইলে কথা বলতে দেখা যায় তাকে। তার কথা বলার একটি ছবি গণমাধ্যমে পৌঁছানোর পর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বেসরকারি একটি টেলিভিশন চ্যানেল। ছবিতে দেখা যাচ্ছে আদালতের কাঠগড়ার ভিতরে হাঁটু গেড়ে বসে মোবাইলে কথা বলছেন বরখাস্ত ওসি প্রদীপ। তার কথা বলার সময় আশপাশে কয়েকজন ব্যক্তিকে দাঁড়ানো দেখা গেছে।
শামলাপুর চেকপোস্টে যখন মেজর সিনহাকে থামানো হয়, তখন তার হাতে অস্ত্র ছিল না।
জানা গেছে, বরখাস্ত ওসি প্রদীপকে কথা বলার জন্য মোবাইলটি সরবরাহ করেছিলেন সেখানেই দায়িত্বরত এক পুলিশ কনস্টেবল।
জানতে চাইলে একজন বিজ্ঞ আইনজীবী বলেন, বিচার বিভাগীয় বাতায়নে আদালতের আচরণবিধিতে বলা হয়েছে, আদালত চলাকালে মোবাইল বন্ধ রাখতে হবে। অর্থাৎ আদালতে মোবাইল ব্যবহার করা যাবে না।