৪০ বছর ধরে অপরাজেয় পাঞ্জশির উপত্যকা : তালেবান ঘিরে ফেলেছে, কে জিতবে?
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ আগস্ট ২০২১, ৩:১২:৩৪ অপরাহ্ন
অনুপম আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ৪০ বছর ধরে সেই অপরাজেয় ঐতিহাসিক পাঞ্জশির উপত্যকায় তালেবান-বিরোধী একটি গোষ্ঠী বলেছে যে, তাদের হাজার হাজার সদস্য যুদ্ধ করতে প্রস্তুত।
তবে ন্যাশনাল রেজিস্টেন্স ফ্রন্ট অব আফগানিস্তান (এনআরএফ) -এর বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ক প্রধান আলী নাজারি বলেছেন, তারা শান্তিপূর্ণ সমঝোতা চান।
তিনি আরও বলেন, ‘কিন্তু যদি তা ব্যর্থ হয় … তাহলে আমরা কোনও ধরনের আগ্রাসন মেনে নেব না।’
এদিকে, তালেবান বলছে, পাঞ্জশির উপত্যকায় এই গোষ্ঠীটির শক্তিশালী ঘাঁটি তারা ঘিরে ফেলেছে এবং বিরোধীদেরকেও ঘেরাও করা হয়েছে।
ওই গোষ্ঠীটির সদস্যরাও বলেছেন, রাজধানী কাবুলের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের দিকে এখন অগ্রসর হচ্ছে তালেবান।
তালেবানের হাতে ক্ষমতা হারানো আফগান সরকারের ভাইস প্রেসিডেন্ট আমরুল্লাহ সালেহ এখন পানশিরে রয়েছেন। তিনিও এক টুইট বার্তায় জানিয়েছেন, তালেবানরা ওই উপত্যকার প্রবেশমুখে তাদের বাহিনী জড়ো করছে।
হামলা ঠেকানোর জন্য পাঞ্জশির অঞ্চল, বিশেষ করে পাঞ্জশির উপত্যকার সুনাম রয়েছে।
১৯৭৯ সাল থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত সোভিয়েত-আফগান যুদ্ধের সময় সোভিয়েত সেনাদের হঠানো এবং ১৯৯০-এর দশকে তালেবানদের হটিয়ে দেওয়ার জন্য ওই অঞ্চল বিখ্যাত।
এখনও ওই অঞ্চলটি এনআরএফের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এই গোষ্ঠীটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন আফগান প্রতিরোধের নায়ক বলে পরিচিত দুর্দান্ত গেরিলা যোদ্ধা আহমেদ শাহ মাসুদের ছেলে আহমেদ মাসুদ।
আহমেদ শাহ মাসুদ ছিলেন একজন শক্তিশালী গেরিলা কমান্ডার, যিনি তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এরপর তিনি ১৯৯০ -এর দশকে বিদ্রোহী জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আফগান সামরিক বাহিনীর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
তালেবান নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পরও ২০০১ সালে তাকে হত্যার আগ পর্যন্ত তালেবান শাসনের বিরুদ্ধে তিনিই ছিলেন প্রধান বিরোধী কমান্ডার।
নাজারি বিবিসি রেডিও ফোর-এর টুডে প্রোগ্রামে বলেছিলেন, সারা দেশ থেকে স্থানীয় যোদ্ধারা পানশিরে জড়ো হচ্ছেন। তারা এরইমধ্যে স্থানীয়ভাবে প্রশিক্ষণ নিয়েছে এমন যোদ্ধাদের সাথে যোগ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, এই গোষ্ঠীর আওতায় ‘প্রতিরোধের জন্য হাজার হাজার বাহিনী প্রস্তুত রয়েছে’।
এই মুখপাত্র বলেন, ‘যাই হোক না কেন, কোনও ধরনের যুদ্ধে যাওয়ার আগে আমরা শান্তি এবং সমঝোতার চেষ্টা করবো।’
এনআরএফ- এর চূড়ান্ত লক্ষ্য হল দেশে বিকেন্দ্রীকৃত একটি শাসন প্রতিষ্ঠা।
তিনি বলেন, ‘এনআরএফ বিশ্বাস করে যে, দীর্ঘস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের আফগানিস্তানের অন্তর্নিহিত সমস্যাগুলো সামনে আনতে হবে।’
‘আফগানিস্তান এমন একটি দেশ যেটি জাতিগত সংখ্যালঘুদের নিয়ে গঠিত এবং সেখানে কেউই সংখ্যাগরিষ্ঠ নয়। এটি একটি বহু সংস্কৃতির রাষ্ট্র, তাই এখানে ক্ষমতার বণ্টন দরকার। এই বণ্টনটা এমনভাবে হতে হবে যাতে সবাই নিজেদের ক্ষমতায় দেখতে পায়।’
তিনি বলেন, রাজনীতিতে কোনও একটি দলের আধিপত্য থাকলে, ‘অন্তর্কোন্দল চলতে থাকে এবং বর্তমান সংঘাতও শেষ হবে না।’
নাজারি আরও বলেন, ‘আমরা শান্তি পছন্দ করি, আমরা শান্তি এবং আলোচনাকেই অগ্রাধিকার দিই- আমরা যদি দেখি যে অন্যপক্ষ এতে আন্তরিক নয় এবং তারা পুরো দেশের ওপর নিজেদের নিয়ন্ত্রণ চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে- তাহলে আমরা কোনও ধরনের আগ্রাসন মেনে নেব না।’
‘আর আমরা এটা প্রমাণ করেছি, গত ৪০ বছরের রেকর্ড অনুযায়ী আমাদের অঞ্চল বিশেষ করে পাঞ্জশির উপত্যকা এলাকা কেউ দখল করতে পারেনি।
‘রেড আর্মি, তাদের সর্বশক্তি দিয়েও, আমাদের পরাজিত করতে পারেনি… আমার মনে হয় না এখন আফগানিস্তানে কোন বাহিনী রেড আর্মির মতো শক্তিশালী। আর ২৫ বছর আগেও তালেবান… এই উপত্যকা দখলের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে, তারা চরম পরাজয়ের মুখে পড়েছিল।’