নির্মূল কমিটির ওয়েবিনার : তালেবানদের অবৈধ ক্ষমতাদখলকে স্বীকৃতি দেয়া উচিত হবে না
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ২২ আগস্ট ২০২১, ১০:৪১:০৩ অপরাহ্ন
সংবাদদাতা : ‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’র অস্ট্রেলিয়া শাখার উদ্যোগে ২১ আগস্ট বিকেল ৩টায় ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ১৭তম বার্ষিকী উপলক্ষে ‘বাংলাদেশ এবং দক্ষিণ এশিয়ায় মৌলবাদের উখান এবং আমাদের করণীয়’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক ওয়েবিনারের আয়োজন করা হয়।
নির্মূল কমিটির অস্ট্রেলিয়া শাখার সভাপতি ডাঃ একরাম চৌধুরী এতে সভাপতিত্ব করেন। অস্ট্রেলিয়া শাখার সাধারণ সম্পাদক জুয়েল তালুকদারের সঞ্চালনায় প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় সহসভাপতি শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আবদুর রশীদ (অবঃ), বীরমুক্তিযোদ্ধা কামরুল আহসান খান ও একুশে পদকপ্রাপ্ত আলোকচিত্র শিল্পী পাভেল রহমান।
অন্যান্যের মধ্যে সভায় বক্তব্য রাখেন নির্মূল কমিটির সর্ব ইউরোপীয় শাখার সভাপতি সমাজকর্মী তরুণ কান্তি চৌধুরী, অস্ট্রেলিয়ার বিশিষ্ট পরিবেশবিদ পল অবোহভ, নির্মূল কমিটির সর্বইউরোপীয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সমাজকর্মী আনসার আহমদ উল্লাহ, তুরস্ক শাখার সাধারণ সম্পাদক লেখক চলচ্চিত্রনির্মাতা শাকিল রেজা ইফতি, জাগরণের হিন্দ বিভাগের সম্পাদক তাপস দাস, নির্মূল কমিটির অস্ট্রেলিয়া শাখার সাংস্কৃতিক সম্পাদক আশফাক কে রহমান, অস্ট্রেলিয়া আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হারুনূর রশিদ, নির্মূল কমিটি অস্ট্রেলিয়া শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তানভীর কেনেডি, নির্মূল কমিটি সহসভাপতি হাসান ফারুক শিমুল রবিন ও সাজ্জাদ সিদ্দিকী, অস্ট্রেলিয়া আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান রিতু, অস্ট্রেলিয়া আওয়ামী লীগের সভাপতি ডা. সামস রহমান, বঙ্গবন্ধু পরিষদ অস্ট্রেলিয়া শাখার সভাপতি ডঃ রতন কুন্ডু, চট্টগ্রাম ইসলামিয়া কলেজ প্রাক্তন ছাত্রনেতা ভিপি ইফতেখার উদ্দিন ইফতু, মেলবোর্ন বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শুভজিৎ রায় ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ পরিবেশ উপকমিটির সদস্য মির্জা খালেদ আল আব্বাস।
২১ আগস্টের নৃশংস গ্রেনেড হামলায় নিহত ও আহতদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও সহমর্মিতা জ্ঞাপন করে প্রধান বক্তা, নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নৃশংস হত্যাকাণ্ড এবং ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা ও হত্যাকাণ্ড একই রাজনীতির অন্তর্গত। এদেশের পাকিস্তানপন্থী মৌলবাদী ঘাতক এবং তাদের সহযোগীরা ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু এবং তার প্রধান সহযোগী মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী চার জাতীয় নেতাকে হত্যা করে ’৭১-এর শোচনীয় পরাজয়ের প্রতিশোধ নেয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশে পাকিস্তানের মতো ইসলামী হুকুমত প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল। ২১ আগস্টের গ্রেনেড বোমা হামলার জন্য দায়ী পাকিস্তানপ্রেমী বিএনপি-জামায়াত-ফ্রিডম পার্টি গং হামলার আগে বলেছিল শেখ হাসিনাকে বাঁচিয়ে রেখে বাংলাদেশে তাদের ইসলাম কায়েম করা যাবে না’।
নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আবদুর রশীদ (অবঃ) বলেন, ‘২১শে আগস্ট ২০২১ একটি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড, একটা সন্ত্রাস বিরোধী সমবেশে সন্ত্রাসী হামলা। আমরা এও দেখলাম প্রশাসনের সহায়তায় কিভাবে সন্ত্রাসীরা পলায়ন করে। ১৯৭৫-এ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারী শীর্ষ নেতাদের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ধারাবাহিকতায় ঘটেছে ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড-বোমা হামলা ও হত্যাকাণ্ড।’
নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় সহসভাপতি শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী বলেন, ‘মৌলবাদীদের উত্থান ও কার্যক্রম রোধে করণীয় মৌলবাদের উৎস নির্মূল করা। ওদের অর্থ-সম্পদের সরবরাহ বন্ধ করা। একমুখী শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা। শিক্ষাক্ষেত্রে কোন ধরনের বৈষম্য থাকবে না এবং কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারের আওতামুক্ত থাকবে না। জামায়াত ইসলামী পরিচালিত সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে হবে অথবা ওদের চালু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বোর্ডের অধীনে আনতে হবে।’
বীর মুক্তিযোদ্ধা কামরুল আহসান খান বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের খতম করতে পারলে বাংলাদেশকে বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বে মিনি পাকিস্তান বানাতে আর কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকবে না।’
বিশেষ অতিথির ভাষণে অস্ট্রেলিয়ার পরিবেশবিদ পল অবোহভ বলেন, ‘২১ আগস্ট শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্য ছিল একটি উগ্র কর্তত্ববাদী শাসন প্রতিষ্ঠা। আমরা আনন্দিত যে তিনি আহত হয়েও প্রাণে বেঁচেছেন। শেখ হাসিনা এখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। তিনি ও তার সরকার দেশে বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রমের পাশাপাশি সমগ্র বিশ্বে পরিবেশ উন্নয়নের জন্য যে সব উদ্যোগ নিয়েছেন তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।’
একুশে পদকপ্রাপ্ত আলোকচিত্র শিল্পী পাভেল রহমান বলেন, ‘রমনার বটমূলে উদীচীর বর্ষবরণ অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে এ যাবত কাল পযন্ত বাংলাদেশে সংগঠিত সকল জঙ্গি হামলাগুলো শুধুমাত্র অসাম্প্রদায়িক ও ধর্ম নিরপেক্ষ চেতনায় বিশ্বাসী রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনগুলোর উপর করা হয়েছে, যেখানে অসংখ্য মানুষের মৃত্যু ঘটেছে এবং হাজার হাজার মানুষ আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেছে।’
নির্মূল কমিটির সর্ব ইউরোপীয় শাখার সভাপতি সমাজকর্মী তরুণ কান্তি চৌধুরী বলেন, ‘ধর্মকে রাজনীতিকরণের ফলে পাকিস্তানে জঙ্গি মৌলবাদের উৎপত্তি। পাকিস্তান আফগানিস্তানে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাতের জন্য মুজাহিদদের প্রশিক্ষণ দিয়েছিল।’
নির্মূল কমিটির সর্বইউরোপীয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সমাজকর্মী আনসার আহমদ উল্লাহ বলেন, ‘২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশ ডেকেছিল সিলেটের ৭ অগাস্ট হামলার প্রতিবাদে। হামলাকারিরা গ্রেনেড হামলা চালিয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী, তখনকার বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের পুরো নেতৃত্বকে নির্মূল করার লক্ষেই হামলা চালায়। হামলার নেতৃত্বে ছিল আফগান ফেরত মুফতি হান্নানের দল হরকাতুল জিহাদ।’
তুরস্ক শাখার সাধারণ সম্পাদক লেখক চলচ্চিত্রনির্মাতা শাকিল রেজা ইফতি বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেভাবে মৌলবাদ প্রচার করা হচ্ছে, তাতে করে ক্যান্সারের মতো এই কুশক্তির বিস্তার ঘটছে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির অথবা চেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটে এমন প্রচারের অভাব রয়েছে।’
নির্মূল কমিটি অস্ট্রেলিয়া শাখার সভাপতি ডাঃ একরাম চৌধুরী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগকে সম্পূর্ণ নেতৃত্বশূন্য ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস করতেই ঘাতকরা চালায় এই দানবীয় হত্যাযজ্ঞ। জাতির সামনে আবারও স্পষ্ট হয়ে ওঠে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির একাত্তরের পরাজয়ের প্রতিশোধস্পৃহা। বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় থাকার সময়ই খোদ রাজধানীতে প্রকাশ্যে চালানো হয়েছিল যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহৃত মারণাস্ত্র গ্রেনেড দিয়ে এই ভয়াল ও বীভৎস হামলা। ওই সরকারের মন্ত্রী থেকে শুরু করে অনেকেই যে এই নারকীয় হামলার সঙ্গে জড়িত ছিল, তা তদন্তের মাধ্যমে জাতির সামনে আজ স্পষ্ট হয়ে গেছে।’